খুলনা মহানগরীতে হিযবুত তাহরীর প্রধানসহ ৪ সদস্য গ্রেফতার

প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০৫:০৭:৪৮

খুলনা মহানগরীতে হিযবুত তাহরীর প্রধানসহ ৪ সদস্য গ্রেফতার

মো:মাসুম বিল্লাহ ইমরান, খুলনা প্রতিনিধি: কেএমপি'র পুলিশ কমিশনার কর্তৃক গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে খুলনা মহানগরী থেকে বিপুল পরিমান উগ্রবাদী বই, লিফলেট ও জঙ্গী সংশ্লিষ্ট ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীর প্রধানসহ সক্রিয় ০৪ জন সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

আজ রবিবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর ১২ টায় পুলিশ কমিশনার জনাব মো: মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা মহোদয় কর্তৃক খুলনা মহানগরীর হরিণটানা থানাধীন খানজাহান নগর এলাকা হতে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার কৃতরা হলেন: মো: আনিসুর রহমান রুহুল আমিন রকি(৩৬),  মো: শাকিল আহম্মেদ(২৬), মো: রিজভী আজিম খান(২৭), মেহেদী হোসেন সালিত (২৪)। 

তাদের সাথে ০৪ টি ল্যাপটপ, ০৬ টি মোবাইল ফোন,  ০২ টি পেনড্রাইভ, ০১ টি এটিএম কার্ড এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন 'হিজবুত তাহরীর' সংশ্লিষ্ট উগ্রবাদী বই, লিফলেট ও জঙ্গি সংশ্লিষ্ট  অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করে পুলিশ।

তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে এবং উদ্ধারকৃত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও ডকুমেন্ট পর্যালোচনায় জানা যায়, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ খুলনা অঞ্চলে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তহরীর এর নীতি আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছিল। মূলত তারা প্রচলিত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও সংবিধান মানে না। এ লক্ষ্যে তারা সমাজের বিভিন্ন পেশাজীবি পর্যায়ে এবং বিশেষত স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং সমাজের মেধাবী মানুষদের উগ্রবাদী আদর্শে প্রভাবিত করে জঙ্গি কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দিয়ে শতাভাগ ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়।

পুলিশ কমিশনার বলেন, এদের মধ্যে  মো: আনিসুর রহমান রুহুল আমিন রকি(৩৬), পিতা-মো:  আতিয়ার রহমান। তিনিই মূলত খুলনা অঞ্চলে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীরের কার্যক্রম প্রচার প্রসারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তার নিজ বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়। তার বাবা ধান-চাল ব্যবসায়ী। তিনি কুষ্টিয়া সরকরি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এর পর ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ঢাকা এর ফার্মেসী বিভাগ হতে অনার্স সম্পন্ন করেন।

এরপর তিনি জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে যান। ফলশ্রুতিতে ইতোপূর্বেও ২০১১ ও ২০১৩ সালে ডিএমপি’র গুলশান থানা এবং ২০১৫ সালে ডিএমপি’র ভাটারা থানা কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে যথাক্রমে ০৩, ০৭ ও ১৩ মাস কারাভোগ করেন। তিনি তার সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে নির্দেশনা গ্রহণপূর্বক জুম মিটিং ও গোপন বৈঠকের মাধ্যমে কর্মী সংগ্রহ এবং রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বর্তমানে রোজডেল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সোনাডাঙ্গা ১ম ফেজ, সোনাডাঙ্গা মডেল, কেএমপি, খুলনাতে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থেকে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

মো: শাকিল আহম্মেদ, তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরাকারি কর্মচারী। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। বিগত ০৬/০৭ মাস যাবৎ তিনি হিজবুত তাহরীর সঙ্গে জড়িত আছেন বলে জানা যায়। তিনি লোহাগড়া, নড়াইল সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ  হতে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে সরকারি চকুরীতে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছিলেন।

মো: রিজভী আজিম খান, তার নিজ জেলা পটুয়াখালী। বাবা প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকুরী করেন এবং মা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। বিগত ০৬/০৭ মাস যাবৎ তিনি হিজবুত তাহরীর সঙ্গে জড়িত আছেন বলে জানা যায়। তিনি বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা (বিজ্ঞান বিভাগ) হতে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ হতে অনার্স সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি সরকারি শিক্ষক হিসেবে প্যারেন্টন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সোনাডাঙ্গায় কর্মরত আছেন।

ৎমেহেদী হোসেন সালিত তার পিতা মৃত। মাতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষিকা। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। বিগত ০৬/০৭ মাস যাবৎ তিনি হিজবুত তাহরীর সঙ্গে জড়িত আছেন বলে জানা যায়। তিনি সরকারি কেসি কলেজ, ঝিনাইদহ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ হতে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে অধ্যয়নরত আছেন।

উল্লেখ্য যে, মো: আনিসুর রহমান রুহুল আমিন রকির সাথে তাদের তিন জনের পরিচয় ঘটে। এরপর থেকেই তার নির্দেশনায় উল্লেখিত আটক ব্যক্তিগণ জুমসহ বিভিন্ন অ্যাপস্ এবং প্রটেকটিভ টেক্সটের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীর এর জন্য  সদস্য সংগ্রহ ও জঙ্গিবাদের দীক্ষা প্রদান চালিয়ে যাচ্ছিলো। এ সময় তাদেরকে আটক করা হয়।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী, নাশকতকারী, জঙ্গী, জুয়া, মাদক ব্যবসায়ী ও ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার রয়েছে। অপরাধ মুক্ত সমাজ গঠনে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ বদ্ধপরিকর।

এ সময়  উপস্থিত ছিলেন কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এএন্ডও) জনাব সরদার রকিবুল ইসলাম, বিপিএম-সেবা; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) জনাব মো: সাজিদ হোসেন; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক এন্ড প্রটোকল) জনাব মোছা: তাসলিমা খাতুন; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) জনাব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত); বিশেষ পুলিশ সুপার (সিটিএসবি) জনাব রাশিদা বেগম, পিপিএম-সেবা (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত); ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ডিবি) জনাব বি.এম নুরুজ্জামান, বিপিএম (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত); ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস অ্যান্ড সাপ্লাই) জনাব এম এম শাকিলুজ্জামান (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত); অতি: ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) জনাব মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন হাছান, পিপিএম-সেবা (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) এবং অতি: ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা বিভাগ) জনাব শেখ জয়নুদ্দীন।


প্রজন্মনিউজ২৪/এফএ
 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ