দুর্নীতি এখন রন্ধ্রে রন্ধ্রে , কেরানিও শতকোটি টাকার মালিক 

প্রকাশিত: ১১ জুন, ২০২৪ ০২:৫২:১৪

দুর্নীতি এখন রন্ধ্রে রন্ধ্রে , কেরানিও শতকোটি টাকার মালিক 

নিউজডেস্ক: রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে দুনীতি । এখন চারদিকে শুধুই দুনীতির খবর।কোটি টাকা না , শত কোটি , হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির খবর পাওয়া যাচ্ছ । কিভাবে এত টাকার মালিক হলেন তারা তা নিয়ে খুব বেশি অনুসন্ধানের কথা শোনা যায় না । আগে যেখানে এক কোটি টাকার কথা শুনলেও অনেকে চমকে উঠছেন,এখন সেখানে হাজার হাজার কোটি টাকার খবরেও কেউ অনুসন্ধান করছে না। সর্বশেষ নজরে এলো হোমিও প্যাথি ডাক্তার ডা.দিলিপ রায়ের দুনীতির খবর। কিভাবে তিনি এত টাকার মালিক হলেন সেটার অনুসন্ধান জরুরী। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন , যে অভিযোগ গুলো আছে সেগুলো অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে দুনীতির সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা তালিকা করে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। 

সাবেক এক মন্ত্রীর প্রশ্রয়ে স্বাস্থ্যখাতে ঠিকাদার মিঠুর উথান হয়েছে । দেশের বাইরে তার হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। নিম্মমানের যন্ত্রপাতি এবং অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি করে তিনি হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে নিউজ করতে গিয়ে হুমকিতে পড়তে হয়েছে সাংবাদিকদেরও। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীরও অনেক কর্মকর্তা তাকে প্রটেকশন দিয়েছেন।  এরপর এলো ড্রাইভার মালেকের শত শত কোটি টাকার সম্পদের কথা। সাবেক একজন মহাপরিচালকের ড্রাইভার হিসেবে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেনাকাটাসহ সব সেক্টরেই তার হাত ছিল। একজন ড্রাইভার কিভাবে এত টাকার মালিক হলেন। এর পর এলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (পরিচালক) এডুকেশনে বিভাগে কেরানি আফজালের কাহিনী। কানাডায় তার বাড়ি আছে। কেরানি কিভাবে এত বিপুল বিত্তবৈভরের মালিক হলেন সেটাও এখনো অজানা । দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবার মাহমুদ বলেছিলেন, এসব দুর্নীতিবাজদের মুল নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্টান হল সচিবলায়। সচিবালয় থেকে এগুলো বন্ধ করা না গেলে এদের কখনই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। ঠিক তাই হচ্ছে । স্বাস্থ্যের মতো সব জায়গায় দুর্নীতি ভাগ পায় সবাই । ফলে এখন মন্ত্রণালয়ও কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। গত নির্বাচনের আগে আমলা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দুই শতাধিক ব্যক্তির দুর্নীতির তালিকা ছাপা হয়েছিল। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে তারা এখন আরও বেশি বেপরোয়া।

দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার জহিরুল হক বলেন , আমরা নিজেরাও অনুসন্ধান করে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। পাশাপাশি কারোর বিরুদ্ধে মিডিয়ায় খবর এলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা তদন্ত করে দুর্নীতি বাজদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। কাউকে ছাড় দেবো না’। 

অথচ স্বাস্থ্য খাতে যাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়া কথা সেই চিকিৎসকরাই বঞ্চিত হচ্ছেন। এখন হাসপাতালে অনেক শিক্ষকের পদ শূন্য । ছাত্ররা সুশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষকদের পদোন্নতি হচ্ছে না । মেধাবীরাও আসতে আগ্রহী হচ্ছেন না । একজন চিকিৎসকের চাকরি নেওয়ার পর অধ্যাপক হতে আর চাকরির বয়স থাকে না। দলবাজ না হলে পদোন্নতিও হয় না । পুরো স্বাস্থ্য খাতে যেন অশনি সংকেত । চিকিৎসকরাও কাজে উৎসাহ হারাচ্ছেন ক। জুনিয়রদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন অনেক। ফলে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না । বিশেষজ্ঞরা  বলছেন, এখানে দুর্নীতির দেখার কেউ নেই।   

বিএমএ মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক দুলাল বলেন, আসলে দুর্নীতি এমন  ভয়াবহ পর্যায়ে গেছে।যারা দুর্নীতি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে দুর্নীতি বেড়ে গেছে। অনেক বড় কর্মকর্তাও এর সঙ্গে জড়িত । সবাইকে জবাবদিহিতায় আনতে না পারলে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না। 

সর্বশেষ দুর্নীতির তথ্য সামনে আসে ডা. দিলীপ কুমার রায়ের। পনের  বছরের ব্যবধানে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. দিলীপ কুমার রায়। রাজনীতির জাদুর ছোঁয়ায় তিনি হোমিও মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক থেকে হয়েছেন  বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথী বোর্ডের চেয়ারম্যান ও। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারে সিদ্ধহন্ত দিলিপ  কুমার রায় টানা পাচঁ মেয়াদে ১৫ বছর ধরে হোমিও  বোর্ডের চেয়ারম্যান পদ দখলে রেখেও গড়েছেন রেকর্ড। 

বোর্ডে দুর্নীতি হালাল করতে নীতিকে পাল্টে অনিয়মকেও তার ব্যক্তিগত নিয়মে পরিনত করেছেন। চা-পোষা হোমিও চিকিৎসক সেই দিলীপ কুমার এখন রাজনীতিতে বড় নেতা, স্বর্ণ,ডায়মন্ড, ইটভাটা ,খাদ্য ও ওষুধের এক্সেসরিজের ব্যবসায়ীও । ফরিদপুরের বোয়ালমারী এলাকার ধোপা পরিবারের সন্তান দিলীপ কুমার এখন প্রতিষ্ঠিত এক স্বর্ণ ও হিরা ব্যবসায়ীর নাম। কারখানা  গড়ে ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছের খাদ্য , ওষুধ ও ওষুধের এক্সসরিজ খাতেও । অথচ ৮০ এর দশকে হোমিও প্যাথী মেডিকেল কলেজে ছিলেন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী । পাশাপাশি হাঁটতেন রাজনৈতিক এক নেতার অনুসারী হয়ে । এরপর দিলীপ কুমারের উত্থান যত না আকাশচুম্বী ততই রহস্যে ঘেরা । 

অথচ ২০১৫ সালের ৩০ জুন ডা. দিলীপ কুমার রায়কে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) । অভিযোগ অনুসন্ধান করেন দুদকের উপ-পরিচালক এসএম মফিদুল ইসলাম। তার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দিলীপ কুমার রায়কে অব্যাহতি দেয় কমিশন। 

এ বিষয় জানতে চাইলে ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেছেন , আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি কোন কলেজে কাউকে চাকরি দিতে পারি না। এই চাকরি দেন ডিসিরা । সামনে আওয়ামী লীগের সম্মেলন আসছে । সে কারণে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।


প্রজন্মনিউজ২৪/এম আই এম

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ