রংপুরে ভুয়া এতিম দেখিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৯ জুন, ২০২৪ ১১:৩৩:০৪

রংপুরে ভুয়া এতিম দেখিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: 
রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলায় ভুয়া এতিম সাজিয়ে সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে একটি বেসরকারি এতিমখানার বিরুদ্ধে। উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের ভায়ারহাট বাঁধ সংলগ্ন আল আমিন শিশু সদন এতিমখানার তত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনেছেন  আব্দুস গফুর নামে এক ব্যক্তি। রংপুর সমাজসেবা অধিদপ্তর উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রতিষ্ঠানটির তত্বাবধায়ক ও পরিচালনা কমিটি দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া এতিম শিশু দেখিয়ে খাওয়া, পোশাক ও চিকিৎসার সরকারি বরাদ্দের টাকা তুলে আত্মসাৎ করছে।

এছাড়া জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের ভায়ারহাট সদরাতালুক গ্রামে আল আমিন শিশু সদন এতিমখানাটি ২০০১ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন পায় (যার নিবন্ধন নং রং/কাউ/৭৩৯/২০০১ইং)।

স্থানীয়রা জানায়, এতিমখানাটি প্রথমদিকে কয়েক বছর সরকারি বরাদ্দ এবং স্থানীয়দের আর্থিক অনুদানে এতিম শিশুদের খাওয়া ও দাওয়াসহ সবকিছু ব্যয় করতো কর্তৃপক্ষ। এরপর এতিমখানার তত্বাবধায়ক ছমির উদ্দিনের বিভিন্ন অনিয়মের কারনে আবাসিক এতিম শিশুদের নিয়ে যায় অভিভাবকরা। এছাড়া করোনাকালীন সময় এতিমখানাটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও এতিম শিশুর জন্য সরকারি বরাদ্দের টাকা উঠানো হয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০১৬ সাল থেকে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার তদারকি ও নজরদারী না থাকায় সরকারি টাকা লুট হচ্ছে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে এতিমখানাটিতে কাগজে-কলমে ৫৮ জন এতিম শিশু দেখিয়ে সরকারি বরাদ্দের (জুলাই-ডিসেম্বর) ১ম কিস্তির ৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা তোলার পায়তারা চলছে।

অথচ এতিমখানাটিতে ৮ থেকে ৯ জন এতিম ও দুস্থ শিশু রয়েছে। তাদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন গ্রামের একজনকে সভাপতি বানিয়ে এভাবে বছরের পর বছর ধরে ভুয়া এতিম সাজিয়ে সরকারি অর্থ লোপাট করছে এতিমখানার তত্বাবধায়ক ছমির উদ্দিন।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, আল আমিন শিশু সদনে ২০১৯-২০২০ থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৫৫ জন এতিম শিশুর জন্য সরকারি বরাদ্দ বাবদ ৫২ লাখ ৮০ হাজার টাকা উঠিয়ে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪৩ জনের জন্য বরাদ্দ বাবদ ৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৪ জনের জন্য বরাদ্দ বাবদ ৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৮ জনের জন্য বরাদ্দ বাবদ ৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫২ জনের জন্য বরাদ্দ বাবদ ৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা।

এরমধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০২২-২০২৩ইং অর্থবছর পর্যন্ত উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সামিউল ইসলামের প্রত্যয়নে এতিম শিশুদের খাওয়া, পোশাক ও চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ বাবদ ৭৫ লাখ ২৪ হাজার টাকা সরকারি কোষাগার থেকে তুলেছে এতিমখানার তত্বাবধায়ক ও পরিচালনা কমিটি। আর এতিমের টাকার বেশিরভাগ চলে গেছে এতিমখানার তত্বাবধায়ক ও অন্যদের পকেটে।

জানাগেছে, উপজেলা সমাজসেবা অফিসে এতিমখানার বর্তমান ছাত্রদের ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন নেই। আল আমিন শিশু সদনে ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট পেতে এতিম ছাত্রদের ভর্তি, তালিকা তৈরি, অর্থ গ্রহণ ও বণ্টনে মানা হয় না সরকারি নীতিমালা। নেই সাধারন শিক্ষা ব্যবস্থা। এতিম তালিকায় থাকা ওই প্রতিষ্ঠানের অনেক শিশুর বাবা-মা আছেন। তাদেরও গ্র্যান্ট ক্যাপিটেশন পাওয়া এতিম হিসেবে দেখানো হয়েছে। 
এতিমখানাটির সাবেক সভাপতি শাহেনুর আলম জানায়, ২০২২ সালে দুই বছর মেয়াদী কার্যকারী কমিটিতে তাকে সভাপতি করা হয়। তিনি বলেন, এতিমখানাটিতে আবাসিক-অনাবাসিক ১৫ থেকে ১৮ জন এতিম ও দুস্থ শিশু ছিল। ভুয়া এতিম শিশু না দেখানো জন্য বলেছিলাম।

তাঁর সময়ে গত অর্থবছরে দুই কিস্তিতে ৫৫ জনের বরাদ্দ বাবদ ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা তুলেছেন। ১ম কিস্তির ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার মধ্যে বিভিন্ন তদবিরসহ ম্যানেজ খরচ হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন বাবদ ৮০ হাজার টাকা এবং চিকিৎসা ও পোশাকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অবশিষ্ট টাকা তত্বাবধায়ক নিয়েছেন।

২য় কিস্তির ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার মধ্যে তত্বাবধায়ক কৌশলে ব্যাংকের চেক প্রতারনা করে ৫ লাখ ১০ হাজার এবং বিগত সময়ের কমিটির স্বাক্ষরে অবশিষ্ট টাকা তুলেছেন। অর্থের অভাবে গতবছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এতিমখানাটি বন্ধ রয়েছে। চলতি অর্থবছর (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) পর্যন্ত ৫৮ জন এতিমের বরাদ্দ বাবদ ১ম কিস্তির ৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা উত্তোলনের জন্য এতিম শিশুদের তালিকা ও খরচের ব্যয় ভাউচার সমাজসেবা অফিসে জমা দেন তত্বাবধায়ক ছমির উদ্দিন।

শুনেছি তত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে ভুয়া এতিম সাজিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করায় জেলা সমাজসেবা অফিস বরাবরে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। এরপরও বিভিন্ন তদবির ও কৌশলে এতিমের বরাদ্দের টাকা সমাজসেবা থেকে ছাড় করার পায়তারা করছেন তত্বাবধায়ক। এজন্য না-কী নতুন করে কমিটিও করা হয়েছে। সাবেক সভাপতি শাহেনুর আলম আরো বলেন, তার দুই বছর মেয়াদে কোন কর্মকর্তা এতিমখানাটিতে আসেন নাই।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে আল আমিন শিশু সদনের তত্বাবধায়ক মাওলানা ছমির উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোন যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সাংবাদিকের পরিচয় জানতে পেয়ে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এদিকে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সামিউল ইসলাম বলেন, অনিয়ম ও বিভিন্ন অসঙ্গতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরে ১ম কিস্তির বরাদ্দের টাকা ছাড় করা হয়নি।

বরাদ্দের টাকা ছাড় করা না হলে প্রতিষ্ঠানটির ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ড বাতিল হয়ে যাবে। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে চলতি অর্থবছর এতিমদের জন্য ১ম ও ২য় কিস্তির বরাদ্দের প্রায় ১৪ লাখ টাকা দিয়ে আবাসন নির্মাণ করাসহ এতিম শিশু ভর্তি করবে প্রতিষ্ঠানটি তত্বাবধায়ক ও কমিটি।

রংপুর সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, এতিমদের জন্য বরাদ্দ অন্যখাতে ব্যয় করতে পারবেন না। বরাদ্দের টাকা শুধুমাত্র এতিম শিশুদের খাওয়া, পোশাক ও চিকিৎসার জন্য ব্যয় করতে হবে। কোন প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দের টাকা ব্যয় না হলে, তা সরকারি ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা করতে হবে।

অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, আল আমিন শিশু সদন এতিমখানার বিরুদ্ধে ভুয়া এতিম সাজিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের একটি অভিযোগ পেয়েছি। গত ১৭ মার্চ তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তকালে প্রতিষ্ঠানের তত্বাবধায়ক ছমির উদ্দিন ৬১ জন এতিম শিশু হাজির দেখিয়েছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিতে এতোগুলো এতিম শিশু লালন পালনে নেই আবাসন, নেই খাওয়ার জন্য ডাইনিং রুম।

প্রতিষ্ঠানটির আবাসন অবকাঠামো অনুযায়ী ১২ থেকে ১৫ জন জন এতিম ও দুস্থ শিশু থাকতে পারে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গিয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানে চলতি অর্থবছর এতিমদের জন্য বরাদ্দের টাকা ছাড় না করার জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কৌশলগত ভাবে টাকা ছাড় হলে এর দায়ভার উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন উপ-পরিচালক।


প্রজন্মনিউজ২৪/মুশ
 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined index: category

Filename: blog/details.php

Line Number: 417

Backtrace:

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ