বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি কি যৌক্তিক?

প্রকাশিত: ০৩ এপ্রিল, ২০২৪ ১১:৪৭:৩৯

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি কি যৌক্তিক?

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বুয়েটের সব ব্যাচের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এক জোট হয়ে আন্দোলন করছে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে। এই দাবিতে তারা কতখানি একাত্ম তা বোঝা যায় একটা ছোট্ট ঘটনা থেকে।

৩০ মার্চ ২০২৪ ছিল ২২ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের (২০২২ সালে যারা এইচএসসি পাস করে বুয়েটে ভর্তি হয়েছে) বুয়েট জীবনের প্রথম টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা, যেটা একাডেমিক দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই পরীক্ষায় প্রায় ১৩০০ শিক্ষার্থীর কেউ অংশ নেয়নি। একজনও না। পরেরদিন ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ১২১৫ জনের ভেতরে অংশ নিয়েছে মাত্র ২ জন। ১২১৩ জন বিরত থেকেছে পরীক্ষা দেওয়া থেকে।

বুয়েটে আড়িপেতে শোনা নামে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের একটা সক্রিয় ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম আছে। সেইখানে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন আছে কিনা তা নিয়ে একটা পোল বা ভোটাভুটির আয়োজন করা হয় ৩১ মার্চ ২০২৪। ৪০৫৯ জন তাতে অংশ নিয়েছে। তার ভেতরে মাত্র ১৭ জন মনে করে রাজনীতির দরকার আছে। বাকি ৪০৪২ জন মনে করে এর কোনো প্রয়োজন নেই।

উল্লেখ্য যে, এই গ্রুপের সদস্য হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত হলো জামায়াত বা ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকা যাবে না। এই ভোটাভুটির ফল যে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব থেকে এসেছে এমনটা বলারও অবকাশ নেই। তাহলে দেখা যাচ্ছে, প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের শতকরা ৯৯ ভাগেরও বেশি অংশ মনে করে ছাত্ররাজনীতির কোনো প্রয়োজন নেই।

এমন কেন হলো? রাজনীতি তো মানুষের অধিকার। রাজনীতি মানুষকে কণ্ঠ দেয় তার মতামত তুলে ধরার, শক্তি দেয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে রুখে দাঁড়াবার। তাহলে এমন জরুরি একটা অধিকার কেন স্বেচ্ছায় ফিরিয়ে দিতে চায় বুয়েটের সিংহভাগ শিক্ষার্থী? মানুষ অধিকার বিসর্জন দিতে চায় তখনই, যখন সেই অধিকার আদতে অভিশাপ হয়ে আসে। বুয়েটে হয়েছেও তাই। স্বাধীনতা পরবর্তী বুয়েটের ইতিহাস দেখলে বোঝা যায়, ছাত্ররাজনীতির সুফল এখানে কখনো মেলেনি। কিন্তু দুষ্কর্মের প্রমাণ অনেক। ৮ জুন ২০০২ টেন্ডার নিয়ে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় সাবেকুন নাহার সনি। ২ জুলাই ২০১৩ হেফাজত সমর্থক বুয়েট ছাত্রের চাপাতির আঘাতে আহত হয়ে ছাত্রলীগ কর্মী আরিফ রায়হান দীপ নিহত হয়। ৭ অক্টোবর ২০১৯ আবরার ফাহাদকে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের কর্মীরা।

আবরারের মৃত্যুর ঘটনার প্রেক্ষিতে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে থাকে এর আগের নির্যাতনের খবরগুলোও। শিক্ষার্থীদের কী জঘন্যভাবে র‍্যাগ দেওয়া হতো, মিছিলে না গেলে কীভাবে নির্যাতন করা হতো, শুধুমাত্র বড়ভাইদের সালাম না দেওয়ার কারণে কী করে স্ট্যাম্পের আঘাতে পা ভেঙে দেওয়া হতো—এমন অনেক ঘটনা সামনে আসে।

বিশেষ করে আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রাবাসগুলো ছিল নরকের মতো। ভয়ংকর সময়ের মাঝে পাড় হয়েছে সেই সময়ের শিক্ষার্থীরা। নিষ্ঠুর মৃত্যু যেন ছিল সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আবরার নিহত হয়েছে, সেই জায়গায় অন্য কেউ হতে পারতো। এই ঘটনার পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা এক হয়ে আন্দোলন করলে প্রশাসন বুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। এর ফলাফল কী হলো? আবরার পরবর্তী সময়ে যারা বুয়েটে ছিল, তাদের সাথে কথা বললেই এর উত্তর পাওয়া যায়, রাজনীতিবিহীন এই সময়টা ছিল খুবই শান্তিপূর্ণ। অপমান বা অত্যাচারের ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকতে হয়নি কাউকে।


প্রজন্মনিউজ২৪/আরা

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ