১৫ বছরে দেড় লাখ মামলা ৫০ লাখ আসামি

প্রকাশিত: ২৪ মার্চ, ২০২৪ ১২:৪৪:০১

১৫ বছরে দেড় লাখ মামলা ৫০ লাখ আসামি


নিজস্ব প্রতিনিধি: দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। পেরিয়েছে নানা চড়াই-উতরাই। এই সময়ে নেতাকর্মীদের কেউ কেউ হারিয়েছেন প্রাণ। কেউবা হয়েছেন পঙ্গু। কারও পরিবার সব হারিয়ে নিঃস্ব। এখনো বন্দি প্রায় এক হাজার নেতাকর্মী। অনেকে সাজা ও পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ফেরারি জীবন-যাপন করছেন।

এক-এগারোসহ পরবর্তী সময়ের মামলার ভারে ন্যুব্জ এখন বিএনপি। দলটির দাবি, গত ১৫ বছরে প্রায় দেড় লাখ মামলায় আসামি হয়েছেন ৫০ লাখেরও বেশি। জামিন ও হাজিরা নিয়ে আদালতপাড়ায় নিয়মিতই দৌড়াচ্ছেন তারা। বিভিন্ন মামলায় সাজা হয়েছে দেড় হাজারের মতো নেতাকর্মীর। এসব নিয়ে দলটির নীতিনির্ধারকরাও উদ্বিগ্ন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে সুশাসনের স্বার্থে এসব মামলার সুরাহা হওয়া দরকার।

বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি ৫০ লাখ আসামির কথা বললেও সেটি মোটেও সত্য নয়।
তিনি বলেন, অপরাধ করলে নেতাকর্মী বড় কথা নয়, অপরাধ করলে তাদের সাজা হয়। ১৫ বছরে উনারা জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসন্ত্রাস করেছে কিনা আপনাদের জানা আছে। এটার জবাব আমি এক সময় দেব, খোঁজ করে নেই। আমার মনে হয় এটার জবাব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। কারণ পুলিশ তো মামলা করে। কোর্ট বিচার করে। আমি যেটা জানি, সেটি হচ্ছে কোর্ট সাক্ষী-প্রমাণ নিয়ে, যাদের সাজা দেওয়ার সেটাই দেয়। সুষ্ঠু বিচার যদি উনারা (বিএনপি নেতা) না পান বলুক, যে সুষ্ঠু বিচার পাই না। উনারা আপিল করতে পারেন, আপিলে না টিকলে তখন দেখুক। কোর্টের বাহিরে তো এসব বলে লাভ নেই।

বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেড় লাখ মামলায় ৫০ লাখ আসামির সংখ্যা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শুক্রবার রাতে যুগান্তরের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘আমি এই উদ্ভট কাহিনী প্রথম শুনলাম। তারা (বিএনপি) তো বলেই ৫০ লাখ, মামলার নাম্বার দিতে বলেন। আমি বলব এটি অসত্য কথা। এসব মামলাকে গায়েবি দাবি করে বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতেই এই গায়েবি মামলাকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) ক্ষমতায় থাকার একমাত্র অবলম্বন মামলা। তাকে ক্ষমতায় থাকতে হলে মামলা ছাড়া সুযোগ নেই। এটি তার রাজনৈতিক অস্ত্র। রাষ্ট্র তাদের নিয়ন্ত্রণে, বিচার বিভাগও নিয়ন্ত্রণে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে ধ্বংস করার জন্য এত মামলা দিয়েছে সরকার।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, রাজনীতিতে দমন-পীড়নের জন্যই এত মামলা। এসব মামলার মধ্যে গায়েবিও রয়েছে। এগুলো তদন্ত করে শুধু উঠিয়ে নেওয়া নয়, যারা এসব মামলা দিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বিএনপির তথ্যমতে, মামলার বাইরেও এই সময়ে দলটির ১ হাজার ৫৭৪ জন নেতাকর্মী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৭৯৯ জন। এখনো গুম রয়েছেন ৭২ জন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের তথ্যমতে-আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে এক লাখ ৪১ হাজার ৬৩৩টি মামলায় আসামি করা হয়েছে ৪৯ লাখ ২৬ হাজার ৪৯২ জনকে। এর মধ্যে রাজশাহী বিভাগে ১১ হাজার ৪৬১টি মামলায় আসামি হয়েছেন ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৫৬৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩ হাজার ৪৮২টি মামলায় ৩ লাখ ৭২ হাজার ৬৩৫ জন। কুমিল্লা বিভাগে ৬ হাজার ২৬৫টি মামলায় ১ লাখ ১৫ হাজার ১৯৯ জন, রংপুর বিভাগে ৯ হাজার ৭০৪টি মামলায় ৩ লাখ ৮১ হাজার ৪৭১ জন, ঢাকা বিভাগে ১৫ হাজার ৭৯টি মামলায় ৬ লাখ ৬১ হাজার ৫৫৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ হাজার ৩৯৪টি মামলায় ২ লাখ ৫১ হাজার ১১৭ জন।

বরিশাল বিভাগে ৮ হাজার ৬৬২টি মামলায় ৩ লাখ ৩ হাজার ৫২১ জন, খুলনা বিভাগে ২৬ হাজার ৮৭১টি মামলায় ৯ লাখ ৬৫ হাজার ১৭৩ জন, সিলেট বিভাগে ৮ হাজার ৪৩৪টি মামলায় ২ লাখ ২১ হাজার ৭৪৪ জন ও সব মহানগরে ৩৫ হাজার ২৮৪টি মামলায় ৮ লাখ ৯০ হাজার ৫১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আসামি করা হয়েছে খুলনা বিভাগে। দপ্তরের তথ্যমতে, ২৮ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৭ মার্চ পর্যন্ত দশ সাংগঠনিক বিভাগে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১ হাজার ৬৪৫টির অধিক। আসামি হয়েছেন ৮০ হাজারের অধিক নেতাকর্মী। বিএনপির শীর্ষ নেতাসহ গ্রেফতার হয়েছেন ২৫ হাজার ৭১১ জনের বেশি।

গত ২ মাসে তাদের অনেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। কারাগারে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। ২৮ অক্টোবর পরবর্তী বিএনপির সাংগঠনিক বিভাগে মামলার তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, রাজশাহী বিভাগে মামলা হয়েছে ২৫৩টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০৪টি, কুমিল্লা বিভাগে ১২১টি, রংপুর বিভাগে ১৩৭টি, ঢাকা বিভাগে ৪১২টি, ফরিদপুর বিভাগে ৩৭টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ১১১টি, বরিশাল বিভাগে ৭৪টি, খুলনা বিভাগে ১৪১টি এবং সিলেট বিভাগে ১৫৫টি। সবচেয়ে বেশি গ্রেফতার রয়েছে রাজশাহী বিভাগে।

আইনজীবীদের দাবি, এসব মামলায় যেসব নেতাকর্মী কারাগারে গেছেন তাদের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ জামিন পেয়েছেন। তবে বিএনপির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মামলা ও আসামির সংখ্যা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে বিভিন্ন জেলার পুলিশ প্রশাসন। ১৫ বছরে ভোলা জেলায় দেড় হাজার মামলায় প্রায় ৫০ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে বিএনপির এমন দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. মামুন অর রশিদ যুগান্তরকে জানান, ‘এ অভিযোগ সত্য নয়। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনো মামলা হয়নি বা কাউকে আসামিও করা হয়নি। যারা নাশকতা ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়ে থাকে। জেলায় ৫০ হাজার আসামি এটিও সঠিক নয়।


প্রজন্মনিউজ২৪/আরা
 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ