সুন্দরবনে নির্মিত হচ্ছে বাঘের ঘর

প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারী, ২০২৪ ০৬:৩২:০৫

সুন্দরবনে নির্মিত হচ্ছে বাঘের ঘর

খুলনা প্রতিনিধি: বঙ্গোপসাগরে বারবার সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুন্দরবনের প্রাকৃতিক রক্ষক রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘ। এবার বাঘ ও বাঘের খাবার বন্য প্রাণীগুলো রক্ষায় সুন্দরবনে নির্মাণ করা হচ্ছে ‘বাঘের ঘর ।

বন কর্মকর্তারা জানান, বনে থাকার জন্য বাঘ দম্পতি সব সময় উঁচু স্থান বেছে নেয়। বিশেষ করে তাদের প্রজননের সময়ে শুষ্ক ও উঁচু স্থানের প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া মা-বাঘ কখনো শাবকের কাছ থেকে দূরে যেতে চায় না। টিলা নির্মিত হলে বাঘের প্রজননের সুবিধা হবে। একই সঙ্গে প্রজনন স্থানের পাশেই মিঠা পানি পান করতে পারবে।

সমগ্র সুন্দরবনকে চারটি রেঞ্জে বিভক্ত করেছে বন বিভাগ। প্রত্যেকটি রেঞ্জে ৩টি করে মোট ১২টি বাঘের টিলা নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নীলকমল অভয়ারণ্য কেন্দ্রে একটি বাঘের টিলার নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হয়েছে।

বন বিভাগ জানায়, সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের নীলকমল, পাটকোস্ট, ভোমরখালী, পুষ্পাকাটি, মান্দারাড়িয়া ও নোটাবেকীতে টিলা নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জের কটকা, কচিখালী, কোকিলমুনি, সুপতি, টিয়ারচর ও দুধমুখিতে টিলা নির্মাণ করা হচ্ছে।

২০২২ সালের ২৩ মার্চ ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। যার ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ প্রকল্পের দুটি অংশ রয়েছে। যার একটি হলো বাঘ জরিপ ও অন্যটি বাঘ সংরক্ষণ। বাঘ জরিপের অংশে, ইতোমধ্যে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ, শিকার করা প্রাণী ও খাল জরিপ সম্পন্ন করা হয়েছে। বর্তমানে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে জরিপ চলছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হবে। এর জন্য ব্যয় হবে ৩ কোটি ২৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। বাকি টাকা ব্যয় হবে বাঘ সংরক্ষণের জন্য।

বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের মধ্যে ১২টি টিলা নির্মাণ, ৫ কিলোমিটার এলাকায় নাইলনের বেড়া, দুটি বাঘের শরীরে স্যাটেলাইট ট্র্যাকার লাগানো, জিপিএস, বাঘ অজ্ঞানের জন্য ট্রাংকুলাইজিং গান, ক্যামেরা, ভিটিআরটি ও সিপিজি সদস্যদের জন্য পোশাক ক্রয় ও প্রশিক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু কার্যক্রম রয়েছে। প্রকৃতিতে বর্তমান বিশ্বের ১৩টি দেশে বাঘের উপস্থিতি রয়েছে। এই দেশগুলোর উদ্যোগে ২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে প্রথমবারের মতো বাঘ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে অন্যতম সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশও ছিল। ওই সম্মলনে ১৩টি দেশ অঙ্গীকার করেছিল, এক যুগের মধ্যে তাদের দেশে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে।

নেপাল, ভারত, ভুটান, ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে তাদের বাঘের সংখ্যা দেড় থেকে প্রায় দুই গুণ বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এই লক্ষ্য থেকে এখনো অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার বলেন, ‘আমি মন্ত্রী হওয়ার পরে সব সময় জোর দিয়েছিলাম সুন্দরবন রক্ষার বিষয়ে। নানা চেষ্টার ফলে কয়েকটি প্রকল্প পাস করিয়েছি। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।’

বন বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৫ সালে সুন্দরবনে প্রথম ক্যামেরা ট্র্যাপ পদ্ধতিতে বাঘ জরিপ করা হয়। তাতে বাঘের সংখ্যা বলা হয় ১০৬টি। ২০১৮ সালে একই পদ্ধতির জরিপে বাঘের সংখ্যা বলা হয় ১১৪টি।সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এবং বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ডিএফও ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ‘২০১৫ ও ২০১৮ সালের পৃথক জরিপে দেখা গেছে সুন্দরবনে ৮ শতাংশ বাঘ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা জরিপের জন্য যেসব ক্যামেরা স্থাপন করেছিলাম তার ৫৫ শতাংশে বাঘের ছবি পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে বনে বাঘের খাদ্য হরিণের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে জরিপ শেষ না হলে সঠিক তথ্য বলা যাবে না।’


প্রজন্মনিউজ২৪/এফএ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ