আবু উবাইদা (রা.)-র শেষ উপদেশ

প্রকাশিত: ০৮ জুন, ২০২৪ ০৬:৪৮:২৭

আবু উবাইদা (রা.)-র শেষ উপদেশ

নিউজ ডেস্ক: প্রথম দিকেই ইসলাম গ্রহণ করা সাহাবিদের একজন হলেন হজরত আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.)। জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ সাহাবিদের মধ্যেও তিনি একজন। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর কাছে আবু উবাইদা (রা.)-এর বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা ছিল।  নবীজি হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাকে উম্মতে মুহাম্মাদীর বিশ্বস্ত ব্যক্তি বলে অভিহিত করেছেন এবং এ‘উম্মতের আমানতদার’উপাধিতে ভূষিত করেছেন। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যেও ছিল তাঁর বিশেষ মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা। শীর্ষস্থানীয় মর্যাদাবান সাহাবিদের কাতারে ছিল তাঁর স্থান।
(আল-ইসতিআব ৪/১৭১০-১৭১১)

একদা ইয়েমেনের লোকজন রাসুল (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের সঙ্গে এমন একজন লোক দিন, যিনি আমাদের ধর্মীয় শিক্ষা দান করতে পারেন। তখন রাসুল (সা.) আবু উবাইদা (রা.)-এর হাত ধরে ইরশাদ করেন, এই ব্যক্তি এ উম্মতের আমিন তথা বিশ্বস্ত ও আমানতদার (আল-ইসতিআব ৪/১৭১১)। মৃত্যুর আগে হজরত আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.)-তাঁর সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, তোমাদের যে উপদেশ আমি দিচ্ছি। তোমরা যদি মেনে চলো, তাহলে সব সময় কল্যাণের পথে থাকবে।

—তোমরা নামাজ কায়েম করবে।
—রমজান মাসে রোজা রাখবে।
—জাকাত দেবে।
—হজ্জ ও ওমরাহ্ আদায় করবে।
—একে অন্যকে উপদেশ দেবে।
তোমাদের শাসক ও নেতাদের সত্য ও ন্যায়ের কথা বলবে, তাদের কাছে কিছু গোপন রাখবে না।
—দুনিয়ার সুখ-সম্পদে গা ভাসিয়ে দেবে না।

আবু উবাইদা (রা.) এতই বিনীত ছিলেন যে, সিপাহসালার হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ সৈনিকদের থেকে তাঁকে আলাদা করা যেত না। অপরিচিত কেউ তাঁকে সিপাহসালার বলে ভুল করত। একবার এক রোমান দূত এসে জিজ্ঞেস করল,‘আপনাদের সেনাপতি কে?’সৈনিকেরা যখন আঙুল উঁচিয়ে আবু উবাইদা (রা.)-কে দেখিয়ে দিল, তখন তারা সেনাপতির অতি সাধারণ পোশাক ও অবস্থান দেখে হতভম্ব হয়ে গেল। হজরত উমর (রা.)-এর খিলাফতকালে আবু উবাইদা (রা.) ছিলেন সিরিয়ার গভর্নর। হজরত উমর (রা.) তাঁর সিরিয়া সফরকালে দেখলেন, আবু উবাইদা (রা.)-এর পোশাক, বাসস্থানসহ সবকিছুতে খুব সাধারণ জীবনযাপনের চিহ্ন। একবার হজরত উমর (রা.) উপহার হিসেবে চারশ দিনার ও চার হাজার দিরহাম আবু উবাইদার কাছে পাঠালেন। তিনি সব অর্থ সৈনিকদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। নিজের জন্য এক পয়সাও রাখলেন না। হজরত উমর (রা.) এ কথা শুনে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! ইসলামে এমন লোকও আছে!’হযরত উমর (রা.)–এর কাছে তিনি এতই গ্রহণযোগ্য ছিলেন যে মৃত্যুর সময় উমর (রা.) বলেছেন, আবু উবাইদা (রা.) বেঁচে থাকলে আমি তাঁকে পরবর্তী খলিফা বানিয়ে নিতাম।

হজরত উমর (রা.) খলিফা নিযুক্ত হয়ে‘ইয়ারমুকের’যুদ্ধে আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.)-কে সেনাপ্রধান নিয়োগ করেন। তিনিও অসম্ভব দক্ষতার সঙ্গে এ যুদ্ধে মুসলিমদের পক্ষে বিজয় ছিনিয়ে আনেন। ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে আবু উবাইদা (রা.)-র নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী জেরুজালেম অবরোধ করে। খ্রিষ্টান ধর্মগুরু সাফ্রোনিয়াস জিজিয়া খাজনার বিনিময়ে জান, মাল, গির্জা ও বাসস্থানের নিরাপত্তা দেওয়ার শর্তে মুসলিমদের সঙ্গে সন্ধি চুক্তি করেন। খ্রিষ্টানদের দাবি অনুযায়ী, সে সময় আবু উবাইদা (রা.)-র আহ্বানে মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রধান খলিফা উমর (রা.) জেরুজালেম এসে চুক্তিপত্রে মুসলিমদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন। ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে রোমের সম্রাটের প্ররোচনায় ৩০ হাজার জাজিরাবাসী মুসলিম আধিপত্য নির্মূলে অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। মুসলিম সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বিধানে আবু উবাইদা (রা.) তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে জাজিরা দখল করে নেন। এভাবে একের পর এক অভিযান পরিচালনা করে আবু উবাইদা (রা.) মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

আবু উবাইদা (রা.) ১৮ হিজরি তাউনে আমওয়াস তথা আমওয়াসের মহামারিতে (প্লগ-এ আক্রান্ত হয়ে) সিরিয়ায় ইন্তেকাল করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ৫৮ বছর। হজরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা.)-এর ইমামতিতে আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.)-র জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আবু উবাইদা (রা.)–কে কবর দেওয়ার পর মুয়াজ (রা.) এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, “আবু উবাইদা (রা.), আল্লাহ আপনার ওপর রহম করুন। অসত্য কোনো কিছু বলব না। কারণ, আমি আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করি। আমার জানামতে, আপনি ছিলেন আল্লাহকে অত্যধিক স্মরণকারী ও বিনম্রভাবে জমিনের ওপর বিচরণকারীদের একজন। আর আপনি ছিলেন সেসব ব্যক্তিদের অন্যতম, যারা তাদের রবের উদ্দেশ্যে সিজদারত ও দাঁড়ানো অবস্থায় রাত অতিবাহিত করে এবং যারা খরচের সময় অপচয়ও করে না আবার কার্পণ্যও করে না; বরং মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করে থাকে। আমার জানামতে, আপনি ছিলেন বিনয়ী ও এতিম-মিসকিনদের প্রতি সদয়। আপনি ছিলেন অত্যাচারী-অহংকারী ব্যক্তিদের শত্রুদের একজন।”


প্রজন্মনিউজ২৪/এসএ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ