জুড়িতে পরিকল্পিত সড়ক দুর্ঘটনায় একজনকে হত্যার অভিযোগ

প্রকাশিত: ১০ মে, ২০২৪ ০৪:১৪:১৬

জুড়িতে পরিকল্পিত সড়ক দুর্ঘটনায় একজনকে হত্যার অভিযোগ

জুড়ী (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের কচুরগুল এলাকায় একটি পরিকল্পিত সড়ক দূর্ঘটনার অভিযোগ উঠেছে। দুজন মোটরসাইকেল আরোহী আবু তাহের মামুন (২২) ও রাকিব আহমদ (৩০)কে হলম্পা বাজারের পাশে একটি টাটা পিকআপ দিয়ে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে তারা গুরুতর আহত হন।

আহত দুজনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তাঁদের অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সিলেট এমএজি ওসামানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (০৮ মে) সকালে আবু তাহের মামুন (২২) নামের একজন মারা যায়। অপরজনের অবস্থাও আশংকাজনক।

নিহত মামুনের বড় বোন জেরিন জাহান বলেন, মঙ্গলবার ০৭ মে  সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে এই পরিকল্পিত দূর্ঘটনা ঘটানো হয়। 

জানা যায়, প্রায় ৩ বছর আগে কচুরগুল গ্রামের ইলিয়াছ আলী বলাই'র ছেলে জুনেদ আহমদের সাথে বিবাহ হয় চাটেরা গ্রামের মৃত রাজুল ইসলামের মেয়ে ফারহানা আক্তার ফৌজিয়ার। 

জুনেদের স্ত্রী ফারহানা আক্তার ফৌজিয়া জানান, তাঁদের দুটি ছেলে সন্তান ১ জনের বয়স ২ বছর ওপর জনের বয়স মাত্র ১০ দিন। দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁদের পারিবারিক কলহ হলেও এসব তাঁর বাপের বাড়ীর কাউকে জানানো হয়নি। দ্বিতীয় ছেলের জন্মের পর থেকে তাদের পারিবারিক দ্বন্দ্ব বেড়ে যায়। কেন এরকম হচ্ছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাবা নেই। আমার বাপের বাড়ীর লোকজন খুব অসহায়। বিভিন্ন সময় আমাকে মারধর করা হয় বাড়ী থেকে টাকা পয়সা এনে দেওয়ার জন্য। বাপের বাড়ী টাকা পয়সা নেই কিভাবে দিবো? সে কথা চিন্তা করে আমি একটা কিস্তির মাধ্যমে ঋণ তুলে দিয়েছি, তবুও থামেনি অত্যাচার। আমার প্রথম ছেলের জন্মের পরে বাপের বাড়ী থেকে অনেক কিছু উপহার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় সন্তান জন্ম নেওয়ার পরে কেন দেওয়া হয়নি এ নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বের মূল উৎপত্তি ছিল। এসব নিয়ে দ্বন্দ্বের জন্য ফৌজিয়ার উপর শারীরিক নির্যাতন করেন জুনেদ।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি আমার স্বামী আমাকে  বেশ মারধর করেন। তবুও আমি আমার বাপের বাড়ীর কাউকে জানাইনি। শেষ পর্যন্ত সহ্য করতে না পারায় আমার ভাইকে বলেছিলাম। তিনি থানায় অবগত করলে থানা থেকে ইউপি সদস্যকে সমাধান করে দেওয়ার কথা বলা হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য কালাম মিয়া বিষয়টি সমাধান করে দিলে জুনেদ মিয়া আশ্বস্ত করে তার স্ত্রীকে মারধর করবেন না। তবে ইউপি সদস্য চলে যাওয়ার পর আবার শুরু হয় নির্যাতন। বিষয়টি বড় ভাই রাকিব আহমদের কাছে জানানো হলে তিনি আবার থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে জুড়ী থানা থেকে পুলিশ নিয়ে বোনকে উদ্ধার করতে আসেন আপন ভাই রাকিব ও ফুফাতো ভাই মামুন। তখন ফৌজিয়াকে জুনেদ বলেন তোর ভাইকে আজ শেষ করবো। এ কথা বলে তিনি টাটা পিকআপ নিয়ে বাড়ী থেকে বের হন। হলম্পা বাজারে এসে জুনেদ অপেক্ষা করেন তাঁদের জন্য। তারা কচুরগুল প্রবেশ করতেই আগে থেকে উৎপেতে থাকা জুনেদ পিকআপ দিয়ে ধাক্কা দিলে তারা মারাত্মক ভাবে আহত হন।

দুর্ঘটনায় নিহত আবু তাহের মামুনের বড় বোন জেরিন জাহান অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাই দূর্ঘটনায় নিহত হয়নি। সে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাকে পিকআপ দিয়ে ধাক্কা মারা হয়েছে।  কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। আমার ভাইকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে। 

তিনি বলেন, মঙ্গলবার মুঠোফোনে জুনেদ কল দিয়ে বলে রাস্তায় লাশ রাখা আছে। মোবাইলে তাঁর কথা গুলো সংরক্ষন রয়েছে। আমি ও আমার পরিবার এই ঘাতক জুনেদের উপযুক্ত বিচার চাই।

দুর্ঘটনায় নিহত আবু তাহের মামুনের ফুফাত ভাই তাহসানুল আহমেদ সাকেল জানান পরিকল্পিতভাবে আমার মামাত ভাই আবু তাহের মামুনকে ঘাতক জুনেদ পিকআপ দিয়ে মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিয়ে হত্যা করেছে, সে গাড়ীর গতি দেখে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিল কিন্তু আমার ভাইয়ের শেষ রক্ষা হলো না।আমরা তার হত্যার উপযুক্ত বিচার চাই।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আবু তাহের মামুন কুলাউড়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। সে পিকআপ চালক জুনেদের (শালক) ফুফা শ্বশুরের ছেলে। 

প্রত্যক্ষদর্শী সাচ্চু মিয়া জানান, ঘটনার ৫ মিনিট আগে জুনেদ হলম্পার দিকে গাড়ী নিয়ে যেতে দেখেছি। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার সে ফিরে আসে মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিয়ে।

গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য কালাম মিয়া বলেন, আমরা তাঁদের পারিবারিক বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি। আমরা চলে আসার পরে তাদের পারিবারিক দ্বন্দ্ব আবারও শুরু হয়। 

জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাঈন উদ্দিন মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সিলেট এমএজি ওসামানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত মামুনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা অভিযোগ পেয়েছি, মামলা হয়েছে। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


প্রজন্মনিউজ২৪/এফএইচ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ