জাবিকে মাদকের হটস্পট বানিয়েছিল মামুন

প্রকাশিত: ০৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ০৪:৪৬:০০ || পরিবর্তিত: ০৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ০৪:৪৬:০০

জাবিকে মাদকের হটস্পট বানিয়েছিল মামুন

অনলাইন ডেস্ক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে ধর্ষণের মূল পরিকল্পনাকারী মামুনুর রশিদ মামুন। তিনি এই দম্পতির পূর্বপরিচিত। র‌্যাব বলছে, মামুন বহিরাগত হলেও জাবির ক্যাম্পাসে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। মাদক কারবারি মামুন কক্সবাজার থেকে ইয়াবা এনে বিক্রি করতো। ইয়াবা বিক্রির হটজোন বানিয়েছিল জাবি ক্যাম্পাস। ২০১৭ সাল থেকে ক্যাম্পাসের সিনিয়র প্রভাবশালী শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় সেখানে মাদক কারবার করে আসছে। ক্যাম্পাসে এর আগেও নারী নিপীড়ন, ধর্ষণসহ শ্লীনতাহানির ঘটনায় জড়িয়েছে সে। রাজধানীর ফার্মগেট ও নওগাঁ থেকে এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীসহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

বলেন, ৩রা ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মীর মশাররফ হোসেন হলের এ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঘটনার রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে।

এই ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে গণধর্ষণ মামলা করেন। উক্ত ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র‌্যাব।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মামুন প্রায় ৬ থেকে ৭ বছর ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সে টেকনাফ হতে প্রতি মাসে কয়েক দফায় প্রায় ৭-৮ হাজার ইয়াবা এনে তা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু মাদকসেবী শিক্ষার্থীকে সরবরাহ করতো। এ ছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাদক বিক্রির সুবাদে মামলার ১নং আসামি মোস্তাফিজুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র ছাত্রদের সঙ্গে তার সখ্যতা তৈরি হয় এবং মাঝে মাঝে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে মাদকসহ রাত্রিযাপন করতো এবং অন্য ছাত্রদের সঙ্গে মাদক সেবন করতো বলে জানায়। ভুক্তভোগীর স্বামীর সঙ্গে মামুন একই এলাকায় বসবাসের কারণে বিগত ৩-৪ বছর পূর্বে তাদের মধ্যে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে সে মাঝে মধ্যে ভুক্তভোগীর স্বামী জাহিদ মিয়া ওরফে রবিনের মাধ্যমেও বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় মাদক সরবরাহ করাতো মামুন। কিছুদিন আগে মামুনের থাকার জায়গার সমস্যা সৃষ্টি হলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে ফোন দিয়ে কিছুদিনের জন্য তাদের বাসায় অবস্থান করবে বলে জানায়। পরবর্তীতে তাদের ভাড়াকৃত বাসায় সাবলেট হিসেবে ৩-৪ মাস অবস্থান করে। তাদের পরিবারে সঙ্গে সখ্যতা তৈরি হয়। ঘটনার আগে মামলার ১নং আসামি মোস্তাফিজুর মামুনের নিকট অনৈতিক কাজের ইচ্ছাপোষণ করলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মামুন গত ৩রা ফেব্রুয়ারি বিকালে ভুক্তভোগীর স্বামীকে ফোন দিয়ে জানায় মোস্তাফিজুর নামের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে তার থাকার ব্যবস্থা করেছে। সে এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকবে। এরপর মামুন ভুক্তভোগীর স্বামীকে সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে বলে। ওই নারীর স্বামী মামুনের কথামতো ওইদিন সন্ধ্যার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে দেখা করে। পরবর্তীতে মামুন তার অন্যতম সহযোগী মোস্তাফিজ, মুরাদ, সাব্বির, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মামুন কৌশলে ওই নারীর স্বামীকে তাদের বাসায় থাকাকালীন তার ব্যবহৃত কাপড় আনতে তার স্ত্রীকে ফোন দিতে বলে। পরে তার স্বামী ফোন করে মামুনের ব্যবহৃত কাপড় একটি ব্যাগে করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে আসতে বলে। রাত আনুমানিক নয়টায় ভুক্তভোগী নারী তার স্বামীর কথামতো মামুনের ব্যবহৃত কাপড়সমূহ একটি ব্যাগে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে আসে। ওই সময় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মামুন ও মোস্তাফিজ কৌশলে মুরাদকে ও মামুনের ব্যবহৃত কাপড়ের ব্যাগসহ জাহিদকে হলের ৩১৭নং রুমে নিয়ে যেতে বলে। মুরাদ ওই নারীর স্বামীকে নিয়ে হলের রুমে অবস্থান করে। এসময় মামুন ও মোস্তাফিজ ভুক্তভোগী নারীকে কৌশলে হলের পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে জোরপূর্বক পর্যায়ক্রমে গণধর্ষণ করে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে বাসায় চলে যেতে বলে। এরপর মামুন ও মোস্তাফিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের রুমে গিয়ে তার স্বামীকেও বাসায় চলে  যেতে বলে। পরে তার স্ত্রীর কাছ থেকে গণধর্ষণের ঘটনা জানতে পেরে থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে মামুন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় আত্মগোপন করে। মুরাদ ধর্ষণের বিষয়টি ঘটনার সময় না জানলেও থানায় মামলা রুজু হওয়ার পর সে গ্রেপ্তার এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পালিয়ে নওগাঁ এলাকায় আত্মগোপনে থাকে।

মামুন প্রায় ২০ বছর আগে ঢাকার জুরাইন এলাকায় এসে গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। এরপর আশুলিয়া এলাকায় এসে গার্মেন্টসের চাকরির পাশাপাশি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু মাদকসেবী শিক্ষার্থীকে মাদক সরবরাহ করার সুবাধে তাদের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি হয়। পরে সে গার্মেন্টসের চাকরি ছেড়ে ২০১৭ সাল থেকে পুরোপুরি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মাদক সংক্রান্ত ৮টি মামলা রয়েছে এবং ইতিপূর্বে এ সকল মামলায় একাধিক বার কারাভোগ করেছে। মুরাদ জাবিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ  হোসেন হলে থাকতো। তার বিরুদ্ধে নওগাঁ থানায় মারামারি সংক্রান্তে ১টি জিডি রয়েছে বলে জানা যায়।


প্রজন্মনিউজ২৪/এফএইচ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ