শাজাহান খানের নেতৃত্বাধীন ধর্মঘটের নামে নৈরাজ্য

প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর, ২০১৮ ১০:৩৬:৫৩

শাজাহান খানের নেতৃত্বাধীন ধর্মঘটের নামে নৈরাজ্য

শাজাহান খানের  নেতৃত্বাধীন   বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের আট দফা দাবিতে সারাদেশে ধর্মঘটের নামে নজিরবিহীন নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে পরিবহন শ্রমিকরা। কর্মবিরতির মাধ্যমে যাত্রীবাহী বাস ও মালবাহী ট্রাক না চালানোর ঘোষণা দিয়ে গতকাল তারা প্রাইভেট কার, স্কুল-কলেজের বাস এমনকি এ্যাম্বুলেন্স চলাচলেও বাধা দিয়েছে।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে বেশ প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল চালকের মুখে পোড়া ইঞ্জিন ওয়েল, কালো রঙ ও আলকাতরা মাখিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। চালকের সাথে তারা প্রাইভেট কার আটকে তাতেও ইঞ্জিন ওয়েল মাখিয়ে দিয়েছে। হেনস্থা করা হয়েছে রিকশা ও অটোরিকশার যাত্রীদেরকেও। নারায়ণগঞ্জে কলেজবাস থামিয়ে ছাত্রীর শরীরেও কালি মাখিয়ে লাঞ্ছিত করেছে পরিবহন শ্রমিকরা।

লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। নৌপরিবহণ মন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা এই ধর্মঘটে সারাদেশেই মানুষকে জিম্মি করে নৈরাজ্য সৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। যদিও এ বিষয়ে শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি এ বিষয় নিয়ে কোনো কথা বলতে চান না।

 

সম্প্রতি জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’-এর কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ আট দফা দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দেয় শাজাহান খানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। রবিবার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গণপরিবহন শ্রমিকদের ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু হয়েছে। এ ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নৈরাজ্যের ঘটনা ঘটেছে।

বিশেষ করে নগরীর যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি, অটোরিকশা ও রিকশা থেকে যাত্রীদের নামিয়ে হেনস্থা করা হয়েছে। এ সময় প্রাইভেটকার চালকদের মুখে কালো রঙ, পোড়া মবিল ও আলকাতরা মেখে দিতে দেখা গেছে পরিবহন শ্রমিকদের। এসময় ব্যক্তিগত গাড়িও চলতে বাধা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, পরিবহন ধর্মঘটের প্রথম দিনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রাজধানীসহ সারাদেশে চরম জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।

অচল হয়ে পড়েছে জীবন যাত্রা। পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে গোটা দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। রাজধানীর আন্তঃনগর টার্মিনালগুলো থেকে কোনো বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। ঢাকায়ও বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। বিআরটিসির দুএকটি বাস চললেও নগরবাসীকে নির্ভর করতে হচ্ছে অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন সার্ভিস, রিকশা বা পায়ের উপর। সড়কে পরিবহন শ্রমিকদের বাড়াবাড়ি ছিল চরম পর্যায়ে।

মোটরসাইকেলের চালক, ব্যক্তিগত গাড়ির চালক কিংবা আরোহীদের মুখে পোড়া মবিল মেখে দিচ্ছে ধর্মঘটের সমর্থনে রাস্তায় নামা শ্রমিকরা। কালি মেখে দেয়া হয় গাড়ি, কলেজগামী বাস ও বাসের শিক্ষার্থীদের গায়ে। এমনকি কালির হাত থেকে মুক্তি পায়নি রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সও। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এমন চিত্র দেখা গেলেও পুলিশকে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ। পরিবহন নেই। জনদুর্ভোগ দেখারও যেনো কেউ নেই-এমন মন্তব্য সাধারন ভূক্তভোগিদের। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধনসহ আট দফা দাবিতে গতকাল রোববার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।

অন্যদিকে প্রধান সড়কগুলোতে কিছু রিকশা চলাচল করলেও অফিসগামী যাত্রী আর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের যানবাহনের আশায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে প্রতিটি মোড়ে। রাজধানীতে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সকাল থেকেই সাধারন মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যেই অফিসে আসা এবং অফিস থেকে বাসায় ফেরাসহ দুর্ভোগের মধ্য দিয়েই দিনটি পাড় করেছে। অনেকেই গণপরিবহন না পেয়ে ও রিকশার ভাড়া কয়েকগুন বেশি হওয়ায় মাইলের পর মাইল পায়ে হেটে গন্তর্ব্যে পৌছান।

গতকাল সকালে সরজমিন রামপুরা, মালিবাগ, খিলগাঁও, আব্দুল্লাহপুর, জসিমউদ্দিন রোড, এয়ারপোর্ট, খিঁলক্ষেত, বনানী, মহাখালী, ফার্মগেট, মতিঝিল, যাত্রাবড়ি, কারওয়ানবাজার ও সাতরাস্তাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অফিসগামী শত শত যাত্রীকে গাড়ির অপেক্ষায় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যেতেও বিপাকে পড়েন অনেক অভিভাবক। এক হাতে বেগ অন্য হাতে সন্তানকে নিয়ে হেটে স্কুলে ছুটছেন মা এমন দৃশ্য গতকাল রাজধানীর বেশ কয়েক জায়গায় দেখা গেছে। অফিস সময় হওয়ায় অনেকে পাগলের মতো হন্য হয়ে খুঁজছে গাড়ি। কোথাও কোনো পরিবহন না পাওয়ায় কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে সিএনজি, রিকশায় বা ভ্যানে করে গন্তব্যস্থলে যাচ্ছেন। রাজধানীর বাইরে দেশের সকল জেলা শহরেরও একই চিত্র দেখা গেছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এ মুহূর্তে পরিবর্তনের সুযোগ নেই। পরিবহন শ্রমিকদের দাবির বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এ নিয়ে পরবর্তী সংসদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

মতিঝিলের ব্যবসায়ী সৈয়দ মুজাহিদুল ইসলাম জানান বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের দাবি থাকতে পারে কিন্তু তাই বলে এভাবে সাধারণ মানুষের মুখে, গায়ে কালি মেখে যান চলাচল বন্ধ রেখে তারা ভোগান্তি সৃষ্টি করতে পারেন না। সাধারন মানুষ এখন জিম্মি দশার মধ্যে জীবন যাপন করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি রুস্তম আলী খান বলেন, শ্রমিক ফেডারেশন যে কর্মসূচি পালন করছে সেখানে আমাদের পক্ষ থেকে, মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সমর্থন জানানো হয়েছে। আশা করছি সরকার বিষয়টি বিবেচনায় নেবে। পাস হওয়া আইনের কিছু ধারা অবশ্যই সংশোধন জরুরি।

ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের দফতর সম্পাদক ইব্রাহীম দীপু বলেন, চালকরা কখনো পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা দিতে পারবে না। এটা কেমন আইন? চালকের যদি পাঁচ লাখ টাকাই থাকতো তবে সে আর চালক থাকতো না। আর দুর্ঘটনা ঘটলেই চালক-হেলপারের দোষ হতে পারে না। ফাঁসির দড়ি সামনে রেখে কখনো গাড়ি চালানো যায় না।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হোসেন বলেন, সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। সংসদের শেষ অধিবেশন চলছে। এই সুযোগটাই নেয়ার চেষ্টা চলছে। কর্মবিরতির নামে অচাবলস্থা তৈরি করা হয়েছে, যাত্রীসাধারণকে মারধর, যেসব পরিবহন চলছে তাতে ভাঙচুর করা হয়েছে। ব্যক্তিগতও গাড়িও চলতে বাধা দেয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা কোনো ভূমিকা পালন করতে দেখছি না। বলা যায় নির্বিকার।

সকালে রাজধানীর সায়েদাবাদ-শ্যামলী-কল্যাণপুর-গাবতলী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব বাস কাউন্টারই বন্ধ। দুই-একটি কাউন্টার খোলা থাকলেও বন্ধ রয়েছে টিকিট কেনাবেচা। টিকিট না পেয়ে যাত্রীদের ফেরতও যেতে দেখা গেছে।

গতকাল সকালে শ্যামলী এলাকার হানিফ কাউন্টারে এসে টিকিট না পেয়ে নিরুপায় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সুমন আহমেদ। গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও যাবেন তিনি। তিনি বলেন বলেন, পারিবারিক একটা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য রাতে বাড়ি যেতে চেয়েছিলাম। এ সময়টাতে সাধারণত অগ্রিম টিকিট কাটতে হয় না, তাই সকালে টিকিটের জন্য এসে দেখি বাস বন্ধ। শুনলাম আগামীকালও বন্ধ থাকবে বাস। এখন কিভাবে কী করবো বুঝতে পারছি না।

মহাখালী বাস টার্মিনালে টিকিট না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেন নেত্রকোনার জামাল আহমেদ। তিনি বলেন, একটা কাজে গতকাল ঢাকা এসেছিলাম। আজ বাড়ি যাবো, কিন্তু কোনো বাসই নেই। ঢাকায় আমার তেমন কোন আত্মীয়-স্বজনও নেই। গত রাতে হোটেলে ছিলাম এখন কি করব বুঝতে পারছি না। সবাই নিজেদের কথাই চিন্তায় ব্যস্ত। সাধারন মানুষের দুর্ভোগের কথা কেউ চিন্তা করে না বলে মন্তব্য করেন জামাল আহমেদ।

চালকের মুখে পোড়া মবিল

চলমান পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যে রাজধানীর সড়কে গাড়ি বের করলেই চালকদের মুখে পোড়া মবিন মেখে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। ব্যক্তিগত গাড়ির চালকসহ মোটরসাইকেল চালকরাও রেহাই পাচ্ছে শ্রমিকদের পোড়া মবিল থেকে। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠেছে। জানা যায়, রাজধানীর বেশ কিছু জায়গায় বিশৃঙ্খল আচরণ করে পরিবহন শ্রমিকরা। এ সময় তারা দলবেঁধে ব্যক্তিগত গাড়ি চালকদের ওপর চড়াও হয়। গাড়ি বের করার অপরাধে তাদের শরীরে ও মুখে পোড়া মবিল ঢেলে। ব্যক্তিগত গাড়ি চালক ছাড়াও সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল চালকদের ওপরও চড়াও হয় শ্রমিকরা। তাদের মুখে লাগিয়ে দেয়া হয় পোড়া মবিল। যাত্রবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকদের এমন নৈরাজ্যের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না সাংবাদিকরাও। তবে এ সব ঘটনায় কর্তব্যরত পুলিশকে নিরবে দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

যাত্রীদের ভোগান্তির বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্্রাফিক) মীর রেজাউল আলম বলেন, গণপরিবহন না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। সীমাবদ্ধতার থাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে যাত্রীদের সহযোগিতায় আমাদের কোনো কিছু করার নেই। তবে শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে সড়কে যেন কোনো অরাজকতা তৈরি না হয় সেটা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।

বেসরকারি ব্যাংকে কর্মকর্তা নাহিদ আনসারী বলেন, একজনের মুখে কালি মাখার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি। একজন ড্রাইভার যে তার মালিকের চাকরি করে, সে সরকারের চাকরি করে না বা অন্য কারো চাকরি করে না, সেখানে তার মুখে কালি মেখে দেয়াটা একজন সভ্য নাগরিক হিসেবে কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

পরিবহন শ্রমিকদের আট দফা দাবি গুলো হচ্ছে- সড়ক দুর্ঘটনার সব মামলা জামিনযোগ্য করা, শ্রমিকদের অর্থদন্ড ৫ লাখ টাকার পরিবর্তে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডের বিধান, সড়ক দুর্ঘটনার জটিলতর মামলার তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখা, ড্রাইভিং লাইসেন্সের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণির স্থলে পঞ্চম শ্রেণি করা, কাগজপত্র চেকিং এর নামে সড়কে পুলিশের অহেতুক হয়রানি বন্ধ, গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের সময় শ্রমিকদের নিয়োগপত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত স্বাক্ষর থাকার ব্যবস্থা করা এবং সব জেলায় শ্রমিকদের ব্যাপকহারে প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করার ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করতে হবে।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, সকাল ছয়টা থেকে রাজশাহীতেও ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট চলছে। ধর্মঘট শুরু হওয়ার পর থেকেই রাজশাহীসহ সারাদেশে ব্যাপক ভোগান্তি নেমে আসে যাত্রীদের মাঝে। স্টেশনেও ছিল প্রচন্ড ভীড়। ট্রেনগুলোয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাদুড় ঝোলা হয়ে ছুটেছে মানুষ। অনেক যাত্রী বাস-ট্রেন কোনো কিছুই না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন। এই ধর্মঘটের সমর্থনে রাজশাহী বাস স্টান্ড ও নওদাপাড়া এলাকায় অটোররিক্সা চালকের সঙ্গে ধাক্কাধাকির ঘটনা ঘটে পরিবহন শ্রমিকদের। অন্যদিকে বাস বন্ধ থাকায় যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে অটোররিক্সা চালকরা বলে অভিযোগ উঠছে। নগরীর বাস স্টান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, সেখান থেকে ঢাকাগামী সব বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন বাসের কাউন্টারগুলো বন্ধ।

বিশেষ সংবাদদাতা, যশোর ব্যুরো জানান, অচল হয়ে পড়েছে গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী সাধারণ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৮টি রুটের কোথাও কোন পরিবহন চলাচল করেনি। সকালে জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া শ্রমজীবী মানুষ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় কাজকর্ম করতে যেতে পারেননি। বাস টার্মিনালগুলোতে গিয়ে তারা হোচট খান। পুর্ব নির্ধারিত প্রোগ্রামে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে রাস্তায় নেমে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুরা, সাতক্ষীরার সব রুটেই পরিবহন বন্ধ ছিল। দুরপাল্লার পরিবহন ছাড়াও আন্তঃ জেলা রুটে চলাচলকারী অন্যান্য যাত্রী পরিবহনও চলাচল করেনি। পরিবহন কাউন্টারে ও বাস টার্মিনালে যাত্রী সাধারণের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সারা দেশের সড়ক পরিবহন কার্যত অচল হয়ে গেছে। বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও মিনি বাস টার্মিনাল সহ দক্ষিনাঞ্চলের সবগুলো বাস টার্মিনালে পরিবহন শ্রমিকদের কোন দেখা নেই। আছে শূন্য বাসের সারি। আর পরিবহন শ্রমিকরা বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা জাতীয় মহাসড়ক এবং বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে পাহাড়া দিয়েছে দিনের বেশীরভাগ সময়ে। এমনকি শুধুমাত্র এ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কোন গাড়ীই চলতে দেয়নি পরিবহন শ্রমিকরা। এমনকি গতকাল সব ট্যাংক লড়ি পর্যন্ত বন্ধ ছিল। ফলে অনেক পেট্রোল পাম্পেও জ্বালানী মেলেনি গতকাল।

খুলনা ব্যুরো জানায়, পরিবহন ধর্মঘটে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে। ধর্মঘটের কারণে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে না যাওয়ায় দুর্ভোগের শিকার হয়েছে যাত্রীরা। এতে চাপ বেড়েছিল ছোট ছোট যানবাহন ও ট্রেনের ওপর। যদিও ট্রেনের টিকিটও মেলেনি। তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা এ কর্মবিরতির পক্ষে খুলনায় কোথাও কোন পরিবহন শ্রমিককে রাস্তায় দেখা যায়নি। এমনকি অন্যান্য পরিবহন শ্রমিক নেতাদেরও কোন দেখা মেলেনি। মহানগরীর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালসহ শিববাড়ির মোড় ও রয়্যাল মোড় থেকে দূরপাল্লার কোন বাস চলাচল করেনি। প্রায় সব কাউন্টার বন্ধ ছিল। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, পিকআপ, ভাড়ায় চালিত মটরসাইকেল এবং বিভিন্ন পরিবহন ব্যবহার করে যাত্রীরা গন্তব্যে পৌছান। এর জন্য তাদের গুণতে হয় বাড়তি টাকা।

সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটে নিজেদের কর্মবিরতির নামে ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যানবাহন চলাচলেও বাধা দিচ্ছে পরিবহন শ্রমিকরা। নগরীর হুমায়ূন রশীদ চত্বরে বেশ কয়েকটি ব্যক্তিগত যান আটকে দেয় শ্রমিকরা। বাস, সিএনজি অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকায় এমনিতেই সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে। তার উপর ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল না করতে দিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা মানুষের দুর্ভোগের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে কোন বাস ছেড়ে যায়নি। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সিলেটের রাস্তা মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই। বাস বন্ধ থাকার পাশাপাশি সিএনজি অটোরিকশা চলাচলও বন্ধ রয়েছে। আর এ কারণে মানুষের দুর্ভোগের মাত্রা আরোও বেড়ে গেছে। এদিকে রিকসা ও ব্যক্তিগত যানবাহন নিয়ে মানুষকে তার প্রয়োজনীয় কাজ সারতে হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক অফিস জানায়, লক্ষ্মীপুরে শ্রমিকদের ডাকা পরিবহন ধর্মঘট চলছে। জেলা বাসটার্মিনাল থেকে দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলা চলাচলকারী কোন যানযাহন চলাচল করছেনা। আজ রোববার সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে এ ধর্মঘট। এতে চরম দূভোর্গে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।

ফেনী জেলা সংবাদদাতা জানান, হয়ে পড়েছে ফেনী জেলা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ২৭ কি.মি. এবং আঞ্চলিক মহাসড়কে ছোট বড় কোন প্রকারের যান চলাচল করেনি। একমাত্র রোগী বহনকারী এ্যাম্বুলেন্স আর প্রাইভেট গাড়ি চলাচল ছিল সীমিত পরিমাণে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন অফিসগামী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ব্যবসায়ীরা।

মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, মাদারীপুরে সকাল ছয়টা থেকে ধর্মঘট শুরু হয়। এ সময় শহরের নতনু এবং পুরাতন বাসস্ট্যান্ডসহ বেশ কিছু পয়েন্টে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা টায়ার চালিয়ে বিক্ষোভ করে।সকল প্রকার যানবহন চলাচল বন্ধ থাকায় দুর দুরান্ত থেকে আসা অফিস আদালত মুখী মানুষদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

চান্দিনা উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ধর্মঘটে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক বন্ধ রয়েছে। এতে চরম জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। অফিসগামী যাত্রী আর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের যানবাহনের আশায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে প্রতিটি বাসষ্ট্যান্ডে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সকাল থেকে কোনো যাত্রীবাহী বাস চলাচল না করায় সিএনজি চালিত অটোরিকশার ওপর নির্ভর করতে হয় রাস্তায় বের হওয়া মানুষদের। কিন্তু ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে কিছু রিকশা, সিএনজি ও নিজস্ব প্রাইভেট গাড়ী চলাচলে বাধা দিচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এজন্য দিনের শুরুতেই চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী যাত্রী ও শিক্ষার্থীদে

প্রজন্মনিউজ২৪/জহুরুল হক

 

এ সম্পর্কিত খবর

তীব্র গরমে ঢাকার বাতাসের কী খবর

হাবিপ্রবি সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বাঁচবে হাজারও কোটি টাকার সম্পদ

সরদার পাড়া দারুল কোরআন মডেল মাদ্রাসার পরিক্ষার ফল প্রকাশ

৭ দাবিতে কুবি’র তিন দপ্তরে শিক্ষক সমিতির তালা

চলতি বছর পবিত্র হজ্জ পালনের অনুমতি দেওয়া শুরু করেছে সৌদি আরব

ইসরায়েল থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবিতে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চুয়েট, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ

রোববার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ

বশেমুরবিপ্রবিতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ