পেঁয়াজের কেজি সকালে ১৪০ বিকেলে ২০০

প্রকাশিত: ০৪ জানুয়ারী, ২০২০ ১১:২১:৪৬ || পরিবর্তিত: ০৪ জানুয়ারী, ২০২০ ১১:২১:৪৬

পেঁয়াজের কেজি সকালে ১৪০ বিকেলে ২০০

টানা তিন মাস দেশবাসীকে কাঁদিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে কিছুটা কমে আসছিল পেঁয়াজের দাম। মওসুম শুরু হওয়ায় দাম এখন নি¤œমুখী হওয়ারই কথা। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ আবার অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। দুই দিন আগের চেয়ে কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে গতকাল সকালে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল দেশী নতুন পেঁয়াজ। দুপুরের পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। এক লাফে ২০০ টাকায় ওঠে হঠাৎ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা পণ্যটির দাম।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, পেঁয়াজের উৎপাদন ও আমদানি নিয়ে গত কয়েক দিনে মন্ত্রীদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য বাজরের অস্থিরতার পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। পেঁয়াজের পাশাপাশি নতুন করে বেড়েছে সয়াবিন তেল, আদা, রসুন ও চিনিসহ বেশকিছু নিত্যপণ্যের দাম। অন্য দিকে শীতের এই ভরা মওসুমেও বাজারে সবজির দাম অস্বাভাবিক।

রাজধানীর খিলগাঁও আনসার কোয়ার্টার এলাকার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নজরুল। ভ্যানে পেঁয়াজের পাশাপাশি আদা, রসুন ও আলু বিক্রি করেন তিনি। গতকাল শুক্রবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, দেশী নতুন পেঁয়াজ ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন তিনি। নজরুল জানান, আগের দিন এ পেঁয়াজ কেজিতে ২০ টাকা কম দরে বিক্রি করেছিলেন তিনি। কিন্তুপাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু দুপুরের পর একই ভ্যানওয়ালার কাছে গিয়ে দেখা যায়, দেশী নতুন পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে।

কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে নজরুলের দাবি, পাইকারি দোকান থেকে মোবাইল ফোনে জানানো হয়েছে যে, বাজারে দাম বেড়ে গেছে। তাই বাড়িয়ে বিক্রি করতে হবে। একই দামে কেনা পেঁয়াজ সকালের চেয়ে বিকেলে কেজিতে ৬০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি করার কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতা নজরুল বলেন, দাম হঠাৎ কমে গেলে তো আমাদের কেনা দামের চেয়ে কম দামে লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হয়। তিনি জানান, সামনের দিনগুলোতে দাম আরো বাড়বে বলে পাইকাররা জানিয়েছেন।

রোজার আগেই ২ লাখ টন আমদানি : তোফায়েল
বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে আসন্ন রমজানের আগেই চারটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দুই লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। তিনি বলেন, সিটি গ্রুপ আমদানি করবে ৫০ হাজার টন, মেঘনা গ্রুপ ৫০ হাজার, এস আলম গ্রুপ ৫০ হাজার এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টিসিবির মাধ্যমে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।

এ ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও আমদানি করবে। কোনো সমস্যা হলে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে সরকার। আসন্ন রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ, সরবরাহ, আমদানি, মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির উপস্থিতিতে ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিদের নিয়ে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

বিপরীত কথা রূপরেখায়
এর আগে পেঁয়াজ সমস্যা যখন চরমে ঠিক তখনই পেঁয়াজে কিভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা যায় তার একটা রূপরেখা দিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ। পেঁয়াজ নিয়ে অস্থিরতার মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এক সভার পর সাবেক এ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত গরু বন্ধ করে দিলো। আমাদের দেশের মানুষ গরু পালতে শুরু করল, আমরা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন পেঁয়াজের দাম বাড়ল। আমরা মনে করি, আমাদের দেশে সাধারণ মানুষ বাড়ির খোলা জায়গায় পেঁয়াজ চাষ করবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে ইনশাআল্লাহ পেঁয়াজ রফতানিকারক দেশে পরিণত হবো।

আমদানি নয় উদ্বৃত্ত থাকবে : কৃষিমন্ত্রী
পেঁয়াজ আমদানি সংক্রান্ত তোফায়েল আহমেদের ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই বিপরীত কথা বললেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের উপস্থিতিতে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পেঁয়াজের জন্য আমরা ভারতের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। তারা হঠাৎ করে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিলে আমরা বিপদে পড়ে যাই। এর পর থেকে শুধু ভারতের ওপর নির্ভরশীল থাকলেই হবে না। আমাদের কাছে পেঁয়াজ উৎপাদনের যে প্রযুক্তি আছে, তাতে আমরা পেঁয়াজ উৎপাদনে উদ্বৃত্ত থাকব।

সমস্যা হচ্ছে, কৃষকরা পেঁয়াজ উৎপাদন করতে চান না। সে কারণে আমরা বাণিজ্যমন্ত্রীকে বলেছি, এ বছর মৌসুমে যেন পেঁয়াজ আমদানি করা না হয়। কৃষক যেন পেঁয়াজ উৎপাদন করে লাভ করতে পারেন। এ বছর দেশে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত থাকবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।

ভিন্ন অবস্থান বাণিজ্যমন্ত্রীর

পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং দাম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সম্প্রতি সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সঙ্কট থেকে শিক্ষা নিয়ে সমস্যাকে সম্ভাবনায় রূপান্তর করতে হবে। আগামী বছর থেকে ৩০-৩২ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদনের পরিকল্পনা করতে হবে। এজন্য পেঁয়াজের ক্ষেত্রে শূন্য সুদে ঋণ দেয়া যায় কি না চিন্তা করছি। এখন ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হয়। যেভাবেই হোক কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। সংরক্ষণ সক্ষমতা বাড়াতে হিমাগার তৈরির ত্বরিত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

পাশাপাশি ভর মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখে কৃষকদের জন্য ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, বর্তমানে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ মেট্রিক টন। ১৬ থেকে ১৭ লাখ মেট্রিক টন দেশে উৎপাদিত হয়। বাকি ৮ থেকে ৯ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করা হয়। পেঁয়াজ আমদানির ৯৫ শতাংশের বেশি আসে ভারত থেকে।

বেড়েছে তেল-চিনির দাম
ঢাকার বাজারে চলতি সপ্তাহে নতুন করে দাম বেড়েছে ভোজ্যতেল, চিনি, রসুন ও আদার। সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে লিটারে ৮ টাকা বেড়েছে। এর আগে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত খোলা সয়াবিন তেলের দামও লিটারপ্রতি ৮ টাকা ও পাম সুপার তেলের দাম ১৬ টাকার মতো বেড়েছে। বাজেটের পর এখন পর্যন্ত খোলা চিনির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১২ টাকা। চিনি এতদিন ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও গতকাল ৬৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

ভোজতেলের দাম বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে সিটি গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার বিশ্বজিত সাহা জানিয়েছেন, শীতের সময় জমে যায় বলে পামতেলের ব্যবহার ও বিক্রি কমে যায়। চাপ পড়ে সয়াবিনের ওপর। অপর দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে সয়াবিনের দাম। তাই দেশেও দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশী বাজারেও কমবে বলে জানান তিনি।

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ