বাজেট ছোট করুন,আমাদের ওপর পর্বত তুলে দেবেন না  

প্রকাশিত: ১৩ মে, ২০২৪ ০১:১২:০৬

বাজেট ছোট করুন,আমাদের ওপর পর্বত তুলে দেবেন না  

নিউজডেস্ক: আগে যখন শক্তিশালী বিরোধী দল ছিল, যেকোনো বাজেটের পরই শুনতে হতো ‘মানুষ মারা’বাজেট। তখন বিভিন্ন যুক্তিতর্কের মাধ্যমে বাজেটে গণবিরোধী কিছু থাকলে বদলও হতো। এখনকার তথাকথিত বিরোধী দল সমালোচনা না করে বরং স্তুতিবাক্যের মধ্যেই চলে। এদিকে ব্যবসায়ীরা তাঁদের সুবিধা দাবি এবং ক্ষমতার কাছে থাকলে সেই সুবিধাগুলো আদায় করে নেন।

এ ক্ষেত্রে সংবাদপত্র যদি কিছুটা বলার চেষ্টা করে, সেটাই একমাত্র ভরসা। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলি, গত বাজেটের আগে এবং পরে এই অধম সব মিলিয়ে চারটা লেখা দিলেও সরকার কোনো কর্ণপাত না করেই নিজেদের মতো বাজেট পাস করিয়ে নিয়েছে।

নিজেদের ভুলেই দেশ এক অর্থনৈতিক দুর্দশায় পড়েছে। সমস্যার আসল কারণগুলো সমাধানের চেষ্টা না করে বিভিন্নভাবে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তাতে দেশ অন্তত শেষ সীমাতে যাওয়া আটকে দিলেও সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে এবং দেশ নিশ্চলতা-স্ফীতিতে পড়েছে। দেশের বেসরকারি খাতের ব্যবসাও হয়ে গেছে স্থবির। শুধু অলিগার্কি এবং যাঁদের অবৈধ আয় আছে, তাঁরা ছাড়া আসলে কেউই ভালো নেই। এ অবস্থায় পত্রিকার মাধ্যমে বাজেট নিয়ে যেসব খবর আসছে তা বেশ ভয়ংকর। এগুলোর বেশ কিছু পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।

এই অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেশির ভাগ ভাতায় আয়করমুক্ত থাকলেও বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য তা ছিল ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া বিভিন্ন বিনিয়োগে কর রেয়াত ছিল। কিন্তু এসব সুবিধা উঠিয়ে দিলে সাধারণ মানুষের ওপর বিশাল চাপ বাড়বে।

তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, করের নিম্ন হার বাড়ালেও সঙ্গে নিম্ন সীমা ৫ লাখ এবং আগের ভাতা এবং রেয়াত–সুবিধা বজায় রাখে। এ ছাড়াও সরকারি চাকরিজীবীদের যে দ্বৈত আইন করে সব ভাতাতে করমুক্ত সুবিধা দেওয়া হতো, তা বাতিল করেন অথবা বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্যও একই সুবিধা দেওয়া হোক। এক দেশে দুই আইন থাকতে পারে না। এ ছাড়া অতিধনী তৈরিতে দেশ বিশ্বের প্রথম সারিতে।

তাই আগের ৩০ শতাংশের যে ট্যাক্সের ভাগ ছিল তা ফিরিয়ে নিয়ে আসা উচিত। যদি তিনটি কাজ—দ্বৈত আইন বাতিল করা হয়, ২৫ শতাংশ ট্যাক্স স্ল্যাবের ৩০ লাখ টাকার পর অবশিষ্ট ব্যক্তিদের ৩০ শতাংশ ট্যাক্সের আওতায় আনলে এবং যাঁরা ট্যাক্স দেন না, তাঁদের ট্যাক্সের আওতায় আনতে পারলে সরকার মধ্যবিত্তের ওপর চাপ না বাড়িয়েও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে।
ঋণ করে ঘি না খেয়ে নিজেদের টাকায় একটু বাঁচার চেষ্টা করি।
 
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকির অঙ্ক ১ লাখ কোটি টাকার নিচে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে আবারও বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানোর চিন্তাভাবনা চলছে। (আমাদের অর্থনীতি, ২৫ এপ্রিল ২০২৪)। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে বলা হয়েছে, বছরে চারবার বাড়বে। আবার ক্যাপাসিটি চার্জের (যা বিদ্যুৎ খাতের মোট ভর্তুকির ৮১ শতাংশ) টাকাও আমাদের ট্যাক্সের টাকাতে দেওয়া হবে, এটা কেমন বিচার! আবার ২৭ হাজার ১৬২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা থাকার পরও কেন আমাদের লোডশেডিং হচ্ছে অথবা বাইরে থেকে বিদ্যুৎ আনা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন সবার মনে।

চলতি অর্থবছরে ভ্যাট ছিল মোট রাজস্বের ৩৮ শতাংশ। যা এই অর্থবছরে হতে পারে মোট রাজস্বের ৫০ শতাংশের ওপরে। (বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ৭ এপ্রিল ২০২৪) আইএমএফ আবার সব ভ্যাট ১৫ শতাংশ করে দিতে বলছে। ভ্যাট সব সময় নিম্নে যে থাকে মানে সাধারণ মানুষের ওপরে পড়ে। এই মূল্যস্ফীতির যুগে যা আরও বোঝা হয়ে যাবে। ভ্যাট ফ্ল্যাট রেট করা ভালো, কিন্তু ১৫ শতাংশ অনেক বেশি। তবে ভ্যাটমুক্ত ক্ষেত্রগুলোতে ভ্যাট আরোপ করে আওতা বাড়ানো সম্ভব।

তদ্রূপ ট্যাক্সের আয় বাড়াতে সরকার অগ্রিম আয়করের দিকে বেশি নজর দিতে চাচ্ছে। এর ফলে যারা ট্যাক্স দেন, তাঁদের ওপর চাপ পড়বে। সরকার অনেক দিন ধরে আয়কর প্রদানকারীদের সীমা বাড়াতে চাচ্ছে, কিন্তু বলার মতো সফলতা নেই। কেন? এই দায় কেন যাঁরা দেন, তাঁদের বহন করতে হবে?

সরকারের তিনটা প্রধান খাত তার কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং পেনশন দেওয়া ও মেগা প্রকল্প। বেতন–ভাতার ক্ষেত্রে খুব বেশি কিছু করার নেই। কিন্তু তাদের কি পেনশন স্কিমে নিয়ে আসা সম্ভব? তাহলে নিজেদের অনেক খরচ কমত। আর এই অসময়ে অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প এবং বিদেশ থেকে অপ্রয়োজনীয় আমদানি, বিদেশ সফর, কথায় কথায় গাড়ি কেনা ও অতিরিক্ত ব্যাংকঋণ নেওয়া বন্ধ করতে হবে।

এ দুটি বিষয় কমানোর সরকারের কোনো বিকল্প নেই। বাজেটে অবশ্যই কমানোর দিকনির্দেশনা এবং ব্যবস্থা থাকতে হবে। বেসরকারি খাতের জন্য ব্যবসা যাতে গতি পায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। দেশকে আত্মনির্ভর করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। যেখানে আমাদের ডলারের সংকট, সেখানে কেন আমরা দেশকে আমদানিনির্ভর রাখব?

বিশাল বাজেট বানিয়ে ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত ঠিক করতে গিয়ে আমাদের ওপর পর্বত তুলে না দিয়ে ছোট বাজেট ও ছোট বোঝা বেশি দরকার। ঋণ করে ঘি না খেয়ে নিজেদের টাকায় একটু বাঁচার চেষ্টা করি।



প্রজন্মনিউজ২৪/এম এম 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ