আওয়ামী লীগের শাসনামল ছিল ‘ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী’ : প্রধান প্রেস সচিব

প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর, ২০২৪ ০৬:৫৪:১৫ || পরিবর্তিত: ২০ নভেম্বর, ২০২৪ ০৬:৫৪:১৫

আওয়ামী লীগের শাসনামল ছিল ‘ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী’ : প্রধান প্রেস সচিব

ডেস্ক রিপোর্ট: আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের কর্মকাণ্ড ‘ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী’ বলে বর্ণনা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ সময় তিনি বলেন, এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েমে সম্মতি উৎপাদনের কাজ করেছেন বাংলাদেশের বিশালসংখ্যক সাংবাদিক। এটা নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে। বিগত শাসনামলে কার কী ভূমিকা ছিল, কে কীভাবে সাংবাদিকতা করেছেন, তা নিয়ে গবেষণা করা দরকার।

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই’ প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় শফিকুল আলম এ কথা বলেন। ‘জুলাই গণহত্যায় গণমাধ্যমের ভূমিকা: জবাবদিহি ও সংস্কার প্রস্তাব’ শিরোনামের এই সভায় তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন।

‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই’ এর আহ্বায়ক সাংবাদিক জয়নাল আবেদিন শিশিরের সভাপতিত্বে এবং মুখপাত্র প্লাবন তারিকের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক ও শিক্ষক মাহাবুব আলম।

 এ সময় তিনি ৮ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- ১. স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকার গণমাধ্যমের জন্য অনেকগুলো নীতি ও আইন প্রণয়ন করে গেছেন। কিন্তু সবই করেছেন নিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষা থেকে। তাই বিদ্যমান সব নীতি-আইন থেকে নিয়ন্ত্রণমূলক ধারা পরিমার্জনা করে একটি স্বাধীন গণমাধ্যম ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। এর মাধ্যমে গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সঠিক তথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার সম্ভব হবে। ২. বাংলাদেশের বেশিরভাগ টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদন রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমের যেসব মালিক ও নির্বাহীরা গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে তৈরি করেছে, তদন্ত সাপেক্ষ তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে স্বাধীন সাংবাদিকতা করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ৩. মিডিয়ার মালিকানা ও অর্থায়নের উৎস সম্পর্কে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন যাতে রাজনৈতিক প্রভাব বা স্বার্থপরায়ণতা এড়ানো যায়। বড় করপোরেট ও রাজনৈতিক দলের মালিকানাধীন মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনি কাঠামো তৈরি করা যেতে পারে। ৪. যে কোনো সময় যে কোনো টেলিভিশন ও পত্রিকা সরকার বন্ধ করে দিতে পারার যে ভয়ংকর পদ্ধতি বা নীতি রয়েছে তা চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। ভবিষ্যতে আমার দেশ, দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টিভির মতো কোনো গণমাধ্যম যাতে বন্ধ না হয়। ৫. সাংবাদিকদের নিয়মিত বেতন ও পেশাগত সুরক্ষার জন্য টেকসই গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে একটি গণমাধ্যম কমিশন ও নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। ৬. গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য অভিন্ন ওয়েজবোর্ড প্রণয়ন করতে হবে। অনতিবিলম্বে নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করতে হবে। শ্রম আইন অনুযায়ী সংবাদকর্মীদের মাঝে লভ্যাংশ বণ্টন করার ব্যবস্থা করতে হবে। ৭. সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাসহ সব হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের বিচার নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের গুম, নির্যাতন ও হয়রানির সঙ্গে জড়িতদের বিচার নিশ্চিতে কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। ৮. একটি স্বতন্ত্র মিডিয়া কমিশন গঠন করা যেতে পারে, যা সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়াই মিডিয়ার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করবে। পাশাপাশি সাংবাদিকদের চাকরির সুরক্ষা, বেতনসহ নানা সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করবে।

দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, শেখ মুজিবের শাসনামল যদি আমরা দেখি তাহলে দেখব চারটা পত্রিকা বাদে বাকিসব পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। অগণিত সাংবাদিক বেকার হয়ে যায়। শেখ হাসিনাকে আমরা হিটলারকে অনুসরণ করতে দেখেছি। শেখ হাসিনা এমন একটি ব্যবস্থা কায়েম করেছিলে যেখানে মিডিয়া সবসময়ই তার গুণগাণে ব্যস্ত ছিল।

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের চিফ রিপোর্টার আব্বাস উদ্দিন নয়ন বলেন, ফ্যাসিস্টরা যেভাবে সব প্রতিষ্ঠানকে দখলে নেয়। ঠিক সেভাবে তারা মিডিয়াকেও দখলে নিয়েছিল। সাংবাদিকদের একপক্ষ সরকারের সুবিধা নিয়ে তাদের অংশীদারের ভূমিকা পালন করেছিল।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ বলেন, সাগর-রুনী হত্যার ঘটনায়, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে নির্যাতনের ঘটনায় সাংবাদিকেরা এক হয়ে কথা বলতে পারেনি। মিডিয়া ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিরুদ্ধে আমরা সম্মিলিত কোনো কণ্ঠস্বর এখনো দেখিনি। আমরা মনে করি সাংবাদিকদের সততা, সাহস এবং ন্যায় সঙ্গত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা থাকতে হবে।

এ সময় আরো আরো বক্তব্য রাখেন,বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সহসভাপতি ডা. তৌহিদুর রহমান আওয়াল,বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও একতার বাংলাদেশের সদস্য সচিব তাহমিদ আল মুদাসসির,সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান ,নিউ এইজ পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ,বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সিনিয়র সাংবাদিক এস এম রাশেদুল ইসলামসহ প্রমূখ ।

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ