নির্বাচন কেন্দ্রীক সহিংসতায় নিহত ১৫ জন, আহত ২২০০: এইচআরএসএস

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারী, ২০২৪ ০৫:২৬:৪৮ || পরিবর্তিত: ১৮ জানুয়ারী, ২০২৪ ০৫:২৬:৪৮

নির্বাচন কেন্দ্রীক সহিংসতায় নিহত ১৫ জন, আহত ২২০০: এইচআরএসএস

প্রজন্ম ডেস্ক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচ তফসিল ঘোষণার পর থেকে ১৫ জানুয়ারী পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ জেলায় সংঘর্ষ, সংঘাত, হত্যা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। গত দুই মাসে নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন এবং ২২০০ জনের বেশি আহত, ১০০ জনের বেশি গুলিবিদ্ধ, ৩৫০ টির বেশি গৃহ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) নামের একটি মানবাধিকার সংস্থার নির্বাচন কেন্দ্রীক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য ফুটে উঠেছে।

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, তফসিল ঘোষণার পর থেকে ০৬ ই জানুয়ারী নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ জেলায়  সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭ জন এবং ১৬০০ জনের বেশি আহত, ২০ জনের বেশি গুলিবিদ্ধ, ৫০ টির বেশি গৃহ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও ৪০ টিরও বেশি নির্বাচনী কেন্দ্র ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

৭ ই জানুয়ারী নির্বাচনের দিনে কমপক্ষে ৫০ টি সহিংসতার ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ, বরগুনা এবং কুমিল্লায় নিহত হয়েছেন ৩ জন এবং ১৫০ এর অধিক মানুষ আহত  হয়ছেন। এর মধ্যে ১৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনের প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট এবং প্রিজাইডিং অফিসাররাও  আক্রমণের শিকার হয়েছেন । এদিন পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ৩০ জনের অধিক সাংবাদিক  আক্রমণ, লাঞ্ছনা ও হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাই, ভাংচুর  এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। 

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী  সময়ে দেশের অন্তত ৩৯ জেলায়  সংঘর্ষ, সংঘাত, হত্যা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।  সারা দেশে অন্তত ৫ জন নিহত,  ৪৫০ জনের বেশি আহত, ৬০ জনের বেশি গুলিবিদ্ধ, ৩০০ টির বেশি গৃহ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। যে সকল নাগরিক ভোট প্রদান করেননি এমন কিছু মানুষের উপর ও তাদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। পরাজিত কিংবা বিজয়ী দলের প্রার্থী, ভোটার ও কর্মী-সমর্থকসহ সংখ্যালঘু সনাতন ধর্মাবলম্বী ও বেদে সম্প্রদায়ের সদস্যদের উপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহের পোড়াহাটিতে অন্তত ৫০ টি, মাদারীপুরের কালকিনি ও কাউয়াকুড়ির ৫০টি, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া ৩০টি, সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে ২০ টির অধিক দোকান, বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জান ও মালের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এসময় শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি নগদ অর্থ, স্বর্নালংকার, গবাদি পশুসহ আসবাবপত্র লুটপাট হয়েছে। এছাড়াও সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার, মানিকগঞ্জের সিংগাইর ও হরিরামপুর, পিরোজপুরের ইন্দুরকানি, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, গাজীপুর, গাইবান্ধা, খুলনার ডুমুরিয়া, নাটোর, নোয়াখালী, নেত্রকোনা, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, ঢাকার ধামরাই, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ও কুমারখালী, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদীখান ও গজারিয়া, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, রাজশাহীর পবা ও পারিলাসহ দেশের বিাভন্ন জায়গায় ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের ঘটনায় বিভিন্ন দলের সমর্থক, সাধারণ মানুষ বিশেষত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ অন্তত ৫ জনের প্রাণহানি,  ৪৫০ জনের বেশি আহত, ৬০ জনের বেশি গুলিবিদ্ধ ও কমপক্ষে ৩০০ টি বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। 

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতা

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরবর্তি সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর চলছে হামলা, নির্যাতন, নিপীড়ন, ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ, লুটপাট সহ অবরুদ্ধকরণ। কোনো একটি নির্দিষ্ট দলকে নির্বাচনে ভোট দেওয়া কিংবা না দেওয়া এবং কোন একজন প্রার্থীর পক্ষ নেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় এই সহিংসতার মূল কারণ।  সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর ও বেলকুচিতে ঈগল প্রতীকে ভোট দেওয়ায় স্থানীয় আওয়ামিলীগ এর কর্মী-সমর্থক জেলেপাড়া, ভাঙ্গাবাড়ি গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর চড়াও হয়ে সেখানে প্রতিমা ও ঘরবাড়ি ভাংচুর, লুটপাট ও গবাদিপশু নিয়ে যায়।  চাপাইনবয়াবগঞ্জ-১,  তাঁতিপাড়ায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ৬ টি বাড়িঘর ভাংচুর করে। কুষ্টিয়ার কুমারখালির ৫০ টি হিন্দু পরিবারকে গত ৭ দিন ধরে অবরুদ্ধ করে রাখার মতন ঘটনা ঘটেছে।  ঠাকুরগাঁও-১ আসনে তেনাই তোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে ভোট প্রদান শেষে রোশনি রায় ও জয়দেব বর্মণ নামের দুজনকে হামলা করা হয়। কুমিল্লা দাউদকান্দিতে ঈগল প্রতীকের সমর্থক পিপলু সাহা ও রঞ্জন সাহা নামের দুজনকে কুপিয়ে আহত করা হয়। ফরিদপুর ৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের সমর্থন করায় ১৫ জন সংখ্যালঘুকে মাঝিপাড়ায় তাদের বাড়িঘরে হামলা করে আহত করা হয়। গাইবান্ধা ৫ আসনে ৪ টি হিন্দু বাড়িতে হামলা করে প্রায় ৫ লাখ নগদ টাকা ও গবাদিপশু কেড়ে নেওয়া হয়। এছাড়াও মাদারীপুরের কালকিনিতে বেদে সম্প্রদায়ের সদস্যরা ও ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা করে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী সমর্থকেরা।

এহেন পরিস্থিতিতে আমরা উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। তাই হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) সরকার ও সংশ্লিষ্ট আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে  নির্বাচনী সহিংসতার সকল ঘটনা আমলে নিয়ে দ্রততার সাথে  নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা এবং ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি ও পরিবারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে আহবান জানাচ্ছে।


প্রজন্মনিউজ২৪/এসআই
 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ