বর্তমান রাজনৈতিক সংকটে ‘সাহসী দেশপ্রেমিকদের’ খুব বেশি প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত: ০২ নভেম্বর, ২০২০ ০৫:৫৮:৩০

বর্তমান রাজনৈতিক সংকটে ‘সাহসী দেশপ্রেমিকদের’ খুব বেশি প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল

 

রোববার দুপুরে প্রয়াত নেতা সাদেক হোসেন খোকা স্মরণে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ দেশে সংকট চলছে। এই যে রাজনৈতিক সংকট এই সংকটে খুব বেশি প্রয়োজন সাহস, খুব বেশি প্রয়োজন ধৈর্য্য, খুব বেশি প্রয়োজন দেশপ্রেমের।”

সাদেক হোসেন বর্ণাঢ্য জীবন তু্লে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এটা খুব কষ্টের যে, খোকা ভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে কথা বলতে হচ্ছে। যে মানুষটি সাধারণ জনগন থেকে শুরু করে সমাজের বিশিষ্ট লোকজনের কাছে একই মানুষ ছিলেন, সেই মানুষটি সম্পর্কে কিভাবে কথা বলতে হবে আমার জানা নেই। এতো জনপ্রিয় একজন মানুষ, এতো দেশপ্রেমিক একজন মানুষ, এতো সহনশীল একজন মানুষ আমি আমার জীবনে কম দেখেছি।”

‘‘ উনি ছাত্র জীবনে বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরবর্তিকালে অত্যন্ত সাহসী বীর এবং রনাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, গেরিলা ছিলেন। সেই মানুষটি যখন জনগনের জন্য রাজনীতিতে আসলেন দেখা গেলো তার সেই সম্পৃক্ততাটা অভাবনীয়ভাবে একেবারে মানু্ষের সঙ্গে, মাটির সঙ্গে মিলে গেলো। একেবারে মাটি থেকে উঠে আসা মানুষ ছিলেন খোকা ভাই।”

তিনি বলেন, ‘‘ তিনি সমস্ত সংকীর্ণতার উর্ধ্বে ছিলেন, তিনি রাজনীতির দলকানা নেতা ছিলেন না। আমি তাকে কখনো দেখিনি যে তিনি অন্য দলের নেতাদের সমালোচনা করেছেন। আমাকে সবসময় একটি কথা বলতেন, ভাই কখনো ধৈর্য্য হারাবেন না। অনেক ধাক্কা আসবে, ঘাত আসবে, প্রতিঘাত আসবে-এর মধ্য দিয়ে ধৈর্যের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়াটাই আমাদের কাজ।”

‘‘মানুষের কল্যাণই ছিলো তার লক্ষ্য, মুক্তি এটাই ছিলো তার লক্ষ্য। তিনি জনগনের মানুষ ছিলেন, জনগনের নেতা ছিলেন।”

স্মৃতিচারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ খোকা ভাইয়ের মতো এতো চমৎকার বন্ধুসুলভ মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। আমার মনে আছে উনি যখন গোপীবাগের বাসায় থাকতেন, বাগান ছিলো বাসার মধ্যে। ছোট একতলা বাসা। ঘুম থেকে উঠেননি তখনো। বাসা বোঝাই মানুষ। উনার বিছানায় গিয়ে বসে আছেন অনেকে। এই যে জনগনের নেতা, মানু্ষের নেতা।”

‘‘ আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন। উনি দেশনেত্রীকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। আমি যখন তার সঙ্গে শেষ বার দেখা করি –উনি আমাকে বলেছিলেন, কখনো ম্যাডামকে ছেড়ে যাবেন না, ম্যাডামের সঙ্গে থাকবেন। এই কথাগুলো নিয়ে আমরা পথ চলছি। উনি আমার বয়সের ছোট হলেও আমি মনে করি উনি আমার নেতা ছিলেন। তার আদর্শকে আমি ধারণ করি, সেভাবে চলার চেষ্টা করি এখন।”

প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকা চিরকাল দেশের মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন বলে মন্তব্য করে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন মির্জা ফখরুল।

সাদেক হোসেন খোক স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার প্রথম মৃত্যু্বার্ষিকী উপলক্ষে ৮দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তৃতীয়তলায় আবদুস সালাম হলে তার জীবনীর ওপর নির্মিত প্রামাণ্য চিত্র ‘গেরিলা থেকে জননেতা’ প্রদর্শিত হয়।

পরে নিচতলায় ক্লাব মিলনায়তনে খোকার ওপর দুইদিন আলোকচিত্র প্রদর্শনীরও উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব।

অনুষ্ঠানে কবি শামসুর রহমানের গেরিলা কবিতা পাঠ করেন শাকিলা মবিন মৃধলা।

২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে স্নোয়ান ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান খোকা। পরে দেশে মরদেহ এনে জুরাইন কবরাস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সাদেক হোসেন খোকা মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহবায়ক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম ও সাদেক হোসেন খোকার বড় ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে কল্যান পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না,  গণস্বাস্থ্য সংস্থা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, বিএনপির সেলিমা রহমান, শওকত মাহমুদ, জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, হাবিব উন নবী খান সোহেল, জয়নাল আবেদীন, শিরিন সুলতানা, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, নাসির উদ্দিন অসীম, আমিনুল হক, কাদের গনি চৌধুরী, সাদেক আহমেদ খান, শাহ নেছারুল হক, ফরিদা ইয়াসমীন, নজরুল ইসলাম তালুকদার, লেবার পার্টি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাদেক হোসেন খোকার ছোট ছেলে ইশফাক হোসেন, চাচাতো ভাই মাশরুর হোসেনসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ও প্রয়াত নেতার বন্ধু-বান্ধবরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রজন্মনিউজ২৪/মেহেদী

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ