ঢাবি যেন ঢাকা শহরের এক টুকরো শৌচাগার

প্রকাশিত: ০৬ মার্চ, ২০২৪ ০৪:০৯:৩৪

ঢাবি যেন ঢাকা শহরের এক টুকরো শৌচাগার

অনলাইন ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে রিকশার লাগাম ধরার যেন কেউ নেই। সারাদিন হাজারো রিকশা চলাচল করলেও তাদের ওপর প্রশাসনিক কোনো কর্তৃত্ব নেই। যার ফলশ্রুতিতে রাত নামলেই রিকশাগুলোর অস্থায়ী গ্যারেজে পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত বাড়তে থাকলে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় রিকশা রাখতে দেখা যায়। এমনকি, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রাস্তার পাশে রিকশাচালকদের যত্রতত্র মূত্রত্যাগ করতে দেখা যায়, যা ঢাবির পরিবেশ নষ্ট করে। এ বিষয়গুলো ক্যাম্পাসের পরিবেশ ও সামগ্রিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। 

সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় রিকশা দাঁড় করিয়ে রাখতে দেখা যায়। শুধু রাতেই নয়, দিনের বেলাতেও একই চিত্র। বিশেষ করে দুপুরের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় রিকশা দাঁড় করিয়ে চালককে ঘুমিয়ে থাকতে বা অন্যদের সঙ্গে খোশগল্পে মেতে থাকার দৃশ্য হরহামেশাই চোখে পড়ে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পাড়ার রাস্তার পাশে, সূর্যসেন হলের সামনে ও পাশে, মুহসীন হলের সামনের রাস্তা, মাঠের পাশ বরাবর, টিএসসি-ঢাকা মেডিকেলের রাস্তার পাশে, মল চত্বরের রাস্তা বরাবর এবং পলাশী থেকে জগন্নাথ হল বরাবর রাস্তার পাশেসহ বিভিন্ন জায়গা প্রায় অর্ধশতাধিক রিকশার অস্থায়ী গ্যারেজ হিসেবে পরিণত হয়েছে। 

ক্যাম্পাসের হাজী মোহাম্মদ মুহসীন হলের মাঠের পাশে, ফুলার রোডের ফুটপাতের একাংশ, টিএসসি থেকে মেডিকেল রোডের পাশের ফুটপাথ, পলাশী থেকে সলিমুল্লাহ হলের সামনের রাস্তা, জগন্নাথ হলের পেছনের রাস্তা, শামছুন নাহার হলের সামনের দিকেসহ বেশ কিছু জায়গায় যত্রতত্র মূত্র ত্যাগ করেন রিকশাচালক ও বহিরাগতরা
এদিকে, দিনের বেলায় ক্যাম্পাসের টিএসসি এলাকায় রিকশার আধিক্য ও যত্রতত্র রিকশা থামিয়ে রাখার কারণে চার লেনের প্রশস্ত রাস্তা এক লেনে পরিণত হয়। বিশেষত বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮/৯টা পর্যন্ত এ অবস্থা বিরাজ করে। টিএসসিতে সব সময়ই এমন পরিস্থিতি বিরাজ করলেও প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই। প্রশাসনকে সিটি কর্পোরেশনের ওপর ভার করেই সব সময় দায়মুক্তির চেষ্টা চালিয়ে যেতে দেখা যায়।

এদিকে, ক্যাম্পাসের হাজী মোহাম্মদ মুহসীন হলের মাঠের পাশে, ফুলার রোডের ফুটপাতের একাংশ, টিএসসি থেকে মেডিকেল রোডের পাশের ফুটপাথ, পলাশী থেকে সলিমুল্লাহ হলের সামনের রাস্তা, জগন্নাথ হলের পেছনের রাস্তা, শামছুন নাহার হলের সামনের দিকেসহ বেশ কিছু জায়গায় যত্রতত্র মূত্র ত্যাগ করেন রিকশাচালক ও বহিরাগতরা। এতে নোংরা হয় ক্যাম্পাসের পরিবেশ, ফুটপাত ধরেও নির্বিঘ্নে হাঁটার অবস্থা থাকে না বিধায় অনেকে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে বাধ্য হন। 

এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় গণ শৌচাগার স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৮ জানুয়ারি প্রক্টর বরাবর গণ শৌচাগার স্থাপনের জন্য লিখিত আবেদন জানিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী৷ এর আগে, ৫ জানুয়ারি ক্যাম্পাসের এমন কিছু স্থান তারা দড়ি দিয়ে ঘেরাও করে দেন। একইসঙ্গে, সেখানে জনসচেতনতামূলক পোস্টারও সাঁটিয়ে দেন তারা। তবে এটি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্থানগুলোতে পুনরায় মূত্রত্যাগ করা শুরু করেছেন রিকশাচালক ও বহিরাগতরা। 

বিষয়গুলো নিয়ে একাধিক রিকশাচালকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাদের অধিকাংশই থাকেন কামরাঙ্গীরচর বস্তিতে। ক্যাম্পাসের আশপাশে কোনো থাকার জায়গা না থাকায় ক্যাম্পাসেই রাত কাটান তারা। তাছাড়া, ক্যাম্পাসের হল বা সরকারি ভবনগুলোতে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়ায় জরুরি প্রয়োজন পড়লে রাস্তার পাশেই মূত্রত্যাগ করতে বসে যান তারা। 

সাইফুল ইসলাম নামের এক রিকশাচালক বলেন, থাকি কামরাঙ্গীরচরে, একদিন পরপর বাসায় যাই। যেতে আসতে সময় লাগে। তাছাড়া সেদিকের প্যাসেঞ্জারও পাই না। তার চেয়ে ক্যাম্পাসের কোথাও রিকশা দাঁড় করিয়ে ঘুমিয়ে যাই। সকালে উঠে খেয়ে আবার রিকশা চালানো শুরু করি। 

অন্য আরেক রিকশাচালক রহমতউল্লাহ বলেন, খ্যাপ দিতে দিতে রাত হয়ে যায়, তাই আর বাসায় যাই না। সকালে বাসায় যাই, খেয়ে আবার রিকশা নিয়ে বের হই। বাইরে থাকলে রিকশা চুরি হওয়া বা ছিনতাইকারীর হাতে পড়ে সারাদিনের টাকা হারানোর ভয় থাকে। ক্যাম্পাস নিরাপদ জায়গা, এখানে শুয়ে থাকলেও কোনো সমস্যা হয় না। 

আমিও দেখেছি অনেক রিকশাচালক রিকশায় ঘুমাচ্ছে। আবার অনেকে মূত্রত্যাগ করছে। আমি নিজেও অনেককে বলেছি, তারা যেন ক্যাম্পাসে মূত্রত্যাগ না করেন।

ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ও মূত্রত্যাগে ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্টের ব্যাপারে ঢাবির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাসান তারিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্যাম্পাসের কোনো নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনের হাতে নেই। তারা শুধু বসে বসে ফাইলে স্বাক্ষর করেই দিন পার করেন। ক্যাম্পাসে কে কী করছে, সেটি দেখার সময় তাদের নেই। ক্যাম্পাসকে রিকশাচালকরা নিজেদের গ্যারেজ মনে করে। বিকেলে টিএসসিতে হাঁটা যায় না তাদের জন্য। আবার রাতেও দেখি বিভিন্ন জায়গায় রিকশা থামিয়ে তারা শুয়ে আছে। এটা তো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ হওয়ার কথা না। 

তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় দেখি অনেক রিকশাচালক মূত্রত্যাগ করছেন। ক্যাম্পাসে কোনো মোবাইল টয়লেট নেই। প্রশাসন এটির ব্যবস্থা করতে পারেনি বলেই রিকশাচালকরা ক্যাম্পাসে যত্রতত্র মূত্রত্যাগ করেন। তাছাড়া, তারা জানে এখানে মূত্রত্যাগ করলে কেউ কিছু বলবে না, এ বিষয়ে তাদের ভয় নেই। তাই তারা নির্বিঘ্নে কাজ সেরে আবার রিকশা চালাতে থাকেন। 

অন্য আরেক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারে না। কিছুদিন আগে এক ভাই তাদের উদ্দেশে কথা বলায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ তারা জানে না ওই ভাইয়ের কথাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ ভাগ শিক্ষার্থীর মনের কথা। ক্যাম্পাসে যত্রতত্র রিকশা রেখে দেওয়া, রাতে ক্যাম্পাসেই ঘুমানো, যত্রতত্র মূত্রত্যাগ করে পরিবেশ নষ্ট করে যাচ্ছে বহিরাগতরা, সেদিকে তাদের খেয়াল নেই। তারা কোটি টাকা ব্যয়ে পার্ক নির্মাণ করছে, কিন্তু শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সুন্দর পরিবেশ পাচ্ছে না, সেটি দেখার সময় তাদের নেই। তাদের বললেই বলেন এটা উন্মুক্ত জায়গা, এটা আমার না তার কাজ, এটা সিটি কর্পোরেশনের কাজ ইত্যাদি বলেই পার পেয়ে যায়। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান এই প্রতিবেদককে সঙ্গে নিয়ে সরজমিনে উপস্থিত থেকে অভিযান চালানোর কথা বলেন। পাশাপাশি যত্রতত্র থামিয়ে রাখা রিকশা উচ্ছেদের বিষয়ে আশ্বাস দেন।

ক্যাম্পাসে যত্রতত্র মূত্রত্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা এস্টেট অফিসের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে ভালো বলতে পারবেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) ফাতেমা বিনতে মোস্তফা বলেন, আমি ছুটিতে আছি। ছুটিতে থাকাকালীন কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আমি ছুটি শেষে ফিরে কথা বলব। 

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, আমিও দেখেছি অনেক রিকশাচালক রিকশায় ঘুমাচ্ছে। আবার অনেকে মূত্রত্যাগ করছে। আমি নিজেও অনেককে বলেছি, তারা যেন ক্যাম্পাসে মূত্রত্যাগ না করেন। অ্যামিনিস্ট্রেটিভ টাইটনেস কমে যাওয়ায় এটা হয়ত কিছুটা বেড়েছে। আমরা এটা নিয়ে আগেও কাজ করেছি, এখনো যারা দায়িত্বে আছে, তারাও কাজ করছে। সার্ভিলেন্স সিকিউরিটির দায়িত্বরতরা এ বিষয়টি দেখবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক সমস্যা দূর করতে প্রশাসন সবসময় সচেতন রয়েছে। 


প্রজন্মনিউজ২৪/এএন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ