ব্যাংকিং খাতে বড় অঙ্কের ঋণে ঝুঁকি বাড়ছে

প্রকাশিত: ২২ মার্চ, ২০২৩ ১১:০৪:৪৭

ব্যাংকিং খাতে বড় অঙ্কের ঋণে ঝুঁকি বাড়ছে

আতাউর রহমান, নিজস্ব প্রতিবেদক: বড় অঙ্কের ঋণে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ব্যাংকিং খাতকে। টাকার ৩০ টাকা বড় অঙ্কের ঋণ। সে হিসাবে ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকার ঋণের দেড় লাখ কোটি টাকার ওপরে চলে গেছে গুটি কয়েক ব্যবসায়ী গ্রুপের দখলে। এমনি পরিস্থিতি বড় ঋণ কেন্দ্রীভূত হওয়া ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্ক পদক্ষেপ নিলেও বড় অঙ্কের ঋণের কোটা বাড়াতে চাচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বড় অদের ঋণের কোটা বাড়ানোর বিরোধিতা করে ফিরতি চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়কে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র তথ্য জানিয়েছে।

জানা গেছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোনো একক গ্রুপ বা ব্যক্তিকে ব্যাংক নগদে ১৫ শতাংশের ওপরে ঋণ দিতে পারে না। আর নন-ফান্ডেড ঋণ দিতে পারে আরো ১০ শতাংশ। সবমিলে একক ঋণগ্রহীতার সীমা রয়েছে ২৫ শতাংশ। এ হিসাবে একটি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা হলে ৬০ কোটি টাকা নগদে এবং ৪০ কোটি টাকার গ্যারান্টি অর্থাৎ নন- ফান্ডেড মিলে সর্বোচ্চ ১০০ কোটি টাকার ঋণ দিতে পারে কোনো একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে। এর বাইরে হলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যান মতে, প্রতি ১০০ দেয়া হয়।

জানা গেছে, জানা গেছে, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ প্রদান করে তার বেশির ভাগই সাধারণ গ্রাহকের আমানত। ব্যাংক অপেক্ষাকৃত কম সুদে আমানত সংগ্রহ করে তা তুলনামূলক বেশি সুদে গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করে থাকে। এ ঋণ দিতে গিয়ে আমানতকারীদের অর্থ কোনো ধরনের ঝুঁকির মুখে না পড়ে সে জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে ব্যাংকগুলোর ওপর। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এসব বিধিনিষেধ সময়ে সংশোধিত, পরিমার্জিত ও হালনাগাদ করে থাকে। প্রথমেই ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের কাছ থেকে যে পরিমাণ আমানত নেবে তার পুরোটাই ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে পারে না। ১০০ টাকার আমানত থেকে বাধ্যতামূলকভাবে সাড়ে ১৯ টাকা বিধিবন্ধ নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা এসএলআর এবং বাধ্যতামূলক নগদ জমা বা সিআরআর হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে সংরক্ষণ করতে হয়। বাকি অর্থ গ্রাহকদের মধ্যে বিনিয়োগ করার অনুমোদন থাকলেও তা ইচ্ছে মাফিক বিতরণ করা যায় না। একজন গ্রাহককে ব্যাংকের মূলধনের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদের ঋণ দিতে পারবে।

ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর সামগ্রিক ঝুঁকির ওপর এক পর্যবেক্ষণ করা হয়। ওই পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ব্যাংকিং খাতে সবচেয়ে আশঙ্কাজনক তথ্য বের হয়ে এসেছে। আর তা হলো, ব্যাংকের বিনিয়োগের একটি বড় অংশ চলে গেছে মুষ্টিমেয় ১০-১২ জন গ্রাহক ও একক কোনো খাতের দখলে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গুটি কয়েক ব্যক্তি বা একক কোনো খাতে ঋণ চলে যাওয়ার অর্থ হলো ব্যাংকের ঋণ বুঝুঁকির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। অর্থাৎ কোনো কারণে ওই একক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে ব্যাংকের বড় অঙ্গের অর্থই আটকে যাবে। দ্বিতীয়ত, কয়েকজনের দখলে ঋণ চলে যাওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হলে ব্যাংকের ওইসব ঋণই আটকে যাবে। আর খাণ আটকে যাওয়ার অর্থ হলো ব্যাংকের খেলাপিঋণের পরিমাণ বেড়ে যাবে। ইতোমধ্যেই ব্যাংকের খেলাপিঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যান মতে, গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপিঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এ বাইরে আরো প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপিঋণ অবলোপন করা হয়েছে। ডিসেম্বর প্রান্তিকের খেলাপিঋণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে, ডিসেম্বর প্রান্তিকে খেলাপিঋণ আরো বেড়ে গেছে বলে আভাস পাওয়া গেছে। মোট খেলাপিঋণের প্রায় ৭০ শতাংশই মন্দ ঋণ, যা আদায় করতে ব্যাংকের মামলা মোকদ্দমা করতে হয়। শুধু তাই নয়, ব্যাংকের খেলাপিঋণ বেড়ে গেলে ২০ শতাংশ থেকে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। আর প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয় ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে। পাশাপাশি মন্দ ঋণের বিপরীতে অর্জিত সুদ আয় খাতে স্থানান্তর করতে পারে না ব্যাংকগুলো। সামগ্রিকভাবেই ব্যাংকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ ঝুঁকি হ্রাস করতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর ঋণ বহুমুখীকরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গুটি কয়েক ব্যক্তি বা খাত থেকে ঋণ প্রদান থেকে ফিরে আসতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি কোনো একক খাত বা ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ কী পরিমাণ ঋণ প্রদান করবে তার আগাম সীমা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নেয়ারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এ দিকে ব্যাংক কোম্পানি আইনের একক ঋণগ্রহীতার সীমা শিথিল করার জন্য অর্থ মন্ত্রাণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি দেয়া হয়েছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে বেসরকারি খাতে অনুমোদন দেয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে বড় অম্লের ঋণের প্রয়োজন। এতে কোনো কোনো গ্রুপ এককভাবে একটি ব্যাংক থেকেই মোটা অঙ্কের ঋণ নিতে যাচ্ছে। এই কারণে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ে ওই বিধি শিথিল করার আবেদন করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে ওই চিঠি দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেতিবাচক মতামত দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগকে ফিরতি চিঠি দিয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠির জবাব ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। ওই সূত্র জানায় আইনেই এটা পরিষ্কার করা আছে। তা ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত ঋণ প্রয়োজন হলে সিন্ডিকেশন ঋণ নিয়ে থাকে। এ পরিস্থিতিতে একক ঋণগ্রহীতার সীমা বাড়ানো হলে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকির পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ব্যাংকিং খাতে খেলাপিঋণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো কেন্দ্রীভূত ঋণ। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ কেন্দ্রীভূত হওয়া ঠেকাতে বড় অঙ্কের ঋণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে তদারকি জোরদার করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে একক ঋণগ্রহীতার সীমা বাড়ানো হলে এটা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রজন্মনিউজ২৪/জসিম/আতাউর

এ সম্পর্কিত খবর

জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ অন্ধকার: কাজী ফিরোজ

২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি কমেছে ১৫.৪৯ শতাংশ

বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবায় থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী

তীব্র গরমে ঢাকার বাতাসের কী খবর

যুদ্ধকে ‘না’ বলুন, সংলাপের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করুন: প্রধানমন্ত্রী

বোরহানউদ্দিনে সাবেক সেনা কর্মকর্তার জানাযা ও দাফন সম্পন্ন

ডাকঘরে পোস্ট মাস্টারের আইসক্রিম ডিলারের ব্যবসা

যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

দিনে হিটস্ট্রোকের ভয়, চাঁদের আলোয় ধান কাটছে কৃষকরা

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সরকারের লক্ষ্য: অর্থ প্রতিমন্ত্রী

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ