লেখাপড়ায় শিশুদের বাড়তি চাপ না দেওয়ার পরামর্শ- হাসিনা

প্রকাশিত: ১৪ মার্চ, ২০১৯ ১১:০৬:৩৬

লেখাপড়ায় শিশুদের বাড়তি চাপ না দেওয়ার পরামর্শ- হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষাকে আকর্ষণীয় করতে শিক্ষার্থীদের মেধা ও মননের যথাযথ বিকাশে শিশু অবস্থায় তাদের পড়াশোনায় অতিরিক্ত চাপ না দিতে অভিভাবক, শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি এটুকুই বলবো, কোনো মতেই যেন কোমলমতি শিশুদের বাড়তি চাপ না দেয়া হয়। তাহলেই দেখবেন তারা একটা আলাদা শক্তি পাবে। আর তাদের শিক্ষার ভিতটা শক্ত হবে।’ লেখাপড়ায় কোমলমতিদের কঠোর শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা ‘এক ধরনের মানসিক অত্যাচার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিশুরা স্কুলে যাবে এবং হাসি-খেলার মধ্যদিয়েই লেখাপড়া করবে। তারা তো আগে থেকেই পড়ে আসবে না, পড়ালেখা শিখতেই তো সে স্কুলে যাবে’, যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের বেশি বেশি সম্পৃক্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী শিশুদের পাঠদান সম্পর্কে নিজস্ব অভিব্যক্তি সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে গিয়ে বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশেই ৭ বছর আগে শিশুদের স্কুলে পাঠায় না। কিন্তু আমাদের দেশে ছোটবেলা থেকেই বাচ্চারা স্কুলে যায়।

সেখানে অনবরত ‘পড়’, ‘পড়’, ‘পড়’ বলা বা ধমক দেয়া হলে শিক্ষায় তাদের আগ্রহ কমে যাবে, ভীতির সৃষ্টি হবে, বললেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সময় দেখি প্রতিযোগিতা শিশুদের মধ্যে না হলেও বাবা-মায়ের মধ্যে একটু বেশি হয়। এটা আমি অসুস্থ প্রতিযোগিতা মনে করি।’ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ‘প্রাথমিক শিক্ষা পদক’ বিতরণ করেন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। প্রাথমিক শিক্ষা যেন আরও উন্নত এবং মানসম্মত হয় তার প্রতি দৃষ্টি রাখছে সরকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সকল শিশুর মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে ২০১৮-২০২৩ মেয়াদের জন্য ৩৮ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকার চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।’

শিক্ষায় অর্থ ব্যয়ে সরকারের কার্পণ্য নেই উল্লেখ করে তিনি সরকারের শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের কল্যাণমূলক কার্যক্রমও তুলে আনেন। তিনি বলেন, ‘শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু, ঝরেপড়া রোধকল্পে বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে স্কুলের পোশাকসহ সব শিক্ষা উপকরণ প্রদান, শিক্ষা ভাতা ও ক্ষেত্র বিশেষে পরীক্ষার ফি প্রদান করাসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য তাদের নিজেদের ভাষায় শিক্ষা প্রদানের উদ্যোগ এবং অন্ধদের জন্য ব্রেইল বই ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্যও বই প্রদান এবং হেয়ারিং এইড প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশে মিনি স্টেডিয়াম ইউনিয়ন পর্যায়ে করে দেয়ারও উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রতিটি স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক চর্চায় তার সরকার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবেই শিক্ষাকে সার্বজনীন ও বহুমুখী করে দিচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন।

তিনি স্কাউটিং এবং কাবিং যেন সব বিদ্যালয়ে চালু হয় সে বিষয়ে দৃষ্টি দিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতি তাগিদ দেন। বলেন, সরকার শিক্ষকদের মর্যাদা, বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে যাতে তারা ভালোভাবে শিক্ষা দিতে পারে। প্রধানমন্ত্রী ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করে এজন্য শিশুদের চাপ না দেয়ার পরামর্শ দেন। প্রাথমিকে ভর্তিতে ছাপানো প্রশ্ন দেয়ার সমালোচনা করেন তিনি।তিনি স্কুলে ভর্তি হওয়াকে শিশুদের অধিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিশুরা যেন বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’

প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাকে আকর্ষণীয় করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি এ সময় ঝরেপড়া রোধে তার সরকারের বৃত্তি ও উপবৃত্তি প্রদান, ১ কোটি ৪০ লাখ মায়ের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকা পৌঁছে দেয়াসহ সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি এবং স্থানীয় উদ্যোগে স্কুল ফিডিং কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি স্কুল দরকার হলে টিফিন তৈরি করে দেবে, না হলে বাচ্চার মায়েরা তাদের সন্তানের জন্য টিফিন তৈরি করে দেবে। এটা প্রত্যেক মা এবং অভিভাবককেই উদ্যোগ নিতে হবে। বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি চালুর ফলে অনেক জায়গায় ঝরেপড়া বন্ধ হয়ে গেছে।

সরকারের পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা শিক্ষা জীবনের শুরুতেই একটি সনদপত্র পাওয়ায় তাদের যেমন শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে তেমনি পরীক্ষা ভীতিও দূর হচ্ছে। শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন প্রজন্ম গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী আজকের শিশুদের আগামীতে দেশের নেতৃত্ব প্রদানের যোগ্যতা নিয়ে গড়ে ওঠার পরামর্শ দেন।

প্রজন্মনিউজ২৪/তারেক আজিজ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ