বাংলাদেশের জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করছে মালয়েশিয়া

প্রকাশিত: ০৭ অক্টোবর, ২০২১ ১২:১৮:৩০ || পরিবর্তিত: ০৭ অক্টোবর, ২০২১ ১২:১৮:৩০

বাংলাদেশের জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করছে মালয়েশিয়া

প্রজন্মনিউজ ডেস্ক: টানা প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর আবারও বাংলাদেশের জন্য শ্রমবাজারের দ্বার উন্মুক্ত করছে মালয়েশিয়া। চলতি অক্টোবর মাসেই বাংলাদেশ থেকে নতুন করে শ্রমিক নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করছে দেশটি। এ বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে দুই দেশ। করণীয় নির্ধারণে দুই দেশের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে তিন দফায়। এমনকি ইতোমধ্যে মালয়েশিয়া তাদের ঘোষণা অনুযায়ী জব পোর্টালের কাজ শুরু করেছে। বাংলাদেশকে সোর্স কান্ট্রি করে শ্রম নিয়োগ প্রক্রিয়াও শুরু করে দিয়েছে মালয়েশিয়া।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নতুন অনলাইন পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবে মালয়েশিয়া। এ সংক্রান্ত যাবতীয় আলোচনা ও প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত করেছে উভয় পক্ষ। এবার আর কোনো সিন্ডিকেট নয়, জনশক্তি প্রেরণে লাইসেন্সধারী সব রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠানোর সুযোগ পাবে।

জিটুজি প্লাস (সরকার টু সরকার) পদ্ধতিতে ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কাজের অনুমতি পেয়েছিল বাংলাদেশ। বর্তমানে তাদের মাধ্যমে আবেদন করা প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক দেশটিতে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। কিন্তু এ পদ্ধতিতে দেশটিতে প্রবেশের শেষ সময় ছিল ৩১ ডিসেম্বর। বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়ায় এসব কর্মীকে পাঠানো সম্ভব হয়নি। ফলে বাতিল হয়ে গেছে এসব শ্রমিকের চাহিদাপত্র। অপেক্ষমাণ এসব শ্রমিককেও নতুন পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় যেতে হবে।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহিন জানিয়েছেন, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের তৃতীয় বৈঠক হয়েছে ৩০ মে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে চতুর্থ বৈঠকের তারিখ নিয়ে কোনো চূড়ান্ত খবর নেই। তবে শুধু বৈঠকের ওপর মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির বিষয়টি নির্ভর করছে না। আমরা এর বাইরেও কাজ করছি। আগামী মাসের মধ্যেই সুসংবাদের আসা করছেন অতিরিক্ত সচিব।

জানা গেছে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও। এরই মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া কো-অপারেশনের (সায়াকো) মাধ্যমে মালয়েশিয়ার সমর্থন অর্জনের জন্য কুয়ালালামপুর সফর করেছেন। সফরকালে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়নে এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

গত বছর একতরফা ও অনৈতিকভাবে ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর অভিযোগ ওঠে বাংলাদেশের ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে। এই ১০ এজেন্সি সিন্ডিকেট হিসেবে পরিচিতি পায়। এর সঙ্গে জড়িত দুই দেশের সরকারি-বেসরকারি লোকজন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের জন্য শ্রমবাজার বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া।

তবে মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেয়ে আপাতত বাজার চালু করার জন্য সরকারের মনোযোগ বেশি। তাই অন্যসব বিষয়কে প্রাধান্য না দিয়ে শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো।

মন্ত্রণালয় সূত্র আরো জানিয়েছে, মালয়েশিয়া সরকার বিদেশি শ্রমিকদের জন্য একটি অনলাইন জব পোর্টাল খুলছে, যার মাধ্যমে সে দেশে নতুন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছে ইনডিপেনডেন্ট ফরেন ওয়ার্কার্স কমিটি। জানা গেছে, নিয়োগের এই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে। বিশেষ করে, নেপাল এবং বাংলাদেশের জন্য এটি অল্প সময়ের মধ্যেই চূড়ান্ত হবে।

এই পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ান কোম্পানি কিংবা ব্যক্তিপর্যায়ে বিদেশি শ্রমিক নিজেরাই নিয়োগ করতে পারবে। যার যেসব ক্যাটাগরির শ্রমিক প্রয়োজন তারা নিজেরাই তা বেছে নিতে পারবে পোর্টালের মাধ্যমে। এই পোর্টালের তদারকি করবে মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়। কেন্দ্রীয়ভাবে এই পোর্টালের নাম প্রাথমিকভাবে দেওয়া হচ্ছে মালয়েশিয়ান রিক্রুটিং এজেন্সি (এমআরএ)। এই পোর্টাল শুধু বিদেশি শ্রমিকদের বিষয়ে কাজ করবে।

এ পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ান নিয়োগকর্তাকে ২ লাখ ৫০ হাজার রিঙ্গিত সিকিউরিটি ডিপোজিট হিসেবে সরকারের কাছে জমা রাখতে হবে। যদি কোনো নিয়োগকর্তা শ্রমিকের পারিশ্রমিক দিতে ব্যর্থ হয় কিংবা নির্যাতন করে অথবা অসদাচরণ করে, তাহলে এই সিকিউরিটি ডিপোজিট থেকে শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। মালিকপক্ষ প্রয়োজন অনুযায়ী ক্যাটাগরিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ করতে পারবে। নতুন আবেদন আসার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এমআরএকে জবাব দিতে হবে।

গত সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার আগে বিটুবি প্লাস চুক্তির আওতায় কর্মী পাঠানো হতো। দেশের ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি এই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করত। তাদের বাইরে অন্য কোনো এজেন্সি সরাসরি লোক পাঠাতে পারত না। এই প্রক্রিয়ায় দেশে এবং মালয়েশিয়ায় নানামুখী অনিয়মের অভিযোগে মালয়েশিয়া সরকার নিয়োগ বন্ধ করে দেয়। পরে কর্মী নিয়োগের নতুন কোনো পদ্ধতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়নি দেশটি।

সর্বশেষ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে এমন স্থবিরতা দেখা গিয়েছিল ২০০৯ সালের পর। বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানির অন্যতম এই বাজার ২০০৯ সালে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে। এরপর আবার ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর জনশক্তি রপ্তানিকারকদের বাদ দিয়ে সরকারিভাবে দেশটিতে কর্মী পাঠাতে জিটুজি চুক্তি করা হয়। এরপর আবারও জনশক্তি রপ্তানিকারকদের যুক্ত করে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের মধ্যে জিটুজি প্লাস (সরকারি-বেসরকারি) সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

দেশের জনশক্তি রপ্তানির ৮০ শতাংশের লক্ষ্যই মধ্যপ্রাচ্য। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য অন্যতম বড় শ্রমবাজার। কিন্তু সৌদিতে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি, আরব আমিরাতে সীমাবদ্ধতা, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে অনিয়মসহ নানা কারণে বিগত কয়েক বছরে জনশক্তি রপ্তানি কমে এসেছে।

প্রজন্মনিউজ২৪/ইমরান হোসাইন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ