পশ্চিম তীর গাজা ইজরাইল ও হামাস আল ফাতাহ

প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর, ২০২৩ ০১:৪৭:৪৪

পশ্চিম তীর গাজা ইজরাইল ও হামাস আল ফাতাহ

ইজরাইলে যারা শাসন করে তারা মূলত ইউরোপীয় ইহুদী। এদেরকে বলা হয় «Ashkenazi Jewish» (আশকেনাজী জিউশ)। এরা ইউরোপ থেকে এসে ফিলিস্তিন-ভূখণ্ডে গেঁড়ে বসা ইহুদী।

কিছু আরব ইহুদী আছে যারা আগে থেকেই ফিলিস্তীনে ছিল আর কিছু অন্যান্য আরব দেশ থেকে এসেছে। এদেরকে বলা হয় «Mizrahi Jews» (মিজরাহী জিউশ)। Hispanic (হিস্পানিক) কিছু জিউশ বা ইহুদী আছে। তবে এলিট শ্রেণী হচ্ছে আশকেনাজী জিউশ সম্প্রদায়। এরাই মূলত জার্মান আর ফ্রান্স থেকে বিতাড়িত হয়ে ফিলিস্তীনীদের জমি দখল করেছে। এরা অসম্ভব উগ্র, জেনোফোবিক এবং প্রচুর টাকাওয়ালা। ইজরাইলের এলিট শ্রেণী হচ্ছে এরা। এদের কালচারের সাথে আরব ইহুদীদের কালচার কোনোভাবেই মিলে না।

ইহুদী ধর্ম অনুযায়ী মেসিয়াহ (হাদিসে যাকে বলা হয়েছে মাসীহে দাজ্জাল) না আসা পর্যন্ত ইহুদীদের জন্য আলাদা দেশ গঠন করা পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ধ।
এই কারণেই অন্যান্য দেশের অর্থোডক্স ইহুদী এবং ইহুদী ধর্মগুরুগণ ইজরায়েলের বিরোধী। কারণ এই রাষ্ট্র ইহুদী ধর্মমতেও নিষিদ্ধ। অর্থোডক্স ইহুদী মানে কঠোরভাবে পর্যবেক্ষক এবং ধর্মতাত্ত্বিকভাবে সচেতন ইহুদী। এরা বেশ গোঁড়াপন্থি।

ধর্মীয় দেশ দাবী করলেও ইজরাইল মূলত কোনো ইহুদী দেশ নয়, এটা একটা জায়োনিস্ট দেশ। সহজ ভাষায় বললে  জায়োনিজম হচ্ছে ইহুদী জাতীয়তাবাদের একটি পলিটিক্যাল টার্ম।

জায়োনিস্ট হওয়ার জন্য ইহুদী হওয়া শর্ত নয়। অর্থাৎ ইহুদী নন এমন ব্যক্তিরাও জায়োনিস্ট হতে পারেন। আবার ইহুদী মানেই জায়োনিস্ট নয়। জায়োনিজমকে (Zionism) বাংলায় «ইহুদীবাদ» বলা হয়। হিন্দু আর হিন্দুত্ববাদ যেমন এক নয়, অনেকটা সেরকম। ইহুদী ধর্মকে বলা হয় «জুদাইজম»।

তো জায়নবাদের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে স্টেট অব ইজরাইল জাতির পিতা থিউডর হার্ৎজেল। আরবীতে এভাবে: تيودور هرتزل এবং ইংরেজীতে এভাবে: Theodor Herzl। তার স্বপ্ন ছিল তার মুভমেন্টের সমর্থক ইহুদীদের জন্য আলাদা একটা দেশ হবে এবং সেটা হবে ফিলিস্তীনের পবিত্র ভূমিতে। সে আবার অবশ্য তার জীবদ্দশায় ইজরাইল দেখে যেতে পারেনি। তবে সে নানাভাবে চেষ্টা করেছিল।

ওসমানী খলীফা আব্দুল হামীদকে সে চিঠি লিখে প্রস্তাব দিয়েছিল যেন ইহুদীদের জন্য বাইতুল মোকাদ্দাসের কাছে কিছু জমি বরাদ্ধ দেয়া হয়। বিনিময়ে তুরস্কের সব ঋণ পরিশোধ করে দিবে সে। খলীফা এই প্রস্তাব নাকচ করে দিলে ১৯০১ সালের মে মাসে থিওডর তার ক্লোজফ্রেন্ড পোলিশ ফিলিপ নিউলিন্সকিকে দিয়ে আবার প্রস্তাব পাঠায়। এবারে খলীফার জন্য বিপুল পরিমাণ স্বর্ণসহ নানা উপহারের প্রস্তাব দেয়া হয়।

উল্লেখ্য যে, অন্যান্য ব্যবসা ও সুদের ব্যবসা করে ইহুদীরা অনেক আগে থেকেই প্রচুর সম্পদের মালিক। ব্যাংকিং কনসেপ্ট জিনিসটাই ইহুদীদের থেকে; তাদের সুদের ব্যবসা থেকে এসেছে। এই কারণে তাদের সম্পত্তি ছিল অঢেল।

খলীফা আব্দুল হামীদ বলেছিলেন,ফিলিস্তীনের ভূমি আমার একার সম্পদ নয় যে আমি লিখে দেবো। প্রতিটা মুসলমানের রক্তের ফোঁটাতে এর মালিকানা। আমি বেঁচে থাকতে সেটা হতে দিতে পারি না।

খলীফা আব্দুল হামীদ মারা গেছেন, ওসমানী খেলাফত ধ্বংস হয়েছে। খেলাফত বিলুপ্ত হয়েছে। বৃটিশরা যুদ্ধে জিতেছে। থিউডর হার্ৎজেল মারা গেছে। কিন্তু তার আইডিওলজি দিনে দিনে শক্তিশালী হয়েছে। তার স্বপ্নের দেশ (?) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বৃটিশরা ইউরোপ থেকে মার খাওয়া ইহুদীদের জন্য জায়গা বরাদ্ধ করে দিল ফিলিস্তীনে। থিউডরের স্বপ্নের সেই দেশ (?) প্রতিষ্ঠিত হলো ফিলিস্তিনীদের রক্তের উপর। লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হলো। ঘরবাড়ী হারালো, জীবন হারালো।

জায়োনিস্টদের তখন সশস্ত্র মিলিশিয়া ছিল। তারা ফিলিস্তিনীদের হত্যা করতো, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে সেই ভূমি দখল করতো। তারা বিশেষভাবে বৃটিশদের সহায়তা পেতো।

ইহুদীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত এই ইজরাইলেও ইহুদীরাই বৈষম্যের শিকার হয়। যারা কালো ইহুদী তারাও বৈষম্যের শিকার হয়। এ নিয়ে তারা অনেকবার রাস্তায় নেমেছে। সবচেয়ে বেশি শিকার হয় আরব ইহুদীরা। কারণ তাদের ভাষা আরবী, তাদের বেশভূষা আরব মুসলমানদের মতো। আরবী বলার কারণে তাদের চাকুরি হয় না; আরবদের মত পোশাক পরায় চাকুরি হয় না তাদের।

ধর্মে ইহুদী হওয়ার পরও জাতিতে একই না হওয়ায় তারা নানা বৈষম্য, বুলিং এবং হেনস্থার শিকার হয়। তাদের বলা হয় আরবদের ঘৃণা করতে। তো যারা পূর্বে আরব দেশে ছিল, তারা অর্থাৎ বৃদ্ধরা বিষয়টা মেনে নিতে পারে না। তারা প্রতিবাদ করে। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। কারণ তারা নিগৃহীত সর্বত্র। তাহলে ভাবুন, যারা নিজ ধর্ম ইহুদীদের সাথেই এমন করে, তারা আরব মুসলমানদের সাথে কেমন আচরণ করবে সেটা সহজেই অনুমেয়।

ইজরাইল শুরু থেকেই বৃটিশ এবং আমেরিকানদের প্রত্যক্ষ সাপোর্ট পেয়ে আসছে। আরব vs ইজরাইল যুদ্ধে আমেরিকান সৈন্যরা ইজরায়েলের পক্ষে যুদ্ধ করেছে বলেও বলা হয়।

এখনো যখন ইজরাইল ফিলিস্তিনীদেরকে হত্যা করে, নারী-শিশুদেরও হত্যা করে, ধরে নিয়ে যায়, এ নিয়ে জাতিসংঘ ইজরাইলের বিরুদ্ধে কোনো প্রস্তাব আনলে আমেরিকা ভেটো দেয়। সরাসরি ইজরাইলকে রক্ষা করে।

জাতিসংঘের আইন, আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার, যুদ্ধাপরাধ আইন সব কিছুই তারা নিয়মিত লংঘন করে। কিন্তু তাতে তাদের কোনো কিছুই হয় না। কারণ আমেরিকা আছে। তারা প্রকাশ্যেই ইজরাইলকে রক্ষা করে নেয়, একদম নগ্নভাবে।

ইজরাইলের কোনো সীমানা নেই। কারণ তারা প্রতিদিনই দখল করে চলেছে। যেকোনো দিন ইহুদী সেটেলার এসে আপনাকে বলবে- এই ঘর আমার। এরপর ইজরাইলী পুলিশ এসে আপনাকে বের করে দেবে, পুরুষদের জেলে নিয়ে যাবে। তারপর বুলডোজার এসে আপনার ঘর গুঁড়িয়ে দেবে। এরপর সরকারী টাকায় সেখানে ইহুদীদের জন্য ঘর বানানো হবে।

নিজেদের শত শত বছরের ভিটেবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়া ফিলিস্তিনীরা এক দিনেই উদ্বাস্তু হয়ে গেল। রিফিউজি হিসেবে কোথাও আশ্রয় নিতে হবে। এভাবে তারা প্রতিদিন ঘরবাড়ী দখল করে নেয় আর ফিলিস্তিনীরা উদ্বাস্তু হয়।

ইহুদীদের জন্য ঘরবাড়ী বানানোর জন্য যে টাকা খরচ হয়, তার জন্যও আমেরিকা থেকে সরকারী ও বেসরকারীভাবে টাকা আসে। আবার প্রতিবছর ইজরাইলের জন্য প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা আসে। পশ্চিমের দেশগুলোতে ইজরাইলীদের জন্য ভিসা প্রায় ফ্রী। নামী দামী ইউনিভার্সিটিগুলোতে তারা স্কলারশিপ পায়। এর বাইরে আবার প্রায় সব বড় বড় কোম্পানীর বিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট আছে ইজরাইলের। তারা শিক্ষা খাতে ইনভেস্ট করে, গবেষণা খাতে ইনভেস্ট করে, ট্যুরিজম খাতে ইনভেস্ট করে।

অন্যদিকে ফিলিস্তিনীরা আগামীকাল পর্যন্ত তাদের বাড়ীটা থাকবে কি-না জানে না। প্রাণ থাকবে কি-না সেটাও জানে না। স্কুলটা থাকবে কি-না তাও জানে না। রাত-বিরাতে এসে তল্লাশি চালিয়ে ইজরাইলী পুলিশ যাকে-তাকে ধরে নিয়ে যায়। অল্পবয়সী শিশু হলেও কোনো রক্ষা নাই।

ফিলিস্তিনীদের সেনাবাহিনী কিংবা পুলিশ ফোর্স রাখারও পারমিশন নাই। ফিলিস্তিনী সিকিউরিটি ফোর্স নামে একটা বাহিনী আছে, তাদের ভারী কোনো অস্ত্র রাখার অনুমতি নাই। ইজরাইলের সাথে এক চুক্তিতে এটা মেনে নেয় ইয়াসির আরফাতের পিএলও। ফলে মাহমুদ আব্বাস নামের প্রেসিডেন্ট হলেও কাজে কোনো ক্ষমতা তার নাই।

ইজরাইল দখল করতে করতে ফিলিস্তীনকে এমনভাবে দখল করেছে যে একপাশে গাযা উপত্যকা, অন্যপাশে পশ্চিম তীর। মাঝখানে ইজরাইল। ব্যাপারটা অনেকটা পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তানের মতো পশ্চিম তীর আর গাযা, মাঝখানে ভারতের মতো ইজরাইল। বুঝার সুবিধার্তে করার সুবিধার্তে মনে করুন গাযা হচ্ছে বাংলাদেশ, পশ্চিম তীর পাকিস্তান। মাঝখানে ভারত হচ্ছে ইজরাইল। (ভৌগোলিক অবস্থান বা ম্যাপ বুঝার সুবিধার্তে বললাম।)

ইজরাইলীরা পৃথিবীর ১৬০টি দেশে প্রায় ফ্রী ভিসায় ঘুরতে পারলেও ফিলিস্তিনীরা এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় যেতে ইজরাইলের অনুমতি নিতে হয়। ফিলিস্তীনের গাযা উপত্যকা থেকে যদি কেউ ফিলিস্তীনের পশ্চিম তীরে যেত চায়, তাহলে অনেকদিন আগে এপ্লাই করতে হয়। তাও ৯০% ক্ষেত্রে অনুমতি পাওয়া যায় না। জিজ্ঞাবাদে ইজরাইল সন্তুষ্ট হলেই কেবল অনুমতি দেয়। বেশিরভাগ গাযাবাসী কখনো আল আকসা মসজিদ চোখেও দেখেনি। কারণ আল-আকসা পশ্চিমতীরে।

পিএলও আর হামাস হচ্ছে ফিলিস্তিনের দুটি রাজনৈতিক দল। হামাস সংখ্যাগরিষ্ঠ গাযাতে আর পিএলও পশ্চিম তীরে।

তবে ২০০৬ সালে পুরো ফিলিস্তীনের নির্বাচনে হামাস পিএলওর উপরে জয়লাভ করে ফিলিস্তীনের ক্ষমতায় আসে। ইসমাঈল হানিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়। মাহমুদ আব্বাস প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা দখল করে নেয়।

অনেকটা পাকিস্তানের নির্বাচনের মতো, শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হয়েও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। ইসমাইল হানিয়ার ক্ষেত্রেও তাই ঘটে।

এরপর থেকে ইসমাঈল হানিয়া তার এলাকা গাযাতেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকেন। বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়ে যাওয়ার মতো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ফিলিস্তীন নিজেই তো স্বাধীন নয়।

মাহমুদ আব্বাসের পিএলও ইজরাইলী সকল শর্ত মেনে ফিলিস্তীন তথা পশ্চিমতীরকে ডিমিলিটাইরাইজড করলেও গাযার হামাস সেটা মেনে নেয়নি। পশ্চিম তীরে ইজরায়েলী শর্ত অনুযায়ী কোনো সেনাবাহিনী নেই। সিকিউরিটি ফোর্স আছে, যাদের নামে মাত্র একটা পুলিশ ফোর্স আছে। যেটা আছে তাদেরও শর্ত হচ্ছে ইজরাইলী পুলিশকে সাহায্য করতে হবে। তাদের কোনো ভারী অস্ত্র নেই। হাল্কা অস্ত্র যা আছে, সেটাও ইজরাইলের দেয়া। ওদের গাড়ীও ইজরাইলের দেয়া। যা ইজরাইল সবসময় ট্র‍্যাক করে।কোনো ফিলিস্তিনীকে জোর করে বেআইনিভাবে ধরে নিয়ে গেলেও ফিলিস্তিনী সিকিউরিটি ফোর্স কিছু করতে পারে না।

এজন্য পশ্চিম তীরের যেকোনো বাড়ীতে ইজরাইলী পুলিশ চাইলে যে কোনো সময় তল্লাশি চালাতে পারে। আমরা যে পাথর ছুড়ার দৃশ্য দেখি, এগুলা বেশিরভাগই পশ্চিম তীরের। কারণ তাদের অস্ত্র রাখার অনুমতি নেই। ইচ্ছে হলেই যে ঘরবাড়ি থেকে বের করে দিয়ে দখল করে নেয়, সেটাও পশ্চিমতীরে। কারণ পশ্চিমতীর ইজরাইলী অকিউপ্যাশনে। এখানকার বাসিন্দারা মোটামুটি চলাচলের স্বাধীনতা পেলেও ঘরবাড়ী কখন বেদখল হয়ে যাবে বলতে পারে না। এতে আলফাতাহ বা পিএলও কিছু করতে পারে না।

অন্যদিকে হামাস শাসিত গাযা উপত্যকা ইজরাইলের কোনো শর্ত মানে না। তাদের মিলিটারী আছে। তাদের অঞ্চলে ইজরাইলী পুলিশ ঢুকতে পারে না। তারা নিজেরাই সেখানকার নিরাপত্তা দেয়। তাদের আর্টিলারি ইউনিট আছে। তাদের কাছে ভারী অস্ত্র আছে। যার বেশিরভাগ তারা নিজেরাই তৈরী করে। এখানে ইজরায়েলী সেটেলাররা তো দূরের কথা, ইজরাইলী পুলিশ বা ইজরায়েলী আর্মীও ঢুকতে পারে না।

ইজরাইলের শর্ত মেনে না নেয়ায় গাযা উপত্যকাকে ইজরাইল চারিদিক থেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। গাযার দুইদিকে ইজরাইল, একদিকে মিশর আরেকদিকে সমুদ্র।
তাদের উপর ইজরাইল ল্যান্ড, এয়ার এন্ড সী ব্লক দিয়ে রেখেছে। গাযা উপত্যকাকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জেল খানা।

মিশর সীমান্তে আব্দেল ফাত্তাহ সিসি দেয়াল তুলে দিয়েছে। ফিলিস্তিনীদের চলাচলের জন্য মাটির নীচে সুড়ঙ্গ ছিল, সেগুলো সে বন্ধ করে দিয়েছে। মুহাম্মদ মুরসী ক্ষমতায় আসার পর যখন মিশর সীমান্ত ফিলিস্তিনীদের জন্য খুলে দেয়, তখন ইজরাইল মুরসীকে সবচেয়ে বড় থ্রেট হিসেবে নেয়।

ইজরাইল, সৌদি ও আমিরাত জোট মুরসীকে হটিয়ে সিসিকে ক্ষমতায় আনে। সে সময়ে সিসিকে সবার আগে অভিনন্দন জানায় সৌদি আরব। যদিও ইজরাইলের উদ্দেশ্য আর তাদের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন, লক্ষ্য ছিল একই। কপাল পুড়ে ফিলিস্তিনীদের।

এরপর থেকেই ফিলিস্তীনের জন্য সেই সীমান্ত বন্ধ হয়ে যায়। সুড়ঙ্গ পথ ব্যবহারের জন্য মিশর সীমান্তে যে ঘরবাড়ীগুলো ছিল, বুলডোজার দিয়ে সেসব বাড়ীও ভেঙে দেয় মিশর।

হামাস (এটি আরবী শব্দ حركة المقاومة الإسلامية এর সংক্ষেপ।) শাসিত গাজায় শিক্ষার হার ৯৯%। ইজরাইলী হামলায় ঘরবাড়ি ভেঙে গেলে সবার আগে তারা স্কুলগুলোকে ঠিক করে। তাদের একটা আন্তর্জাতিক মানের ইউনিভার্সিটি আছে। গাজায় একটা বিমানবন্দর ছিল «গাজা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট» নামে, যা ইজরাইল ধ্বংস করে দেয়। পুরো ফিলিস্তীনে আর কোনো এয়ারপোর্ট নেই।

ফিলিস্তীনী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সাথে ইজরাইলের ফুল স্কেলে দুইবার যুদ্ধ হয়। এতে ইজরাইলী আর্মীর ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। ২০১৪ সালের যুদ্ধে ইজরাইলী সেনাদের ব্যাপক প্রাণহানি ঘটলে ইজরাইল পিছু হটে। জুলাইয়ের ৮ তারিখ থেকে আগস্টের ২৬ তারিখ পর্যন্ত স্থায়ী এই যুদ্ধে প্রায় ১শ ইজরাইলী সেনা নিহত হয়, অপরদিকে দুই হাজার ফিলিস্তীনী শহীদ হয়। কিন্তু ইজরাইলের জন্য এটাও ছিল বিশাল ধাক্কা।

গাজা উপত্যকায় খাবার, নিত্যপ্রয়োজনীয় ওষুধসহ চোরাই পথে আনতে হয়। ইরান চোরাইপথে অস্ত্র আর কাতার টাকা দেয়। এর বাইরে তুরস্ক সমুদ্র সীমা আর ইজরাইলী সীমা ব্যবহার করে জাহাজভর্তি খাবার, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য গাজায় পৌঁছে দেয়। একবার তুরস্কের একটা জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছিল ইজরাইল। সৌদি আরবসহ অন্যান্য আরবদেশগুলোর ধনীরা তাদের দানের একটা বড় অংশ ফিলিস্তীনে পাঠায়। তবে সেটা গাজায় নয় বরং পশ্চিমতীরে যায়।

ইজরাইল হামাসকে বার বার বলছে- তোমরা যদি আমাদের শর্ত মেনে নাও, সেনাবাহিনী বিলুপ্ত করো, অস্ত্র সমর্পণ করো, নিরস্ত্র হও, তাহলে তোমাদের অবরোধ আমরা তুলে নেবো। তোমরা যেখানে চাও যেতে পারবে। আমাদের এখানে চাকুরি করতে পারবে। যা কিনতে চাও, তা কিনতে পারবে।

মাহমুদ আব্বাসের পিএলও পশ্চিমতীরে এই শর্ত মেনে নিলেও ইসমাইল হানিয়া আর খালিদ মিশালের গাজা উপত্যকার হামাস সেটা মেনে নেয়নি। যার কারণে তারা অবরুদ্ধ। এই কারণে পশ্চিমতীরের ফিলিস্তীনীরা ইজরাইলের দিকে ঢিল আর পাথর ছুঁড়লেও গাজা উপত্যকার ফিলিস্তীনীরা অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে, ইজরাইলের দিকে মিসাইল ছুঁড়ে। যদিও ইজরাইলী অত্যাধুনিক ডিফেন্স সিস্টেম আইরন ডোম ফিলিস্তীনীদের এই মিসাইল আকাশে থাকতেই ধ্বংস করে। তবে এইবার ইজরাইলের আইরন ডোম হামাসের মিসাইলগুলো সব আটকে দিতে সক্ষম হয়নি। অনেকগুলো মিসাইল ইজরাইলের নানা শহরের রাস্তা এবং ভবনে আঘাত হেনেছে। এতে ইজরায়েলসহ তার মিত্ররা বেশ অবাক হয়েছে। মোসাদের মতো সিকরেট এজেন্সির ওপর কথা ওঠেছে এবার শক্তভাবে। যদিও এ ব্যাপারে ইসমাইল হানিয়া গত বছর বলেছিলেন।

এদিকে আইরন ডোম কতটা আঘাত ঠেকাতে সক্ষম সেটা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। কারণ হামাসের মিসাইলগুলো কোনো অত্যাধুনিক মিসাইল নয়। এগুলো তারা পাইপ এবং অন্যান্য পরিত্যক্ত জিনিসপত্র থেকে বানায়। এই হ্যান্ডমেইড রকেটগুলো আঘাত হানার পর আইরন ডোম কতটা সেফ সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

প্রায় চার বিলিয়ন ডলার বার্ষিক সামরিক সহায়তা, বিলিয়ন ডলারের শিক্ষা এবং রিসার্চের ইনভেস্টমেন্ট, প্রায় ভিসা ফ্রী ট্রাভেল, নামীদামী ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ, আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের একনিষ্ঠ সাপোর্ট এত কিছু পাওয়া ইজরাইলের সাথে অবরুদ্ধ ফিলিস্তীনের তুলনা করার সময় আপনারা যারা ইজরাইল জ্ঞান-বিজ্ঞানে কত এগিয়েছে অথচ ফিলিস্তীন জ্ঞান বিজ্ঞানে আগায় নাই কেন? বা যারা বলেন ফিলিস্তীনীরা ছেড়ে হিজরত করে চলে আসে না কেন? বা তারা আগ বেড়ে লাগে কেন? এসব বলতে লজ্জা করে না?

"ফিলিস্তীনের ভূমির ব্যাপারে ফতোয়ায় উলামায়ে দেওবন্দ" উসমানী খেলাফতকালে কোন ই হু দী ফিলিস্তীনের ভূমি ক্রয়-বিক্রয় করার অধিকার ছিল না। ভিসা নিয়ে পর্যটকের মতো তারা যেতে পারতো এবং তাদের দর্শনীয় স্থান যিয়ারত করে আসতে পারতো, কিন্তু জায়গা কেনার কোন সুযোগ ছিল না।

খেলাফত ধ্বংসের পর ফিলিস্তীন ভূমির ওপর কর্তৃত্ব যখন বৃটেনের হাতে, তখন পুনরায় সে মাসআলাটি ওঠে যে ফিলিস্তীনের ভূমি বিক্রয় করা যাবে কি-না। ইহুদীরা প্রচুর দাম দিয়ে জমি ক্রয় করছিল আর কিছু লোভী মুসলমান তাদের জমি বিক্রি করছিল। তখন আরবের অধিকাংশ আলেম হাদিসে সরাসরি এর কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকায় কয়েকটা শর্তসাপেক্ষে জমি বিক্রয়ের বৈধতার ফতোয়া দিয়ে দিল।

এই ফতোয়ার বিরোধীতা করেন তৎকালীন ভারত উপমহাদেশের উলামায়ে কেরাম। হাকীমুল উম্মত হযরত থানবী রহ., মুফতী কিফায়াতুল্লাহ দেহলবী রহ. প্রমুখ ইস্তেহছানের ভিত্তিতে “মুতলাকান” (বিনা শর্তে) হরম শরীফের জমি যেভাবে বিক্রি জায়েয নয়, তদ্রূপ ফিলিস্তীনের কোন অংশ ই হু দীদের কাছে বিক্রি করা যাবে না বলে ফতোয়া দিয়েছিলেন।

আহ! যদি তাঁদের ফতোয়াটি মানা হতো আর ই হু দীদের কাছে ফিলিস্তীনের এক টুকরো জমিনও বিক্রি না করা হতো, তাহলে আজকের অবস্থা (হয়ত) হতো না।

লেখক মোহাম্মাদ ত্বহা খান

এ সম্পর্কিত খবর

এবার জবি উপাচার্যের কাছে বিচার চাইলেন আ.লীগের শিক্ষকরা

জবিতে গুচ্ছের ‘বি’ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

নোবিপ্রবিতে গুচ্ছ বি ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে, উপস্থিতির হার ৮৯.৩৯ শতাংশ

ভূমধ্যসাগরে মারা যাওয়া আট বাংলাদেশির মরদেহ হস্তান্তর

চাঁদের উদ্দেশে পাকিস্তানের প্রথম স্যাটেলাইট যাত্রা

মিয়ানমারের পুরুষদের বিদেশে কাজ করতে বাধা দিচ্ছে জান্তা সরকার

বশেমুরবিপ্রবি’তে ‘বি’ ইউনিটের গুছ ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন

বিশ্ব গনমাধ্যম সূচকে দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ

গুচ্ছের বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় হাবিপ্রবি কেন্দ্রে বহিষ্কার ১

ফরিদপুরে স্কুল শিক্ষার্থী অপহরন মামলায় একজন গ্রেফতার

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ