৫ বছরে কমপক্ষে ১১৭৫৮ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন অন্তত ৬৩০৫ জন

প্রকাশিত: ০৭ মার্চ, ২০২৫ ০৫:০৭:২৬

৫ বছরে কমপক্ষে ১১৭৫৮ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন অন্তত ৬৩০৫ জন

প্রজন্মডেক্স: ৮ ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এটি বিশ্বব্যাপী নারীদের অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসেবে উদযাপিত হয়। এই দিনটি নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং তাদের অধিকারের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে উদযাপিত হয়। ২০২৫ সালের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, “For ALL women and girls: Rights. Equality. Empowerment.” অর্থাৎ অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন, নারী ও কন্যার উন্নয়ন।’ স্লোগানটি সমাজে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারীদের প্রতি ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। 
সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীদের অবদান অপরিসীম, কিন্তু এখনো অনেক ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের এবং প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরণের নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। কর্মক্ষেত্র, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনপরিসরে নারীরা প্রায়ই বৈষম্য ও নির্যাতনের সম্মুখীন হন। বিশেষ করে নারীর প্রতি সহিংসতা, যৌন হয়রানি, বাল্যবিবাহ, যৌতুক প্রথা এবং পারিবারিক নির্যাতন আজও আমাদের সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত। বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) এর সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী  ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত ৫ বছরে অন্তত ১১৭৫৮ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ৬৩০৫ জন, যাদের মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে ৩৪৭১ জন ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে ১০৮৯ জন নারী ও শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২০৭ জনকে যাদের মধ্যে শিশু ১১৮ জন এবং ৫০ জন ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশু আত্মহত্যা করেছেন। ২৬২৪ জন নারী ও শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।  যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৯০ জন, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩৫৫ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ২৬ জন নারী। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ১২৬২ জন, আহত হয়েছেন ৩৮৬ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ৪১৬ জন নারী। অ্যাসিড সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৯৪ জন নারী ও কন্যা শিশু যার মধ্যে নিহত হয়েছেন ৯ জন ।
২০২৫ সালের ১ম ২ মাসে কমপক্ষে ২২৪ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০৭ জন, যাদের মধ্যে ৬৬ জন ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে, ২৭ জন নারী ও কন্যা শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং আত্মহত্যা করেছেন ৫ জন নারী । ২৯ জন নারী ও কন্যা শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তন্মধ্যে শিশু ১৬ জন। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬ জন ও আহত হয়েছেন ২ জন। । পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ৫৮ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ২০ জন নারী। এসিড সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ১ জন নারী।
আমরা মনে করি, বেশ কিছু কারণে বাংলাদেশে নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি বৈষম্য, ও নারী বিদ্বেষমূলক ঘটনা ঘটছে। তার মধ্যে, কুসংস্কার এবং শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণের ব্যাপারে ভ্রান্ত ধর্মীয় ব্যাখ্যা অন্যতম। সামাজিকভাবে নারীদের ঘরের বাহিরে গিয়ে শিক্ষা অর্জন কিংবা কাজ করার হার বর্তমানে বৃদ্ধি পেলেও এই বিষয়টি এখনো অনেক জায়গায় ট্যাবু হিসেবেই ধরা হয়। ফলত: নারীরা কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের ব্যাপারে নিরুৎসাহিতকরণ কিংবা তাদের সরাসরি বাধা দেওয়ার মাধ্যমে নারীদের কোনঠাসা করে রাখার চেষ্টা আছে। এছাড়া, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী নারীদের সামজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে বিকশিত হওয়ার অন্তরায় হিসেবে আবির্ভুত হন । আইনের সঠিক বাস্তবায়নের অভাব, পুলিশের অসচেতনতা ও বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতার ফলে অপরাধীরা শাস্তি এড়িয়ে যায়। এর পাশাপাশি, নারী সম্পর্কিত যে কোন অপরাধের আইনী সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা ও সামাজিক বাধা রয়েছে। ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন জায়গায় বঞ্চনা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও তারা যথাযথ আইনী ও সামাজিক সুরক্ষা গ্রহণ করতে পারে না। আরো একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে, প্রতিষ্ঠিত সামাজিক ব্যাবস্থা ভেঙ্গে নারীদের জন্য সম্মানজনক ও নিরাপদ একটি কার্যকরী ব্যবস্থা গঠন করতে নারীদের অবহেলা রয়েছে। 
এমতাবস্থায়, এইচআরএসএস সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছে যে, সকল জায়গায় নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নারীদের সাংখ্যিক দিক নয় বরং কার্যকর ও গুনগত দিক বিবেচনায় নিতে হবে। যে কোন রাষ্ট্রিয় আয়োজনে নারীদের অংশগ্রহণ এবং অর্থবহ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, সমাজের সকল পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ঘরে ও বাহিরে নারীর প্রতি সহিংসতার সকল বিচার ও আইনী প্রক্রিয়া সহজতর ও দ্রুত করতে হবে। আইনী আশ্রয় প্রত্যাশী নারীরা যেন কোনভাবে হয়রানির শিকার না হয় তার জন্য যথোপযুক্ত আইন ও এর বাস্তবায়ন করতে হবে। 
বর্তমান সময়ে অনলাইনেও নারীরা ব্যাপকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। নারীদের সাইবার বুলিং থেকে মুক্ত করতে ব্যাক্তি ও রাষ্ট্রীয় জায়গা থেকে ব্যাপক সচেতনা ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে, যাতে নারীরা তাদের ডিজিটাল অধিকার পরিপূর্ণভাবে ভোগ করতে পারে।


প্রজন্মনিউজ/২৪জেএ

এ সম্পর্কিত খবর

চট্টগ্রামে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল

নাটোর সদর -২ আসনে ৫ হাজারের অধিক মোটরসাইকেল নিয়ে জামায়াতের বিশাল মোটরসাইকেল শোডাউন

ডেমরায় জামায়াত মনোনীত প্রার্থীর সমর্থনে সমাবেশ ও মিছিল

গত ১০ বছর ফ্যাসিবাদ বিরোধী দৃশ্যমান কিছু করেনি জামায়াত : মির্জা ফখরুল

সাকিবকে ছাড়িয়ে দেশের সর্বাধিক টেস্ট উইকেট তাইজুলের

ভূমিকম্পে আহতদের পাশে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন

বিকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক

লেবাননে হামলায় ১৩ হামাস যোদ্ধা নিহত, দাবি ইসরাইলের

ভূমিকম্প : রাজধানীতে রেলিং ভেঙে ৩ জন নিহত

ঠাকুরগাঁওয়ে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined index: category

Filename: blog/details.php

Line Number: 417

Backtrace:

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ