ব্রাজিলে শিশুদের ক্যানসারে সয়া চাষের যে সম্পর্ক

প্রকাশিত: ০৫ নভেম্বর, ২০২৩ ০৩:৫৪:১৫

ব্রাজিলে শিশুদের ক্যানসারে সয়া চাষের যে সম্পর্ক

অনলাইন ডেস্ক: বিশ্বের সবচেয়ে বড় সয়াবিন উৎপাদনকারী দেশ ব্রাজিল। কিন্তু সেখানে সয়াচাষে ব্যবহৃত কীটনাশকের সাথে ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখেছে একটি সাম্প্রতিক গবেষণা।

লিউকিমিয়া এক ধরনের রক্তের ক্যান্সার। ব্রাজিলে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুমৃত্যুর সাথে সয়া চাষে ব্যবহৃত কীটনাশকের একটি সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পিএনএএস পত্রিকায় ৩০ অক্টোবর প্রকাশিত হয় এ বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র।

গবাদি পশুর ওপর নির্ভরশীল, এমন ফসলের বদলে সয়াচাষের দিকে গত কয়েক বছরে বেশি ঝুঁকেছেন ব্রাজিলের কৃষকরা। ফসল ভালো হওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় একটি বিশেষ রাসায়নিক, গ্লাইফোসেট। এই গ্লাইফোসেট পানিতে মিশে নদীতে পৌঁছায়। পরে, বিভিন্ন এলাকার খাবার পানীয়র সাথে মিশে শিশুদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

গবেষণার শুরুতে বিজ্ঞানীরা দেখেন, অর্ধেক জনসংখ্যার মানুষের হাতের কাছে খাবার পানীয়র একটি নির্দিষ্ট কুপ রয়েছে। বাকি অর্ধেক মানুষ মাটির নিচ থেকে তোলা পানির ওপরেই নির্ভরশীল, যা সহজেই দূষিত হতে পারে।

এই দূষণ সবার জন্যে ক্ষতিকর হলেও গবেষকদের মূল উদ্দেশ্য ছিল গ্রামে কৃষক পরিবারের দশ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের মধ্যে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর কারণ চিহ্নিত করা। এর জন্য ২০০৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য খতিয়ে দেখে তারা। এই একই সময়ে ব্রাজিলের আমাজন ও সেরাদো-সংলগ্ন এলাকায় সয়া চাষ গতি লাভ করে।

গবেষণার খাতিরে বিজ্ঞানীরা নজর দেন অসুস্থ শিশুদের বাসস্থান থেকে নদীর দূরত্ব ও শিশু ক্যানসারের চিকিৎসা সম্ভব, এমন হাসপাতাল থেকে শিশুটির দূরত্বের দিকে। দেখা যায়, সেই দশ বছরে মোট ১২৩টি শিশু সয়া চাষজনিত অ্যাকিউট লিমফোব্লাস্টিক লিউকিমিয়ার কারণে মারা গেছে।

প্রায় অর্ধেকেরও বেশি লিউকিমিয়াজনিত মৃত্যুর সাথে কীটনাশকের সংস্পর্শের বিষয়টি জড়িত থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের মত। কিন্তু এই বিশেষ ধরনের লিউকিমিয়া সঠিক চিকিৎসা পেলে সেরে যায়।

গবেষণাটি জানায়, সয়া চাষ বাড়ার পর এই ধরনের লিউকিমিয়াতে মারা যাওয়া শিশুরা সকলেই নিকটবর্তী হাসপাতাল থেকে একশ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে বাস করত।

বিশ্ব বাজারের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে ব্রাজিল সয়া চাষে শীর্ষস্থানে রয়েছে। এই গবেষণাটির প্রধান গবেষক ও মার্কিন গবেষক মারিন স্কিডমোর বলেন, সয়া চাষের পরিধি খুব দ্রুত বড় হয়েছে। ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সেরাদো অঞ্চলে এই চাষ তিনগুণ হয়েছে। অন্যদিকে, আমাজন সংলগ্ন এলাকায় সয়া ফসলের পরিমাণ বেড়েছে বিশ গুণ!

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার জানায়, সয়াজনিত পণ্যের মাত্র ২০ শতাংশ মানুষের খাদ্য বাজারে ব্যবহৃত হয়। এর ৮০ শতাংশ যায় পশুপাখিদের খাবার তৈরিতে, বিশেষত সেইসব খামারে যেখানে গরু, মুরগি, ডিম ও দুগ্ধজাত পণ্য তৈরি হয়।

এই গবেষণাপত্রটির প্রধান খামতি এটাই যে, এই গবেষণায় সরাসরিভাবে সয়া চাষের সাথে লিউকিমিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার কোনো সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়নি। শুধু একটি সম্পর্কের কথা উত্থাপিত করা হয়েছে সেখানে।

ডর্টমুন্ড টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে জেনেটিকস শিক্ষক বলছেন, এই গবেষণাটির সাথে যুক্ত বিজ্ঞানীরা অন্যান্য ফ্যাক্টর নিয়ে যথেষ্ট ভাবেননি। তার মতে, ‘সম্পর্কটি যুক্তিসম্মত ও হয়তো সঠিকও, কিন্তু এই ফলাফলের আরও অন্যান্য ব্যাখ্যা থাকতে পারে। গবেষকেরা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছেন ঠিকই, কিন্তু আর্থসামাজিক ভ্যারিয়েবলের দিকটি দেখা হয়নি।’

জার্মানির লাইপজিশের আরেক বিজ্ঞানী মাটিয়াস হিজের মতে, কিছু খামতি থাকলেও এই গবেষণা পত্রটি কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেছে। গবেষণাটি বলছে, নদীর বিপরীত স্রোতের আশপাশে থাকা শিশুদের তুলনায় নদীর স্রোত বরাবর যে অঞ্চল, সেখানকার শিশুদের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি দেখা গেছে। ফলে, ক্যানসারের সূত্র দূষিত পানীয়ও হতে পারে।

তিনি বলেন, ‘এই ধরনের দূষণের পেছনে কীটনাশক ছাড়া আর কোনও কারণের কথা ভাবতেও পারা যায় না।’


প্রজন্মনিউজ২৪/এফএ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ