চবিতে নির্বিচারে ছাত্রলীগ নিয়োগ দিয়ে বিতর্কে উপাচার্য

প্রকাশিত: ১৫ মে, ২০১৯ ০২:৫৪:৩১

চবিতে নির্বিচারে ছাত্রলীগ নিয়োগ দিয়ে বিতর্কে উপাচার্য

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেয়ায় বিতর্কে রয়েছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। বর্তমান উপাচার্যের মেয়াদে ছাত্রলীগের পদধারী, আওয়ামী লীগ নেতাদের সন্তান, আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের আত্মীয়-স্বজনকে সবচেয়ে বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

যোগ্যতার চেয়েও রাজনৈতিক পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়ে এসব নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেকে।

এমনকি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনকারী প্রার্থীদের মধ্যে তুলনামূলক কম পয়েন্টধারী হয়েও নিয়োগ পেয়েছেন অনেক ছাত্রলীগ নেতা বলেও অভিযোগ রয়েছে। কর্মচারী নিয়োগেও ছাত্রলীগ নেতাদের দেয়া হয়েছে বিশেষ সুবিধা। নির্ধারিত যোগ্যতার ন্যূনতম পূরণ করে আবেদন করেই এই উপাচার্যে আমলে শিক্ষক হয়ে গেছেন ছাত্রলীগের অন্তত ডজনখানেক নেতা। কর্মচারী নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে বেশিরভাগই মামলার আসামি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত সংঘর্ষ কিংবা হামলার ঘটনায় তাদের অনেকেই হয়েছিলেন বহিষ্কৃত। তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে এসব বিষয়কে আমলে নেয়নি বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নির্বিচারে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়োগ দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক শিক্ষক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, আমরা অনেক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করছি। রাজনৈতিক বিবেচনায় যারাই নিয়োগ পেয়েছে তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যোগ্য নন। বিগত চার বছরে বর্তমান উপাচার্য যেসব নিয়োগ দিয়েছেন তার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই রাজনৈতিক বিবেচনায়। ছাত্রলীগের প্রায় ডজন খানেক নেতাকর্মীকে নিয়োগ দিয়েছেন শিক্ষক হিসেবে। তাদের চেয়েও অধিক যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি পায়নি অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগের ৫০ জনেরও বেশি নেতাকর্মীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে নিম্নমান, উচ্চমান ও ঊর্ধ্বতন সহকারী পদে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর সময়ে চাকরি পাওয়া ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর অনুসারী সাবেক সহ সভাপতি মোহাম্মদ মামুনের ভাই মোহাম্মদ মাসুম, চবি ছাত্রলীগের সাবেকসহ সভাপতি ওসমান, সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সিতাপ, সহ-সভাপতি এসএম আলাউদ্দিন আলম, সহ-সভাপতি মো. হাবিবুল বাশার শান্ত, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ রাকিব উদ্দিন, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন, সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সহ-সভাপতি আরমান হেলালী, যুগ্ম সম্পাদক তানজীম, যুগ্ম সম্পাদক সুমন মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান হোসেন, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক মনসুর আলী, ছাত্রলীগ কর্মী মানিক চন্দ্র দাশ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শরীফুল ইসলামের ভাই, সহ-সম্পাদক সুকান্ত রুদ্র, ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদুল ইসলাম জিমেল, হাটহাজারী আওয়ামী লীগ কর্মী রাশেদ হোসাইন, সাবেক চবি ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুল কদরের ছেলে শাওন ইমতিয়াজ, ছাত্রলীগ কর্মী মোহাম্মদ শফিউল আলম চৌধুরী, ছাত্রলীগকর্মী তৌহিদ ওসমান, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক এমরান হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা আসতারুল হক, সহ-সম্পাদক মো. ইব্রাহিম খলিল, হাটহাজারী ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ মনজুর মিয়া, হাটহাজারী আওয়ামী লীগ নেতা মো. রাশেদ চৌধুরীসহ প্রায় ৫০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। তাদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে রয়েছে মামলা, ছাত্রজীবনে বহিষ্কার হওয়াসহ নানা অভিযোগ।

শিক্ষক নিয়োগেও তিনি ছাত্রলীগকে দিয়েছেন বিশেষ সুবিধা। আবেদনকারী প্রার্থীদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম পয়েন্টধারী হয়েও ছাত্রলীগের পদধারীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। ইতিহাস বিভাগে নিয়োগ দিয়েছেন চবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রন্টু দাকে। ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক হয়েছেন ছাত্রলীগে সহ-সম্পাদক জিমি সারোয়ার। বিবিএ অনুষদ ছাত্রলীগ সভাপতি রিফাতকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে হিউম্যান রিসার্চ ম্যানেজমেন্ট বিভাগে। নাট্যকলা বিভাগে নিয়োগ দেয়া ছাত্রলীগের ভারত শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কবির রিক্তকে। একাউন্টিং বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদুল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা অলি আহমেদ পলাশকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক। দর্শন বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা আসাদুজ্জামানকে। কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আলীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে।

এছাড়া আওয়ামীপন্থি প্রভাবশালী শিক্ষকদেরও সুপারিশে বিভিন্ন পদে কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন বর্তমান উপাচার্য। তার আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. কামরুল হুদার সুপারিশপ্রাপ্তরা। উপাচার্যের কাছ থেকে নিয়োগ আদায়ের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন প্রফেসর ড. সুলতান আহমেদ। এছাড়াও উপ উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীন আখতার, কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. সেকান্দর চৌধুরী, প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী, সহকারী প্রক্টর লিটন মিত্র, হেলাল উদ্দিন আহমেদ, সাবেক সহকারী প্রক্টর ও দিয়াজ ইরফান হত্যা মামলার আসামি আনোয়ার হোসেন চৌধুরীসহ হলুদ দলের প্রভাবশালী শিক্ষকদের সুপারিশে নিয়োগ পেয়েছেন বেশ কয়েকজন কর্মচারী।

এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপিদের তদবিরেও নিয়োগ পেয়েছে অনেক কর্মচারী।

জানতে চাইলে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অতীতে জামায়াত-বিএনপি’র অসংখ্য নিয়োগ হয়েছে নির্বিচারে। ছাত্রলীগের কোনো নেতা বা কর্মী যোগ্য হলেও তাদের নিয়োগ দেয়া হয়নি। আমার সময়ে আমি কোনো দলীয় পরিচয়কে গুরুত্ব দিইনি। যোগ্যতার মাপকাঠিতে, সকল নিয়ম মেনে নিয়োগ দিয়েছি। এর মধ্যে যদি কোনো ছাত্রলীগ, আওয়ামী পরিবারের সন্তান নিয়োগ পায় তাহলে কি সেটা মুখ্য বিষয়।

এক প্রশ্নের জবাবে চবি উপাচার্য আরো বলেন, তবে ছাত্রলীগের কেউ যদি যোগ্য হয়, আওয়ামী লীগ পরিবারের কেউ যদি যোগ্যতা বহন করে তাহলে তাকে নিয়োগ দেয়া কি অপরাধ? বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগবিধি অনুযায়ী সকল শিক্ষক, কর্মচারীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined index: category

Filename: blog/details.php

Line Number: 417

Backtrace:

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ