ইমরানকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিভক্তি

প্রকাশিত: ০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ০৫:৫৪:২৯

ইমরানকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিভক্তি

অনলাইন ডেস্ক: পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে রাজনৈতিক মতবিরোধ নতুন বা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন সম্পর্কের মধ্যে যে ফাটল ধরেছে তেমনটা অন্য কোনো রাজনীতিকের ক্ষেত্রে হয়নি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং অসুস্থ অর্থনীতিকে স্বাভাবিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন ইমরান খান। কিন্তু ২০২২ সালে ক্ষমতা হারানোর পর তিনি ধারাবাহিক মামলার মুখোমুখি। এই বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন। কিন্তু বেশ কয়েকটি ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার ফলে ইমরান খান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ। ৭১ বছর বয়সী ইমরান খানের দাবি নির্বাচন থেকে তাকে দূরে রাখার জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে  এসব মামলা করা হয়েছে। এখনও ৮ই ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আলোচনায় মুখে মুখে ঘুরছেন ইমরান খান। তার ইস্যুতে পাকিস্তান কিভাবে বিভক্ত তা নিয়ে অনলাইন বিবিসি একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে জিসান নামে একটি বাড়ির প্রসঙ্গ তোলা হয়েছে।

সেখানে নিয়ম করা হয়েছে, যখন পরিবারের সবাই একত্রিত হবে তখন সেখানে রাজনৈতিক আলোচনা করা যাবে না। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর পরই এই নিয়ম করা হয়েছে ওই পরিবারে। ওই পরিবারের নিদা জিসান নামে একজন নারী নিজেকে ইমরান খানের কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি বলেন, আমার মনে আছে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইমরান খানকে আমার পিতা ভোট দেননি। এ জন্য তার সঙ্গে তিন মাস আমি ও আমার বোন কথা বলিনি। এমনকি খাবার সময় বা অন্য কোনো সময়ে আমরা একসঙ্গে বসতাম না। চিৎকার করে বলতে পারি আমি ইমরান খানকে ভালোবাসি। কিন্তু আমার পিতা মনে করেন ইমরান একজন ভাল রাজনীতিক নন। ৩২ বছর বয়সী নিদা জিসান বলেন, তিনি ইমরান খানের ইসলামিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের আদর্শ বিশেষভাবে পছন্দ করেন, যেখানে সবার সমান অধিকার থাকবে। কিন্তু জনপ্রিয় এই রাজনীতিককে আমার পিতা পছন্দ করেন না। কারণ, রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শুরুতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। 
পাকিস্তানে সবচেয়ে শক্তিধর প্রতিষ্ঠান হিসেবে মনে করা হয় সেনাবাহিনীকে। বলা হয় পাকিস্তানের রাজনীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রন করে সেনাবাহিনী। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান গঠনের পর কমপক্ষে তিন দশক সরাসরি দেশ শাসন করেছে তারা। তারপরও তারা এক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে বড় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। পাকিস্তানে এ পর্যন্ত কোনো প্রধানমন্ত্রীই তার ৫ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। চারটি সামরিক স্বৈরাচারের মধ্যে তিনজন প্রত্যেকে কমপক্ষে ৯ বছর করে দেশ শাসন করতে সক্ষম হয়েছেন। 

মিস নিদা জিসানের বসবাস পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ শহর লাহোরে। তিনি বলেন, ইমরান খানের অতীত জীবন নিয়ে তাকে আমার বাবা বিচার করছেন বলেই মনে হচ্ছে। যা-ই হোক, রাজনৈতিক মতবিরোধ মেটানো খুবই কঠিন কাজ। তাই আমরা যখন একত্রিত হই তখন রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে একমত নই। 

ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সমর্থনে প্রথমবার রাজনৈতিক আধিপত্যে আরোহণ ঘটে ইমরানের। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তৎকালীন গোয়েন্দা বিষয়ক এজেন্সির প্রধান পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে তখনকার সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার বিরোধের সূত্রপাত। তখন ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রিত্বের চার বছর। অনাস্থা ভোট আনা হয় তার বিরুদ্ধে। এতে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। তবে ইমরান অভিযোগ করেন, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং তখনকার সেনাবাহিনী। তবে এসব অভিযোগ এ দুটি পক্ষই প্রত্যাখ্যান করে। 

এর ফলে মিস জিসানের মতো সমর্থকদের মধ্যে ইমরানের সমর্থন লাফিয়ে বেড়ে যায়। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য হলো ইমরান খান যথেষ্ট সময় পাননি। তিনি যেসব কাজ করতে চেয়েছিলেন বা বাস্তবায়নের সুযোগ পাননি। পরিস্থিতি এবং দেশের অন্য শক্তিগুলো তাকে তার পারফরম করতে দেয়নি। 

অনেক পাকিস্তানি ইমরান খানের ওপর হতাশ। তারা মনে করেন তার অর্থনৈতিক এবং দুর্নীতি বিরোধী প্রতিশ্রুতি ফাঁকাবুলি। কিন্তু বর্তমানে তিনি জেলে থাকলেও তার জনপ্রিয়তা কমেনি। ডিসেম্বরে গ্যালাপ জনমত জরিপ চালায়, তাতে দেখা যায় ইমরান খানের অনুমোদন রেটিং শতকরা ৫৭ ভাগ। অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের অনুমোদন শতকরা ৫২ ভাগ। গত মাসে ব্লুমবার্গের এক জরিপে দেখা যায়, পাকিস্তানের পতনশীল অর্থনীতিকে ধরে রাখার জন্য ইমরান খানই হচ্ছে কিছু পাকিস্তানি অর্থনৈতিক পেশাদারের শীর্ষ পছন্দ। কিছু নাগরিক মনে করেন, পরিবর্তনের জন্য প্রার্থী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন ইমরান খান। তিনি বংশগত বা উত্তরাধিকার সূত্রের রাজনীতি শেষ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। 

পাঞ্জাবের নবিপুরা গ্রামে বসবাস করেন কৃষক মুহাম্মদ হাফিজ। তিনি বলেন, ইমরান খান ও তার দল আমার মতো গ্রামবাসীকে এটা বুঝিয়েছিল যে, দুটি দল দেশের সম্পদ লুটেপুটে নিয়েছে। তিনি আমাদেরকে শিখিয়েছেন পরিবর্তনের জন্য কিভাবে ভোট দিতে হবে। পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) দলকে বুঝিয়েছেন কৃষক হাফিজ। এ দুটি দল কয়েক দশক ধরে পাকিস্তানের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে আছে এবং তারা পরিচালিত হয় পরিবার দ্বারা। 
একসময় এ দুটি দলের মধ্যে তিক্ত বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়। ২০২২ সালে পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) দল ও ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করে তারা। বৃহস্পতিবার যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে তাতে ব্যাপকভাবে মনে করা হচ্ছে নওয়াজ শরীফ জয়ী হতে পারেন এবং রেকর্ড চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। 


প্রজন্মনিউজ২৪/এফএইচ

এ সম্পর্কিত খবর

তাপপ্রবাহে করনীয় সম্পর্কে জাতীয় নির্দেশিকা প্রকাশ

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের গুলি

স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার দাবিতে সারা দেশে সমাবেশ করবে ছাত্রলীগ

শুক্রবার ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি, ভুলে ফেসবুকে পোস্ট: মন্ত্রণালয়  

ফিরে দেখা সেই ৫ মে রাতে শাপলা চত্বরে ঘিরে কী ঘটেছিল

বেরোবিতে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগে আইনি জটিলতা,আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

চাঁদাবাজির অভিযোগে জবি ছাত্রলীগ সিনিয়র সহ-সভাপতির বিরুদ্ধে মামলা

চবিতে বসুন্ধরা শুভসংঘের সভাপতি রুপক, সম্পাদক রবিউল

আবারও মিয়ানমারের ৮৮ সীমান্তরক্ষীর বাংলাদেশে প্রবেশ

চাঁদাবাজির অভিযোগে জবি ছাত্রলীগ সিনিয়র সহ-সভাপতির বিরুদ্ধে মামলা

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ