উম্মতের প্রতি প্রিয় নবীর মমতা

প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর, ২০২০ ১০:৫৮:৫৬

উম্মতের প্রতি প্রিয় নবীর মমতা

প্র্রজন্মনিউজ ডেস্ক : উম্মতের জন্য মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ছিল অতুলনীয় মমতা ও ভালোবাসা। উম্মতের প্রতি মহানবী (সা.)-এর স্নেহ ও ভালোবাসা সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে একজন রাসুল এসেছেন, তিনি তোমাদের বিপন্নে কষ্ট পান, তোমাদের কল্যাণকামী ও মুমিনদের প্রতি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১২৮)

নামাজের পর উম্মতের জন্য দোয়া : প্রিয় নবী (সা.) দোয়ার সময় সর্বদা উম্মতের কথা স্মরণ করতেন। সবার জন্য তাঁর মন থাকত ব্যাকুল। তাই প্রতিদিন প্রত্যেক নামাজের পর উম্মতের গুনাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন তিনি। আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘রাসুল (সা.)-এর অন্তর প্রসন্ন দেখলে আমি বলতাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমার জন্য দোয়া করুন।’

তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আয়েশার আগের ও পরের, গোপন ও প্রকাশ্য সব গুনাহ ক্ষমা করুন।’ রাসুল (সা.)-এর দোয়া শুনে আয়েশা (রা.) হেসে নিজের কোলে মাথা নিচু করে ফেলতেন।

তাঁর হাসিমাখা মুখ দেখে রাসুল (সা.) বলতেন, ‘আমার দোয়াতে কি তুমি আনন্দিত হয়েছ?’ আয়েশা (রা.) বলতেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, এটা কেমন কথা, আপনার দোয়ায় আমি আনন্দিত হব না?’ তখন রাসুল (সা.) বলতেন, ‘আল্লাহর শপথ, এভাবেই আমি প্রত্যেক নামাজের পর আমার উম্মতের জন্য দোয়া করি।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৭১১১)

উম্মতের জন্য বিশেষ সুপারিশ : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সব নবীর এমন কিছু দোয়া আছে, যা আল্লাহর কাছে কবুল হয়। সব নবী দ্রুত নিজেদের জন্য দোয়া করেছে। আমি তা কিয়ামতের দিন উম্মতের সুপারিশের জন্য গোপন করে রেখেছি। আমার উম্মতের মধ্যে যে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক না করে মৃত্যুবরণ করবে, সে ইনশাআল্লাহ, আমার সুপারিশ লাভ করবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৯৯)

উম্মতের চিন্তায় উদ্বিগ্ন : আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইবরাহিম (আ.)-এর কথা তিলাওয়াত করলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! তারা অনেক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে, তাই যারা আমার অনুসরণ করবে তারা আমার দলভুক্ত, আর যারা আমার অবাধ্য হবে (তাদের ব্যাপারে) আপনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৩৬ )। আর ঈসা (আ.) বলেছেন, ‘আপনি তাদের আজাব দিলে তারা আপনার বান্দা, আর ক্ষমা করলে আপনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ১১৮)

অতঃপর রাসুল (সা.) দুই হাত তুলে বলেন, ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মত! আমার উম্মত!’ আল্লাহ তাআলা বললেন, ‘হে জিবরাইল, মুহাম্মদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করো, আপনি কাঁদছেন কেন?’ মহান আল্লাহ সব কিছুই অবগত আছেন। জিবরাইল (আ.) এসে জিজ্ঞেস করল। রাসুল (সা.) তাঁকে নিজের কথা বললেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে জিবরাইল, তুমি মুহাম্মদের কাছে গিয়ে বলো, আমি শিগগির আপনার উম্মতের ব্যাপারে আপনাকে সন্তুষ্ট করব এবং আমি আপনাকে কষ্ট দেব না।’ (মুসলিম, হাদিস : ২০২)

জাহান্নামে ঝাঁপিয়ে পড়া মানুষকে রক্ষা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমার ও মানুষের উদাহরণ হলো ওই ব্যক্তির মতো, যে আগুন জ্বালিয়েছে। আগুন চারপাশ আলোকিত করলে কীটপতঙ্গ এসে ভিড় জমাতে থাকে।

পতঙ্গগুলো আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর ওই লোক তাদের সেখান থেকে তুলে ছুড়ে ফেলে। আবার তারা সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনি তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করেন। আমি তোমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাধা দিই। আর মানুষ সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়ে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৮৩)

অনাগত উম্মতকে দেখার বাসনা : অনাগত উম্মতের প্রতি রাসুল (সা.)-এর ছিল তীব্র ভালোবাসা। কেননা তারা না দেখেই রাসুলের জন্য সাক্ষ্য দেবে। তাই তাদের দেখার বাসনা ছিল তাঁর। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার ভাইদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ইচ্ছা করছে।’ সাহাবিরা বলল, আমরা কি আপনার ভাই নই? রাসুল (সা.) বললেন, ‘তোমরা তো আমার সাহাবি তথা সঙ্গী। আমার ভাই হলো যারা আমার ওপর ঈমান আনবে; কিন্তু আমাকে দেখবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১২৭১৮)

উম্মতের পক্ষ থেকে কোরবানি : উম্মাহর সবার পক্ষ থেকে রাসুল (সা.)-এর কোরবানি ছিল ভালোবাসার চূড়ান্ত নমুনা। তিনি পুরো মুসলিম উম্মাহর পক্ষ থেকে নিজেই কোরবানি করতেন। আবু রাফে (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) কোরবানির সময় দুটি মোটাতাজা শিংবিশিষ্ট দুম্বা ক্রয় করতেন। সালাত আদায় করে খুতবা প্রদান করতেন। অতঃপর তিনি সালাতের স্থানে দাঁড়ানো থাকতেই একটি দুম্বা নিয়ে আসা হতো। তা নিজ হাতে ছুরি দিয়ে জবাই করে বলতেন, ‘হে আল্লাহ, এটা আমার পুরো উম্মতের পক্ষ থেকে, যারা আপনার তাওহিদের সাক্ষ্য দিয়েছে এবং আমার রিসালাত পৌঁছে দেওয়ার সাক্ষ্য দিয়েছে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৭৭৮২)

শরিয়তের বিধান প্রণয়নে সহজতা : প্রিয় নবী (সা.) সর্বদা চেষ্টা করতেন শরিয়তের বিধি-বিধান পালনের কারণে যেন উম্মাহর কোনো ধরনের দুঃখ-কষ্ট না হয়। এ জন্য অনেক বিধান তিনি উম্মতের জন্য সহজ করেছেন। মিরাজের রাতে ৫০ ওয়াক্ত নামাজকে মাত্র পাঁচ ওয়াক্ত করা হয়েছে। মিসওয়াকের বহু মর্যাদা থাকলেও উম্মতের কষ্টের কথা বিবেচনা করে তা আবশ্যক করা হয়নি। সর্বাধিক ফজিলত থাকার পরও অনেক সময় তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি, যেন তা উম্মতের ওপর ফরজ হয়ে না যায়। আরো বহু গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ আমল তিনি উম্মতের ওপর ফরজ হওয়ার আশঙ্কায় ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি সব সময় উম্মতের কষ্ট লাঘবে সচেষ্ট ছিলেন। তাঁর মমতাবোধ ও অনুকম্পার পূর্ণতা প্রকাশিত হবে কিয়ামতের দিন উম্মতের জন্য জান্নাতের সুপারিশ করার মাধ্যমে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের তাওফিক দান করুন। আমিন।


প্রজন্মনিউজ/শেখ নিপ্পন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ