ফসল তো খেয়ে যাচ্ছেই, বাড়িতে ঢুকে ভাতটুকুও খেয়ে নেয় বানর

প্রকাশিত: ৩১ মার্চ, ২০২৪ ০২:১৫:৩০

ফসল তো খেয়ে যাচ্ছেই, বাড়িতে ঢুকে ভাতটুকুও খেয়ে নেয় বানর


নিজস্ব প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার খইয়াছড়া ইউনিয়নের নাপিত্তাছড়া ত্রিপুরাপাড়ার বাসিন্দা কৃষক সুমন ত্রিপুরার জীবনে সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম বানরের উৎপাত। টানাটানির সংসারে নানা বিপত্তির মধ্যেও বানরের ভোগান্তিই বড় হয়ে উঠেছে। খেতের ফসল, বাগানের সবজি, ফলমূল ধ্বংসের পাশাপাশি ঘরে ঢুকে ভাতও খেয়ে যাচ্ছে তারা।

নিজের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে সুমন ত্রিপুরা বলেন, আমার ঘরের চালায় এখন বানর দলের বসতি। ফল–ফসল খেয়ে তো ক্ষতি করেই, মাঝেমধ্যে ঘরে ঢুকে ভাত খেয়ে চলে যায়। বাচ্চাদের হাতের খাবার কেড়ে নিয়ে যায় প্রায়ই। তাড়াতে গেলে উল্টো তেড়ে আসে মানুষের দিকে। ওদের যন্ত্রণায় এখন বাড়িতে থাকাই দায়। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পাহাড়ে খাদ্যসংকটে পড়ে এভাবেই বসতবাড়িতে ঢুকে পড়ছে বানর। গভীর বন ছেড়ে লোকালয়ে এসে ধান, কলা, পেঁপেসহ বিভিন্ন ফল খেয়ে যাচ্ছে বানরের পাল। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বন বিভাগ বলছে, শীতের শেষের দিকে পাহাড়ের গাছে পাতা ও ফুল-ফল কমে যাওয়ায় বানরের খাদ্যসংকট তৈরি হয়। তাই বানর খাবারের খোঁজে লোকালয়ে চলে আসে।

বন কর্মকর্তা ও স্থানীয় লোকজন জানান, মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের কয়লা, নলখো, বদ্ধ ভবানি ও সাইবেনিখিল এলাকার গভীর বনে বানরের সংখ্যা বেশি। গত আমন মৌসুমেও এলাকাগুলোর পাহাড় ছেড়ে সমতলে এসে ধান খেয়ে সাবাড় করে ফেলে বানরের দল। খেতে পাহারা বসিয়েও ফসল রক্ষা করা যায়নি অনেক জায়গায়। এখন নিয়মিত বাড়িঘরে ঢুকে সবজি ও নানা ফল-ফসল খেয়ে যাচ্ছে।

মিরসরাইয়ের পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দারা জানান, চার-পাঁচ মাস ধরে বানরের উৎপাত বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে হামলাকারী বানরের সংখ্যা। আগে বসতবাড়ি এলাকায় ঝাঁকে ৮-১০টি বানর দেখা গেলেও এখন ঝাঁকগুলোতে ছোট–বড় মিলিয়ে ৫০-১০০টি পর্যন্ত বানর দেখা যায়। সম্প্রতি করেরহাট ইউনিয়নের নয়টিলা মাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড় থেকে দল বেঁধে নেমে এসে আমন ধানের খেতে হামলা করছে বানরের দল। বানর তাড়াতে ধানখেতের পাশে ছোট টংঘর তৈরি করে পালা করে পাহারা দিচ্ছিলেন কৃষকেরা।

মিরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়নের নয়টিলা এলাকার কৃষক আবদুল মোমিন বলেন, কয়েক মাস ধরে বানরের যন্ত্রণা বেড়েছে। এবার পাহাড়ি ঘোনায় আমার চাষ করা আমন ধানের বড় একটি অংশ খেয়ে গেছে বানরের দল। এতে ধান উৎপাদন কমে যাওয়ায় আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। উপজেলার সাইবেনিখিল ত্রিপুরাপাড়ার বাসিন্দা ও পাড়াপ্রধান উষা ত্রিপুরা বলেন, আগে গভীর বনে থাকলেও এখন প্রায়ই বাড়িতে চলে আসছে বানর। বাড়ির আশপাশে লাগানো গাছের কলা, পেঁপেসহ বিভিন্ন ফল খেয়ে যাচ্ছে তারা। বানর বন ছেড়ে বাড়িতে হানা দেওয়ার বিষয়টি আমাদের চিন্তায় ফেলেছে। 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের করেরহাট রেঞ্জের কর্মকর্তা তারিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শীতের শেষ দিকে পাহাড়গুলোতে পাতা ও ফুল-ফল কমে আসায় বানরের খাদ্যসংকট তৈরি হয়। এতে অনেক সময় দল বেঁধে বানর বন ছেড়ে পাশের বসতবাড়ি ও খেতখামারে চলে আসে। গাছে নতুন পাতা গজালে এসব বানর আবার পাহাড়ের গভীর বনে ফিরে যাবে।


 প্রজন্মনিউজ২৪/আরা 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ