৫ কোটি টাকার যানবাহন কেনার প্রস্তাব!

প্রকাশিত: ০৭ অক্টোবর, ২০২০ ০৬:১০:৫০

৫ কোটি টাকার যানবাহন কেনার প্রস্তাব!

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের জেলা কক্সবাজার। কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পরিমণ্ডলে এ জেলা গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় অর্থনীতিতে এর অবদান আরও বাড়ানোর পথ সুগম করতে গ্রহণ করা হচ্ছে কক্সবাজার জেলার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন’ প্রকল্প।

এ প্রকল্পে একটি জিপ, ২টি ডাবল কেবিন পিকআপ, ১টি মাইক্রোবাস, ৫টি মোটরসাইকেল এবং ২টি স্পিডবোট কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে, যেজন্য খরচ হবে চার কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে কেন ৫ কোটি টাকার যানবাহন কেনা প্রয়োজন- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট (সিএসসি)। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশলী) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আনোয়ার উল ইসলামও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উপ-নগর পরিকল্পনাবিদ জাহাঙ্গীর আলী  বলেন, এটা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জানার কথা। আপনি তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ সূত্র বলছে, চলতি মাসেই প্রকল্পের ওপর মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যানবাহন কেনার এ খরচ প্রস্তাবে একমত নয় পরিকল্পনা কমিশন।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার জেলার মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে খরচ হবে ২০৯ কোটি ৯৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। প্রকল্পের পটভূমির ব্যাখ্যায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতটি কক্সবাজার শহর থেকে টেকনাফ এবং বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের শেষ বিন্দু পর্যন্ত বিস্তৃত। মনোমুগ্ধকর ল্যান্ডস্কেপিং, পাহাড়, নদী, বন সব মিলিয়ে এটি একটি অন্যতম পর্যটন স্থান কক্সবাজার। কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পরিমণ্ডলে এ জেলা গুরুত্বপূর্ণ।

জাতীয় অর্থনীতিতে কক্সবাজারের আরও অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। ভিশন ২০২১ এবং ভিশন ২০৪১ অর্জনের লক্ষ্যে মেরিন ড্রাইভ, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেল সংযোগ, মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল, বিদ্যুৎকেন্দ্র ইত্যাদি বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দ্রুত বিকশিত হবে, যা কক্সবাজার অঞ্চলের ভূমি ব্যবহারকে প্রভাবিত করবে।

কক্সবাজারের একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের জন্য ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই পরিপত্র জারি করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। পরে একনেক সভায় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও কক্সবাজারের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।

প্রকল্পের ব্যয় প্রস্তাবে আরও যত আপত্তি

যানবাহন ক্রয় বাবদ খরচের পাশাপাশি প্রকল্পের আরও বেশকিছু ব্যয় প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। কমিশন বলেছে, প্রকল্প দলিলে কনসালট্যান্সি, সার্ভে ও ডাটা কালেকশনের আওতায় রিপোর্ট, ম্যাপস, ড্রয়িং, ফিজিক্যাল মডেল এবং ওয়েবজিআইএস বেজড সিস্টেমের সংস্থান থাকলেও পৃথকভাবে প্রিন্টিং, বাইন্ডিং বাবদ ৮৮ লাখ এবং পাবলিকেশন বাবদ এক কোটি ৬৯ লাখ ২০ হাজার টাকার সংস্থান করা হয়েছে, তার ওপর মৌজা সিট ক্রয় বাবদ পৃথকভাবে পাঁচ লাখ ৪০ হাজার টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। স্যাটেলাইট ইমেজ ক্রয় এবং ফটোগ্রামেটিক ওয়ার্কসের জন্য দুই কোটি ৯৪ লাখ ৬২ হাজার টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।

এদিকে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অফিস থাকা সত্ত্বেও প্রকল্প বাস্তবায়নে ইউনিট অফিস ভাড়া বাবদ ৯৯ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। অফিস ভাড়ার সংস্থান বাদ দিয়ে উল্লিখিত খাতের ব্যয় প্রাক্কলন যৌক্তিকভাবে কমানো বাঞ্ছনীয় বলে মত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

করোনা পরিস্থিতিতে প্রকল্প কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণ বাবদ এক কোটি ৯৮ লাখ এবং বিদেশে ট্রাভেল ও ট্রান্সফার বাবদ প্রস্তাবিত ৫৮ লাখ টাকার প্রস্তাবও প্রকল্প থেকে বাদ দেয়ার কথা বলেছে কমিশন।

তিন বছর মেয়াদি আলোচ্য প্রকল্পে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ (যানবাহন, ফার্নিচার, কম্পিউটার ও মেশিনারি ইক্যুইপমেন্ট) বাবদ তিন কোটি ৩৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, পেট্রল, গ্যাস, লুব্রিকেন্ট বাবদ ৬০ লাখ, সেমিনার-কনফারেন্স ও কনসালট্যাশন বাবদ তিন কোটি ৫৪ লাখ ৬০ হাজার এবং বিভিন্ন কমিটির সম্মানি বাবদ ৯২ লাখ ৬৪ হাজার টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে, যা অধিক মর্মে প্রতীয়মান হয় কমিশনের সভায়।

এতে বলা হয়, এসব ব্যয় যৌক্তিকভাবে হ্রাস করা আবশ্যক। এছাড়া কম্পিউটার এবং মেশিনারিজ ও অফিস ইক্যুইপমেন্টের একক ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমানো বাঞ্ছনীয় বলেও জানানো হয় সভায়।

অর্থ বিভাগের জনবল কমিটির সুপারিশে তিনজন অফিস সহায়ক এবং তিনজন ড্রাইভার রাখার কথা হলেও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিট সেটআপে চারজন ড্রাইভার এবং চারজন অফিস সহায়ক উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অর্থ বিভাগের সুপারিশ না থাকলেও একজন উপ-প্রকল্প পরিচালক এবং একজন প্রকল্প ব্যবস্থাপক অতিরিক্ত/আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগের উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবে। এ বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সভাকে অবহিত করতে পারে। কম্পিউটার অপারেটরের বেতন গ্রেড ১৪ এর পরিবর্তে অর্থ বিভাগের সুপারিশ অনুযায়ী গ্রেড ১৬ হওয়া প্রয়োজন। অফিস সহায়ক ও ড্রাইভারের শিক্ষাগতযোগ্যতা আউটসোর্সিং নীতমালা অনুযায়ী নির্ধারিত হওয়া আবশ্যক বলেও সভায় জানায় পরিকল্পনা কমিশন।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে সার্ভে ও ডাটা কালেকশন, কনসালট্যাশন, সেমিনার ও কনফারেন্স, দেশীয় ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, মৌজা সিট ও স্যাটেলাইট ইমেজ ক্রয়, জিআইএস ও প্ল্যানিং ল্যাব স্থাপন, সার্ভে ইক্যুইপমেন্ট ক্রয়, কম্পিউটার, ক্যামেরা ও এক্সেসরিজ ক্রয়, মেশিনারিজ, অফিস ইক্যুইপমেন্ট ও আসবাবপত্র ক্রয় এবং যানবাহন কেনা ইত্যাদি।

প্রজন্মনিউজ২৪/ফরিদ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ