অভাব পিঠে অভাব

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০৩:৫০:৫১

অভাব পিঠে অভাব

আরমান হোসাইন: জীবনের পাগলা ঘোড়া আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, আমরা আল্লাহর দেওয়া নির্দেশনা ভুলে গিয়ে নিজেদের মতো করে সফল হতে চাই। তা করতে গিয়ে বরাবরই শয়তানের জালে আটকা পড়ি। ফলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি না।

হতাশার মেঘগুলো আমাদের চারপাশ অন্ধকার করে দেয়। এর থেকে উত্তরণের পথ আল্লাহর কাছে ফিরে আসা। তাঁর ইবাদতে মগ্ন হয়ে যাওয়া। তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা।
কারণ তিনি ছাড়া আর কেউ হতাশা দূর করতে পারবে না। সফলতা এনে দিতে পারবে না। 

দারিদ্র্যের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করো। কেননা ইহার অভিশাপ মানুষকে কাফেরে পরিনত করে।ইচ্ছা, আশা, আকাঙ্খা সব মানুষের মধ্যেই বিরাজমান। ইচ্ছা, আশা, আকাঙ্খা আছে বলেই আমরা এখনো বেঁচে আছি। আর এই ইচ্ছা,আশা.আকাঙ্খা থেকেই অভাবের উৎপত্তি। অভাবের ধরনটা প্রত্যেকের ক্ষেত্রে এক রকম নাও পারে। এটা শুধু বস্তুগত নয়, অবস্তুগতও হতে পারে। অবস্তুগত বলতে যশ,খ্যাতি, প্রভাব, প্রতিপত্তির ক্ষেত্রেও হতে পারে। আমরা অনেক সময় বলি, লোকটি লোভী, তার চাহিদার শেষ নেই। আসলে এটা মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য

সৃষ্টিকর্তা দারিদ্রতা তৈরি করে দেন না, বরং আমরা একে অপরের সহযোগিতা করি না বলেই দারিদ্রতা সৃষ্টি হয়।আমরা সবাই সচ্ছল হতে চাই। সফল হতে চাই। তা হতে গিয়ে আমরা নিজেকেই হারিয়ে ফেলি। আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে দুনিয়া অর্জনের মিথ্যা প্রতিযোগিতায় আমরা জীবন শেষ করে দিই।

এই দুনিয়াতে সামান্য তম  অর্থের অভাবে পড়লে মানুষের বুদ্ধি ঠিকমতো কাজ করে না।মানুষ অর্থাভাবে পড়লে স্বাভাবিক বোধবুদ্ধি কমে যায়, তখন তাদের নেওয়া সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়তে দেখা যায়।

 প্রায় ক্ষেত্রেই অভাবের তাড়নায় খারাপ সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায়। দেনামুক্তির জন্য এ সময় অতিরিক্ত দেনা করার প্রবণতাও দেখা যায়, যার ফলে দুঃখ দুর্দশা আরও বাড়ে। তবে অভাব কেটে গেলে আবার বুদ্ধি ঠিকমতো কাজ করতে শুরু করে এবং স্বাভাবিক মানুষের মতো সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায়।

আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করো, আমি তোমার অন্তর ঐশ্বর্যে পূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব দূর করে দেব। তুমি তা না করলে আমি তোমার দুই হাত কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব-অনটন রহিত করব না।

শিক্ষা হলো সুযোগ তৈরির চাবিকাঠি। আর এর মাধ্যমেই আপনি দারিদ্রতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন।যদি আপনি দারিদ্রতা নিয়েই খুশি থাকেন তাহলে মনে রাখবেন শয়তান হলো আপনার বন্ধু।এই দুনিয়ায় আমাদের অভাবের শেষ নেই । একটি অভাব শেষ হলেই আরেকটি অভাব দেখা দেয়।জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষকে অভাবের সম্মুখীন হতে হয়। অভাব পুরনের জন্য মানুষকে অনবরত কাজ করতে হয়।এমন কোন সুস্থ মানুষ নেই যার অভাব নাই।অতএব ধনী দরিদ্র সবাই অভাবের সম্মুখীন।

সম্পদ ছাড়া বেচে থাকাকে দারিদ্র্যতা নয়। বরং আশা ছাড়া বেচে থাকাই হলো আসল দারিদ্রতা।
যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে পরকাল, আল্লাহ সেই ব্যক্তির অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন এবং তার যাবতীয় বিচ্ছিন্ন কাজ একত্র করে সুসংযত করে দেবেন, তখন তার কাছে দুনিয়াটা নগণ্য হয়ে দেখা দেবে। আর যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে দুনিয়া, আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তির গরিবি ও অভাব-অনটন দুই চোখের সামনে লাগিয়ে রাখবেন এবং তার কাজগুলো এলোমেলো ও ছিন্নভিন্ন করে দেবেন। তার জন্য যা নির্দিষ্ট রয়েছে, দুনিয়ায় সে এর চেয়ে বেশি পাবে না।

যদি আপনি গরিব হয়ে জন্মান তাহলে আপনার কোনো দোষ নেই। তবে যদি আপনি দারিদ্রতা নিয়ে মারা যান তবে দোষটা আপনারই।
দরিদ্র অবস্থায় অর্থ ছাড়াও আরও কিছু বিষয় লক্ষ্য করা যায়। এ সময় বুদ্ধিবৃত্তিও কমে যায়। গরিব বলে কম মেধা রয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। বরং আর্থিক দুশ্চিন্তার সঙ্গে বিষয়টি সম্পর্কিত। পরিমিত অভাব মানুষকে সুখের স্বাদ পেতে সাহায্য করে। 
অভাব মিটানোর প্রয়োজনে মানুষ অনেক কিছু আবিষ্কার করতেও সক্ষম হয়েছে। অভাবের সুযোগ নিয়ে প্রতারকেরা প্রতারণার ফাঁদ পেতে রাখে সর্বত্র। মানুষ যেমনি অভাবের তাড়নায় ঘৃণিত পথে পা বাড়ায়। তেমনি সমাজে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থার কারণে কিছু বিলাসী মানুষের অপ্রয়োজনীয় বিত্তপ্রদর্শন অভাবী মানুষের মাঝে লোভ-লালসা ও হতাশার সৃষ্টি করে। যা থেকে সমাজে চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি, মারামারি এমনকি খুন-খারাবি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

প্রতিটি মানুষই অভাবের মধ্যে বসবাস করে কেউ কম আবার কেউ বেশি।দুনিয়ার বিপদসমূহের মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অন্যতম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আয় অনুপাতে ব্যয়ের পরিমাণ বেশি হলে হতাশাসহ নানাবিধ চিন্তা ঘিরে ধরে। এ কারণে শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি মানসিক অসুস্থতা তীব্র আকার ধারণ করে। 

অভাব মানুষকে অনেক কিছু শিখিয়ে দেয় এবং তা থেকে মানুষ অনেক শিক্ষা গ্রহণও করে।
আজ আপনি যে জিনিসটি চাইছেন তা যদি পেয়ে যান, ঠিক তখনই আরেকটি জিনিসের অভাব আপনার সামনে এসে হাজির। ধরুন আপনি একটি একতলা বাড়ি তৈরি করতে চান, ঠিক এ মুহূর্তে বাড়িটি তৈরী করার জন্য আপনার সামর্থ্য নেই। পরবর্তীতে কোন সময় যেভাবেই হোক আপনার বাড়িটি তৈরী করে ফেললেন।

বাড়িটি তৈরী করার পর সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন, আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। সত্যি কি তাই ? আমি বলবো, অবশ্যই না। আমি নিশ্চিত, এর কিছু দিনের মধ্যেই আপনার ভেতর আরেকটি সুপ্ত বাসনা জন্ম নিয়েছে, সেটি হলো দ্বিতীয় তলাটা তৈরী করার। অথবা বাড়ি হলো এবার একটা গাড়ি হলে আর কিছু চাই না আমার। এটা শুধু আপনার বেলায় নয়, সবার মধ্যেই এমন প্রবনতা লক্ষ করা যায়।

যখন মনুষ্যত্ব জেগে ওঠে তখন অভাব আর স্বভাবের সম্পর্ক একরৈখিক থাকে না। অভাবের সময় ধৈর্যধারণ করার চেয়ে মহৎ কাজ আর কিছু নেই, ধৈর্যচ্যুতি ঘটলে ধ্বংস অনিবার্য।
যে ব্যক্তি কঠিন অভাবে জর্জরিত; সে মানুষের সামনে প্রয়োজন পূরণের ইচ্ছা প্রকাশ করলে এ অভাব দূর হবে না। আর যে ব্যক্তি তার অভাবের কথা শুধু আল্লাহর কাছে বলে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট। হয় তাকে তাড়াতাড়ি মৃত্যু দিয়ে অভাব থেকে মুক্তি দিবেন অথবা তাকে কিছু দিনের মধ্যে ধনী বানিয়ে দেবেন

অভাবের পরিসমাপ্তি তখনই ঘটবে, যখন আমোদের মৃত্যু হবে। সব চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মিটে গেলে তো জীবনটাই শেষ।সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণের আশায় কারো কাছে ভিক্ষা না করে মহান আল্লাহর কাছে প্রয়োজনের কথা পেশ করা। মহান আল্লাহই বান্দার সব অভাব পূরণ করে দেবেন।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে  এই কথাগুলোর  উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন


প্রজন্মনিউজ২৪/কেএমআই

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ