প্রকাশিত: ০৩ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:২২:০৮ || পরিবর্তিত: ০৩ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:২২:০৮
প্রশ্ন: তামিম ইকবাল বিসিবিতে কী হতে চেয়েছিলেন?
উত্তরটা খুবই সহজ। বিসিবির সভাপতি হতে চেয়েছিলেন তামিম ইকবাল। নিজের সেই ইচ্ছের কথা আয়েশ করে জানানও দিয়েছিলেন তিনি। সেই লক্ষ্য স্থির করে কৌশল সাজাচ্ছিলেন। সামনে বাড়ছিলেন। কিন্তু এমন জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনের লড়াইয়ে জিততে হলে সঙ্গের সঙ্গী-সাথী পছন্দও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তামিমের সেই রানিংমেটস চয়েসটা ভুল ছিল।
সেই ভুলের গোলকধাঁধায় পড়েই তামিম বিসিবির নির্বাচনের আগেই বিদায় হয়ে গেলেন! আনুষ্ঠানিকভাবে লেখা রয়েছে তামিম ইকবাল বিসিবির নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। সরে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা জানাচ্ছে, তিনি নির্বাচনের খেলা মাঠে গড়ানোর আগেই প্রস্তুতি মঞ্চ থেকেই ওয়াকওভার দিয়েছেন।
কোনো সন্দেহ নেই তামিম ইকবাল বিসিবির ক্রিকেট পরিচালক বা পরিচালনার দায়িত্ব পেলে তাতে বাংলাদেশের ক্রিকেট অনেক লাভবান হতো। তার ক্রিকেট জ্ঞান সন্দেহাতীতভাবে বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় সম্পদ। কিন্তু বিসিবির নির্বাচনে জিততে হলে তাকে কেন দলবেঁধে জোট বাঁধতে হবে। তামিম ইকবাল, এই নামটাই তো বিসিবির নির্বাচনে জেতার জন্য যথেষ্ট। সংকট তামিম বাঁধিয়েছেন অন্যত্র। তিনি বিসিবিতে একা নয়, নিজের পুরো সভাসদ নিয়ে বড় কর্তার চেয়ারে বসতে চেয়েছিলেন। মূলত এই বিলাসী চিন্তাই তাকে ডুবিয়েছে। আমি নিশ্চিত তামিম যদি বিসিবিতে এককভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিতেন তাহলে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হতেন। কিন্তু তিনি তার আশপাশের মধুচক্রের ফাঁদে পড়ে ‘ক্রিকেট নেতা’ হওয়ার স্বপ্ন দেখতে গিয়ে দুঃস্বপ্নের কবলে পড়েন। তামিমকে কেন্দ্র করে, তার মাথায় ছাতা মেলে বিসিবির মসনদে বসার আবদার করেন কয়েকজন ‘পলিটিক্যাল কিডস’! আর রাজনৈতিক চাপে হোক অথবা সামনের সময়ের নিজের রাজনৈতিক পথ ঝলমলে করতে তামিম ইকবালও তাদের আবদারের দরখাস্ত মঞ্জুর করে বসেন।
তামিমের মতো এমন অভিজ্ঞ একজন ব্যাটসম্যানও শট সিলেকশনে ভুল করে বসলেন।
আর তাই, এই নির্বাচন থেকে তিনি আগেভাগেই আউট!
নির্বাচনের সূচি ঘোষণার পর দেখা গেল বিভিন্ন ক্লাব থেকে কাউন্সিলর হিসেবে এমন ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, যারা কখনো এসব ক্লাবের চৌকাঠে পা-ও রাখেননি! অথচ তারাই এই ক্লাবের মনোনীত মান্যবর কাউন্সিলর এবং সেই মর্যাদা বুকে ঝুলিয়ে তারা বিসিবির নির্বাচনে পরিচালক পদে প্রার্থী হলেন। দেখে মনে হচ্ছে বিসিবির পরিচালক পদ এখন জাতীয় সংসদের এমপি পদের চেয়ে কোনো অংশ কম নয়! জেলা এবং বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে কাউন্সিরশিপ মনোনয়নে চলেছে পলিটিক্যাল পাওয়ারের খেলা। কখনো এই ক্ষমতা দেখিয়েছেন জাতীয় রাজনীতিতে বড় রাজনৈতিক দলের নেতারা। আবার ক্ষমতা দেখানোর এখতিয়ার আছে এই যুক্তি দেখিয়ে বর্তমান ক্রীড়া প্রশাসন জেলা প্রশাসকের পাঠানো তালিকায় কাটাকুটি করে নিজ পছন্দে নিজ লোককে কাউন্সিলর বানিয়েছে।
উভয়পক্ষের এই ‘পাওয়ার গেম’-এর ফাইটে তামিম ইকবাল সেই যে গর্তে পড়লেন আর বেরিয়ে আসতে পারলেন না। লম্বা সময় ধরে সমঝোতা চালালেন। রাতভর বৈঠক হলো। তামিম ইকবাল পক্ষ বিতর্কিত ১৫ ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ ফিরে পাওয়ার পর একসময় মনে হচ্ছিল আপস এবং সমঝোতার পথেই যাচ্ছে বিসিবির নির্বাচন। আপনাদের অতজন আমাদের অতজন, সম্প্রীতির এই সুরের টুংটাং সংগীত বাজছিল নির্বাচনকে ঘিরে। কিন্তু নিজ প্যানেলে ‘পলিটিক্যাল কিডসদের’ জায়গা দিতে গিয়ে তামিম দেখলেন, এতদিন যে ক্লাব সংগঠকরা তাকে এই নির্বাচনে কাঁধে নিয়েছিলেন তাদের যে আর জায়গা হচ্ছে না! নিজের প্যানেলেই তামিম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেন। শোনা গেল বঞ্চিত ক্লাব সংগঠকরা নিজেরাই আরেকটি প্যানেল দেবে। আর ক্রীড়া প্রশাসন সমর্থিত আমিনুল ইসলামের প্যানেলের সঙ্গে তামিমের ক্লাব কোটার পরিচালক পদের ভাগাভাগির সমঝোতাও একসময় ভেস্তে গেল। ঠিক তখনই বিসিবির সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ (যিনি এই নির্বাচনে বর্তমান ক্রীড়া প্রশাসনের খেলোয়াড়) গুগলি ছুড়লেন। বিতর্কিত ১৫ ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট করলেন। আদালত সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বিতর্কিত ১৫ ক্লাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলেন। এই ১৫ ক্লাব বিসিবির নির্বাচনেও অংশ নিতে পারবে না। এই ১৫ ক্লাব ছিল নির্বাচনে তামিমের ভোট ব্যাংক।
তাহলে হিসাব কী দাঁড়াল?
নিজ প্যানেলে সম্ভাব্য বিদ্রোহ। ‘পলিটিক্যাল কিডসদের’ নিয়ে প্যানেল ভারী করা। সংবাদ সম্মেলনের ডায়াসে রাজনীতিকদের রেখে রাজনীতির ভাষায় দেখে নেব মার্কা হুমকি-ধমকি। বিরোধী পক্ষের সঙ্গে পরিচালক পদের ভাগাভাগির সমঝোতা ভেস্তে যাওয়া এবং ১৫ ক্লাবের ভোট ব্যাংক হারানো- একসঙ্গে উড়ে আসা এত বাউন্সার সামাল দিতে পারেননি তামিম ইকবাল।
গত অক্টোবরের এই সময় মিরপুরে হোম অব ক্রিকেটে যখনই পরিদর্শনে অথবা যেকোনো কাজে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ যেতেন, সেখানে আবশ্যিকভাবে তার সঙ্গী হিসেবে পাশে দেখা যেত তামিম ইকবালকে। আসিফ মাহমুদ নিজেই বলেছেন তিনি তামিমের খেলার বড় ভক্ত। সে সময় ক্রিকেট উন্নয়ন নিয়ে তামিমের অনেক পরামর্শ শুনতেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। আর এবারের অক্টোবরে আমাদের দেখতে হচ্ছে এবং লিখতে হচ্ছে আসিফ মাহমুদ বনাম তামিম ইকবাল!
বিসিবির নির্বাচনে রাজনীতি এবং রাজনৈতিক শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে জিততে চেয়েছিলেন তামিম। ওটাই তামিমের ভুল শট সিলেকশন! আর ভুল শট সিলেকশন মানেই তো স্টাম্প ছত্রখান; বোল্ড আউট!
বিসিবির এবারের নির্বাচনের স্কোরকার্ড জানিয়ে দিল, তামিম বোল্ড ০!
নোট অব ডিসেন্টের মাধ্যমে বিএনপির স্বৈরাচার হওয়ার চিন্তাভাবনা বোঝা যায়: তাহের
বরগুনাতে চাঁদা দাবি ব্যবসায়ীকে প্রাণনাশের হুমকি
ফের জামায়াত আমির নির্বাচিত হলেন শফিকুর রহমান
বড় দলের ‘দয়া’ নিয়ে মাঠে নামা প্রার্থীদের সতর্ক করে যা বললেন পিনাকী ভট্টাচার্য
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের সুযোগ নেই: মির্জা ফখরুল
মাইশা মৃত্যুর বছর পেরোলেও দৃশ্যমান হয়নি সড়কের নিরাপত্তা কার্যক্রম
ইসির প্রতীক তালিকায় যুক্ত হলো শাপলা কলি
বিএনপির এখন ‘না’ বলার কোনো অপশন নাই: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী