চিত্রনায়ক শেখ আবুল কাশেম মিঠুনের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ২৫ মে, ২০২৪ ১২:৩৮:০৭ || পরিবর্তিত: ২৫ মে, ২০২৪ ১২:৩৮:০৭

চিত্রনায়ক শেখ আবুল কাশেম মিঠুনের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রজন্ম ডেস্ক: শেখ আবুল কাশেম মিঠুন বাংলা চলচ্চিত্রের এক উজ্জল নক্ষত্র। আজ এ গুনী শিল্পীর ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী । ১৯৫১ সালের ১৮ এপ্রিল সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবন ঘেঁষা আশাশুনি উপজেলার দরগাহপুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম শেখ আবুল হোসেন ও মা হাফেজা খাতুন। নয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সকলের বড়। শেখ আবুল কাশেম মিঠুন সঙ্গীতা ও তরী নামের দুই কন্যা সন্তানের জনক।

বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী ছিলেন চিত্রনায়ক মিঠুন। অভিনয় করা, চলচ্চিত্রের কাহিনী লিখা, গান ও গল্প-কবিতা লিখা সমান তালে চালিয়ে গেছেন তিনি। অনেক ভালো ভালো ছবির কাহিনী লিখেছেন। তাঁর কাহিনীতে নির্মিত হয়েছে অনেক ব্যবসাসফল ছবি।

বি এস সি তে ভর্তির পর তিনি সাহিত্য ও সাংস্কৃতি অঙ্গনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭৮ সালে নূর মোহাম্মদ টেনা সম্পাদিত ‘সাপ্তাহিক কালান্তর’ পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরবর্তী পর্যায়ে তিনি ‘কালান্তর’ এর কার্যনির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্রের স্ক্রিপ্ট রাইটার ও গীতিকার হিসেবেও কাজ করেন। 

 রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন করা সংস্কৃতিমনা শেখ আবুল কাশেম মিঠুন ১৯৮০ সালে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। তার প্রথম অভিনীত ছবি ‘তরুলতা’। প্রথম ছবিটিতেই তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। তার আরো অনেকগুলো জনপ্রিয় সিনেমা রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘ঈদ মোবারক’, ‘ভেজা চোখ’, ‘নিকাহ’, ‘কুসুমকলি’, ‘প্রেম প্রতিজ্ঞা’, ‘বেদের মেয়ে জোছনা’, ‘নিঃস্বার্থ’, ‘সাক্ষাৎ’, ‘স্বর্গনরক’, ‘ত্যাগ’, ‘চাকর’, ‘জিদ’, ‘চাঁদের হাসি’, ‘নরম-গরম’, ‘গৃহলক্ষ্মী’, ‘এ জীবন তোমার আমার’, ‘খোঁজ-খবর’, ‘ছোবল’, ‘কসম’, ‘দিদার’, ‘পরিচয়’ ‘মাসুম’, ‘কুসুমকলি’, ‘দস্যু রাণী ফুলন দেবী’, ‘জেলহাজত’, ‘ত্যাজ্যপুত্র’, ‘সর্দার’, ‘অন্ধবধূ’, অনন্য, চ্যালেঞ্জ, চন্দনা, ডাকু, স্যারেন্ডার, বাবা কেন চাকর প্রভৃতি। নায়ক ছাড়াও তিনি সিনেমার পার্শ্ব চরিত্রেও অভিনয় করেছেন। এছাড়াও তিনি অসংখ্য সিনেমার চিত্রনাট্য রচনা করেছেন। 
 
২০০০ সালে তিনি সিনেমার অভিনয় থেকে সরে আসেন। তারপরও তিনি স্ক্রিপ্ট রাইটার ও গীতিকার হিসেবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করেছেন। শিশুদের নিয়ে দিগন্ত টেলিভিশনে করা তার অনুষ্ঠানটিও ছিল জনপ্রিয়। অভিনয় থেকে সরে আসলেও শেখ আবুল কাশেম মিঠুন আজীবন সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কবি মতিউর রহমান মল্লিক-এর মৃত্যুর পর শেখ আবুল কাশেম মিঠুন ‘বাংলাদেশ সংস্কৃতিক কেন্দ্র’র হাল ধরেন। তিনি ছিলেন এই সংগঠনের উপ-পরিচালক।

চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্বও দিয়েছেন নায়ক মিঠুন। ১৯৮৯-৯০ সালে তিনি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন, ১৯৯৩-৯৪’সালের নির্বাচনে শিল্পী সমিতির আন্তর্জাতিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সালে 'বাংলাদেশ চলচ্চিত্র লেখক সমিতি' প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি তার সহসভাপতি নির্বাচিত হন, ২০০১ সালে চলচ্চিত্র লেখক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি এবং ২০০২ সালে চলচ্চিত্র জগতের সকল সংগঠন মিলে‘ফিল্ম ফেডারেশন’ গঠিত হলে তিনি তার সহকারী মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন।

শেখ আবুল কাশেম মিঠুন ২০১৪ সালের মার্চে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি যে কঠিন রোগে আক্রান্ত ছিলেন তার কথাবার্তায় তা কখনো ফুটে ওঠেনি। তিনি কিডনি, লিভার, হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০১৫ সালের ১১ মে তিনি তার অসুস্থ মা হাফেজা খাতুনকে দেখতে খুলনায় আসেন। অসুস্থ মাকে দেখতে এসে তিনি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার শরীরের অবস্থার অবনতি হলে ১৪ মে বিকেলে স্থানীয় ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার আরো অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৯ মে সকালে তাকে ভারতের কোলকাতায় পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় কোটারী হাসপাতালে ২৪ মে দিবাগত রাত ২টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

লেখক-চিত্রনায়ক মিঠুন শারীরিকভাবে আমাদের মাঝে না থাকলেও, তাঁর সৃষ্টিশীল কর্মের মাধ্যমে তিনি বেঁচে থাকবেন যুগের পর যুগ ধরে।


প্রজন্মনিউজ২৪/মুশ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ