আপনি কোন পোশাক পড়বেন ,তা নির্ধারণ করুন নিজেই

প্রকাশিত: ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০৬:০৩:১৫

আপনি কোন পোশাক পড়বেন ,তা নির্ধারণ করুন নিজেই

পোশাক এমন একটি চাহিদা যা আপনাকে আবৃত করে। আপনাকে বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করবে আপনার পোশাক। আপনার চিন্তা চেতনাকে পরিবর্তন করবে। একজন ব্যক্তির পোশাক দেখলে বোঝা যায় সে কোন মনোভাবের,তার চিন্তাধারা কেমন। তার পরিচয়ের অর্ধেক জানা যায় তার পোশাকের মাধ্যমে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে,সে কি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ত, আর রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ত হলে সে কোন ধারার রাজনীতি করে, সে কি বামপন্থী নাকি ডানপন্থী ইত্যাদি। তাছাড়া সে জব করে নাকি শ্রমিক ,ড্রাইভার ,কুলি,মওলানা,সামরিক ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি চেনা যায়।

আপনি কেমন পোশাক পড়বেন?

পোশাকের বিষয়টি সতন্ত্র। এখানে স্বাধীনতা রয়েছে। নিজের ইচ্ছেমতো পোশাক পরিধান করতে পারবেন। আপনি পোশাক পড়লেন কিন্তু সেটি দেখতে আপনার কাছেই সংকোচ বোধ হচ্ছে। এরকম প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। আসলে এটা কোনো সমস্যাই নয়। কারণটা আপনি একটু ভেবে দেখুন। এর সমাধান আপনিই করতে পারবেন। একটা উদাহরণ দিয়ে বলি,পৃথিবীতে অনেক অভিনেতা রয়েছেন, যারা ছোট পোশাক বা হালকা ছেড়া প্যান্ট পড়েন, তাদেরকে কেউ কখনো বিদ্রুপ করে না। বরং অনেকে তাদেরকে ফলো করে সেটা নিজের বাস্তব জীবনে প্রতিফলন করার চেষ্টা করে থাকেন। অথচ আপনি আপনার মনের মতো পোশাক পড়ে বের হলে দেখবেন অনেকে আপনাকে বিদ্রুপ করে, তখন আপনি সংকোচ বোধ করেন। নিজেকে ছোট ভাবেন। এটি ঠিক নয়। বরং অন্যের কথায় কান না দিয়ে আপনি আপনার মতো করে ভাবেন। নিজের রাজ্য নিজেকে রাজা ভাবুন। তবে হ্যা, এমন পোশাক পড়বেন না যাতে সত্যিকারই শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়।

আপনি লক্ষ্য করুন পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তিদের।

বিখ্যাত ও অত্যন্ত সফল অনেক ব্যক্তিদের মধ্যে বেশ প্রচলিত একটি অভ্যাস লক্ষণীয়, তা হচ্ছে প্রায় নিয়মিতই একই ধরনের পোশাক পরিধান করা। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। আপনিও চেষ্টা করতে পারেন এমন পোশাক যাতে সেই পোশাকও একদিন মডেল হতে পারে।

অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস প্রতিদিন প্রায় একই পোশাক পরতেন, আর তা হচ্ছে, কালো টার্টলনেক, নীল জিন্স এবং নিউ ব্যালেন্স স্নিকার্স। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ধূসর বা নীল স্যুট বেশি পরেন। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ বেশিরভাগ সময়ই তার আইকনিক ধূসর টি-শার্ট পরেন। ফিল্ম ডিরেক্টর ক্রিস্টোফার নোলান একটি নীল শার্টের উপর কালো, সরু-ল্যাপেল জ্যাকেট এবং কালো ট্রাউজারের সঙ্গে প্রতি দিন পরার মতো জুতা ব্যবহার করেন৷ ডক্টর ড্রে নামে পরিচিত বিখ্যাত সংগীতশিল্পী আন্দ্রে ইয়াং জানান তিনি প্রতিদিন একই জুতা পরেন। বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন একই ধূসর স্যুটের বিভিন্ন প্রকরণ ব্যবহারের জন্যে পরিচিত ছিলেন। ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ব্রিটিশ বিলিয়নিয়ার, রিচার্ড ব্র্যানসন প্রতিদিন একই জিন্স পরেন। এছাড়া সনি মিউজিকের ক্রিয়েটিভ হেড মাতিলদা কাহল, হাফিংটন পোস্টের কো-ফাউন্ডার আরিয়ানা হাফিংটন, বিলিয়নিয়ার জন পল ডিজোরিয়াসহ বেশ অনেকের মধ্যেই এই একই ধরনের পোশাক পরিধানের অভ্যাসটি লক্ষ্য করা যায়।

একজন মনোবিজ্ঞানীর কথা।

একই ধরনের পোশাক পড়ার পিছনে রয়েছে একটি বেশ স্মার্ট কৌশল। এটা তাদের কীভাবে সাহায্য করে থাকে এটা জানবো মনোবিজ্ঞানী ও ইউসি বার্কলে হাসের ভিজিটিং অধ্যাপক  ব্যারি শোয়ার্টজের কাছ থেকে।

মনোবিজ্ঞানী ও ইউসি বার্কলে হাসের ভিজিটিং অধ্যাপক ব্যারি শোয়ার্টজ বলেন, যুক্তিটি বেশ সহজ। এটি তাদের দৈনিক ভিত্তিতে নেওয়া সিদ্ধান্তের সংখ্যা হ্রাস করে। যাতে তারা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর জন্য শক্তি সঞ্চয় করতে পারে। ডিসিশন ফ্যাটিগ বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্লান্তি একটি বাস্তব বিষয়।  তিনি ২০০৪ সালে তার বই 'দ্য প্যারাডক্স অফ চয়েস' এ লিখেছেন কীভাবে খুব বেশি বাছাই বা নির্বাচন আমাদের চিন্তাকে অসার করে দিতে পারে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে।

ব্যারি শোয়ার্টজ আরও বলেন, প্রতিদিন আমাদের মস্তিষ্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শক্তির একটি সীমিত অংশ নির্দিষ্ট থাকে। আমরা প্রতিদিন হাজার হাজার সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে সেই সীমিত অংশটি ব্যবহার করতে থাকি। আর যখন তা মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে তখনই আমাদের মধ্যে ডিসিশন ফ্যাটিগ দেখা দেয়।

বিখ্যাত ব্যাক্তিদের এ নিয়ে ভাবনা।

ভ্যানিটি ফেয়ার ২০১২-তে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন, 'আপনি দেখতে পাবেন আমি কেবল ধূসর বা নীল স্যুট পরি। আমি এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত কমানোর চেষ্টা করছি। তাই আমি কি খাচ্ছি বা কি পরছি সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাই না। কেননা আমার আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয়।'

জাকারবার্গ প্রায়শই তার বিখ্যাত ধূসর টি-শার্ট পরেন। ২০১৪ সালে একটি পাবলিক প্রশ্নোত্তর সেশনের সময়  তিনি বলেছিলেন, 'আমি আমার জীবনকে সত্যিই পরিষ্কার রাখতে চাই। যাতে আমি যেকোনো বিষয়ে যতটা সম্ভব কম সিদ্ধান্ত নিতে পারি।'

আমার কথা।

এখানে তো দেখলেনই যে, বিখ্যাত ব্যাক্তিরা তাদের নিজের সিদ্ধান্তের উপর অটল থাকেন। এজন্যই বলি সবসময় নিজের সিদ্ধান্তের উপর অটল থাকেন। এতে আপনার মস্তিষ্ক দুই ভাবনায় দ্বিধাবিভক্ত থাকবে না।

কী করবেন আর কী করবেন না এমন ছোট ছোট বিষয় নিয়ে আপনি যদি  সংকোচ বোধ করেন, তাহলে দিন যত এগিয়ে যাবে ততই আপনি মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। এজন্য বলি এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করা ছেড়ে দিন। আর যে সময়টাতে আপনি এসব বিষয় নিয়ে ভাবেন সে সময় আপনার মস্তিষ্ক মুক্ত ও সুস্থ থাকবে, তখন আপনি অন্য বিষয় নিয়ে ভাবতে পারবেন।

লিখেছেন: রাব্বি আল রাহিদ
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ।


প্রজন্মনিউজ২৪/এআর

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ