ঢাবি ছাত্রের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক শিক্ষিকার

প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ০৩:৫০:৪৪

ঢাবি ছাত্রের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক শিক্ষিকার

অনলাইন ডেস্ক: সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে প্রেম, এরপর প্রণয়। স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে মেলামেশা। পেটে নতুন প্রাণের উন্মেষ। কিন্তু দুই মাসের মাথায় মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গর্ভপাত। এরপরই প্রেমিক স্বামী সটকে পড়েন। নিরুপায় হয়ে ঢাকা থেকে প্রেমিকের বাসার সামনে স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে দুই সপ্তাহ অবস্থান। এই ঘটনায় এলাকায় সৃষ্টি হয় আলোড়ন, ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এলাকাবাসী।

ওই তরুণের নাম আশিকুর রহমান শুভ (২৪)। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে তারাপাশা এলাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। ভুক্তভোগী ওই তরুণীর (২২) বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার খড়িয়ালা গ্রামে। ঢাকার বাড্ডা এলাকার একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করতেন তিনি।

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ছেলে পক্ষকে সাড় ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণে ওই তরুণীকে বিদায় করতে রাজি করান। কিন্তু ভুক্তভোগী টাকা নিতে চাননি, চেয়েছিলেন স্ত্রীর স্বীকৃতি। অবশেষে নগদ সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়ে একটি হলফনামা তৈরি করে তাতে স্বাক্ষর নিয়ে তরুণীকে বিদায় করা হয়। পুরো সাড়ে ৫ লাখ টাকাও ভুক্তভোগীর ভাগ্যে জোটেনি। মীমাংসার পর যিনি জিম্মাদার সেজে ভুক্তভোগীকে তার বাসায় রেখেছিলেন, তিনিই নানা কৌশলে রেখে দিয়েছেন দেড় লাখ টাকা!

এমন গুরুতর অভিযোগ করেছেন খোদ ভুক্তভোগী তরুণী। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী দেড় লাখ টাকা আত্মসাৎ এবং চাপের মুখে মীমাংসায় বাধ্য করার বিষয়টি জানিয়েছেন।

গত ২৪ জানুয়ারি থেকে ভুক্তভোগী তরুণী স্বামীর বাসার সামনে অবস্থান নিলে ৭নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম মীমাংসার উদ্যোগ নেন। গত বুধবার রাতে তার বাসায় শুভর বাবা আকবর আলী ধনু ভূঁইয়া, ভুক্তভোগী তরুণী এবং স্থানীয় কিছু সাংবাদিক নিয়ে বসে সাড়ে ৫ লাখ টাকায় মীমাংসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। এদিন রাতেই ওই তরুণীকে শহরের বত্রিশ এলাকার তাসলিমা আক্তার মিতু (খবরের কাগজের জেলা প্রতিনিধি) নামে এক নারী তার বাসায় নিয়ে যান।

পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে সবাই বসে একটি হলফনামা তৈরি করেন। তাতে ভুক্তভোগী তরুণী আর স্ত্রীর দাবি জানাবেন না লিখে তাতে শুভর বাবা এবং ভুক্তভোগীর স্বাক্ষর রাখা হয়। কাউন্সিলরও সাক্ষী হিসেবে তাতে স্বাক্ষর দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এরপর ভুক্তভোগী তরুণীকে নগদ সাড়ে ৫ লাখ টাকা দেয়া হয়। কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ভুক্তভোগীকে সবাই পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেন এতোগুলো টাকা নিয়ে কারও বাসায় না গিয়ে তিনি থানায় গিয়ে আশ্রয় নেন। এরপর পুলিশের সাহায্য নিয়ে ঢাকায় যান। কিন্তু তাসলিমা আক্তার মিতু তার বাসায় নিরাপত্তার কোনো সমস্যা হবে না আশ্বাস দিয়ে ভুক্তভোগী তরুণীকে বাসায় নিয়ে যান।

ভুক্তভোগী তরুণী জানান, তাকে সবাই থানায় থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু মিতু বাসায় নিয়ে গেছেন। বাসায় গিয়ে মিতু ভুক্তভোগী তরুণীর বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট করার জন্য সাংবাদিকদের খরচের কথা বলে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এরপর মিতু ভুক্তভোগী তরুণীকে নিয়ে অন্য বাসায় রাখা তার কাপড় আনতে যান। তরুণী ফিরে দেখেন, মিতুর স্বামী একটি ভাড়া প্রাইভেটকার নিয়ে হাজির। তখন ভুক্তভোগী তরুণীকে ভয় দেখানো হয়, এখানে থাকাটা নিরাপদ নয়, ঢাকায় চলে যেতে হবে। রাত ১২টায় মিতুসহ রওনা হয়ে গেলেন। কিন্তু তাকে পূর্ব বাড্ডার ঠিকানায় পৌঁছে না দিয়ে ভোর সাড়ে ৪টায় ভাটারা এলাকায় নামিয়ে দিয়ে মিতু কিশোরগঞ্জ ফিরে যান। মাদরাসায় গিয়ে ভুক্তভোগী তরুণী ব্যাগ খুলে দেখেন, আরও এক লাখ টাকা কম। ভুক্তভোগীর ধারণা, মিতু তাকে নিয়ে যখন কাপড় আনার জন্য অন্য বাসায় যান, তখন মিতুর স্বামী এক লাখ টাকা সরিয়ে নিয়েছেন। এই মীমাংসা আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে করা হয়েছে আমি আইনি ব্যবস্থা নেব।

মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ভুক্তভোগী তরুণী কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এতে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ আরও পাঁচ থেকে ছয়জনকে অভিযুক্ত করছেন। 

কিশোরগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনর্চাজ মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি ভুক্তভোগী তরুণীর কাছ থেকে সব শুনেছি, আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে, আমি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নিয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য একজন এসআইকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

পৌর কাউন্সিলর সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ‘আমরা সবাই ভুক্তভোগী তরুণীকে থানায় থাকার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু মিতু সেটা হতে না দিয়ে ভুক্তভোগীকে তার বাসায় নিয়ে গেছেন। বিষয়টি আমাদের বাকিদের পছন্দ হয়নি। পুরো বিষয়টা একটা পরিকল্পনার মাধ্যমে করা হয়েছে।’

অভিযোগের বিষয় জানতে সাংবাদিক তাসলিমা আক্তার মিতুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলা হচ্ছে, আমি এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আশিকুর রহমান শুভর সঙ্গে পরিচয় হয় ওই তরুণীর। তখন তিনি রাজধানীর বাড্ডায় একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করতেন। এরপর তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে শুভ শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করলে তরুণী তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বনিবনা না হলে দুজন মিলে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে একটি চুক্তি করেন। চুক্তিতে পাঁচ বছর পর দুজনের বিয়ে হবে এবং এ সময়ের মধ্যে কেউ কাউকে ছেড়ে যাবে না। এমনকি কেউ মানসিক বা শারীরিক অত্যাচার করবে না বলে শর্ত উল্লেখ থাকে। এরপরও নানাভাবে ফুঁসলিয়ে তার সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে শুভ। তার চাপে একবার গর্ভপাত করেছেন বলেও জানান ওই তরুণী।

পরে বিয়ের জন্য চাপ দিলে ২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল একজন মাওলানার মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন হয়। হঠাৎ শুভ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কোনো উপায় না পেয়ে ভুক্তভোগী শুভর বাড়িতে গেলে তাকে অস্বীকার করে।


প্রজন্মনিউজ২৪/এএন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ