দেশে রিজার্ভ কমেই চলছে, কি বলছেন অর্থনীতিবিদরা?

প্রকাশিত: ১৫ মে, ২০২৪ ১১:৫০:২৮

দেশে রিজার্ভ কমেই চলছে, কি বলছেন অর্থনীতিবিদরা?

প্রজন্মডেস্ক: দুই বছর আগে দেশে শুরু হওয়া ডলারের সংকট কাটছে না। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বাড়াতে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো রিজার্ভ বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। ডলারের সংকট না কাটায় রিজার্ভের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না; বরং প্রায় প্রতিনিয়তই কমছে রিজার্ভ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। 

কিন্তু রিজার্ভ কমছে কেন? জানা গেছে, গত সপ্তাহে আকু (এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন) বিল বাবদ রিজার্ভ থেকে ১৬৩ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়। ফলে রিজার্ভ আরও কমে যায়। 

আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া নিট বা প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ১১ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের অনুরোধের পর আইএমএফ এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১ হাজার ৪৭৫ কোটি ডলারে নামিয়েছে। তবে প্রকৃত এই রিজার্ভ এখন ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের কম। ফলে এখনো লক্ষ্য অর্জনের বেশ দূরে রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত মজুত। 

২০২১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের মোট রিজার্ভ ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবেই যা এখন কমে হয়েছে ২ হাজার ৩৭৭ কোটি ডলার। ফলে আড়াই বছরে রিজার্ভ কমে অর্ধেক হয়েছে।

ডলারের দাম একসময় নির্ধারণ করত কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর ব্যাংক খাত–সংশ্লিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠানকে বিনিময় হার নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পর ডলারের দাম নির্ধারণে এবার ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ডলারের দাম ক্রলিং বা ওঠানামা করার সুযোগ রাখেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) মার্চ ও এপ্রিল মাসের দায় মেটানোর পর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে মোট রিজার্ভ কমে ২৩ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৩৭৭ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ১৮ দশমিক ৩২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৮৩২ কোটি ডলার। তবে প্রকৃত বা দায়হীন রিজার্ভ এখন ১৩ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের কিছুটা কম বলে জানা গেছে। প্রকৃত রিজার্ভ সেটাই, যার বিপরীতে কোনো দায় নেই এবং যেকোনো সময় তা ব্যবহার করা যায়। 

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এখন আমদানি নিয়ন্ত্রণের পরও প্রতি মাসে আমদানি দায় মেটানোর জন্য গড়ে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার প্রয়োজন হচ্ছে। ফলে প্রকৃত রিজার্ভের অর্থ দিয়ে তিন মাসেরও আমদানি খরচ মেটানো যাবে না।

অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নেমেছে। বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন গনমাধ্যমকে বলেন, দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার জন্য ভালো পরিমাণ রিজার্ভ থাকা জরুরি। এখন রিজার্ভ যে পর্যায়ে নেমে এসেছে, তা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কার কারণ আছে। কারণ, এই রিজার্ভ দিয়ে দেশের তিন মাসেরও আমদানি দায় মেটানো যাবে না। ভারতের ১২-১৩ মাস ও ভিয়েতনামের ৭-৮ মাসের আমদানি দায় মেটানোর মতো রিজার্ভ আছে।

জাহিদ হোসেন আরও বলেন, আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে দেশের কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব না। উৎপাদন বাড়িয়ে ভালো জিডিপি অর্জন করতে যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি বাড়াতে হবে। এ জন্য আমদানি ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে। 

প্রজন্মনিউজ২৪/মুশ


 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ