দাদি দোয়া করিও, বেতন তুলেই বাড়ি আসব

প্রকাশিত: ১৭ অগাস্ট, ২০২৪ ১২:৫৮:৫৫

দাদি দোয়া করিও, বেতন তুলেই বাড়ি আসব

প্রজন্ম ডেক্স: দাদি দোয়া করিও। আগামী মাসে বেতন তুলে বাড়িতে আসব। তখন বিয়ে করে, নাতির বউ দেখার ইচ্ছে পূরণ করব।’জুলাইয়ের শেষ নাগাদ এই ছিল দাদির সঙ্গে বলা নাজমুলের শেষ কথা। এভাবেই দাদিকে স্বপ্ন পূরণের কথা বলে নিজেই চলে গেলেন ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত পোশাককর্মী নাজমুল ইসলাম। তাঁর আর বেতন তোলা হয়নি। মাস শেষ হওয়ার আগেই বাড়ি ফিরেছে তাঁর নিথর দেহ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট ঢাকার বাইপাইলে গুলিবিদ্ধ হন নাজমুল ইসলাম। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ আগস্ট রাতে মারা যান এই যুবক। 

বৃদ্ধা রাহেনা বেওয়া নাজমুলের কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। নাতিকে হারিয়ে মা গোলেনুর বেওয়া প্রায় বাকরুদ্ধ। শুক্রবার গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নুরপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় এমন দৃশ্য। নাজমুলের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে গ্রামজুড়ে। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে অকূলপাথারে পড়েছে নাজমুলের পরিবার। মাত্র একটা গুলি, আর তাতেই শেষ তরতাজা তরুণ নাজমুলের জীবন। সেই সঙ্গে নিভু নিভু তার পরিবারের একটু ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্নও।

নাজমুল ইসলামের বাবা হাইদুল মিয়া ছিলেন রিকশাচালক। এক বছর দুই মাস আগে তিনি মারা যান। এরপর সংসারের জোয়াল কাঁধে তুলে নেন সদ্য কুড়ির ঘরে পা দেওয়া নাজমুল ইসলাম। পরিবার পালনের দায়িত্ব নিয়েই দাদি আর মাকে গ্রামে রেখে ঢাকায় যান নাজমুল। তিন ভাই-বোনের মধ্যে নাজমুল ইসলাম ছিলেন সবার বড়। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে আগেই। নাজমুলের ছোট বোন পোশাকশ্রমিক আয়েশা বেগম জানান, ঢাকার বাইপাইলে ভাড়া বাসায় থেকে টুপি তৈরির কারখানায় কাজ করতেন নাজমুল ইসলাম। ৪ আগস্ট ওই কারখানা বন্ধ থাকায় বিকেলে তিন বন্ধুর সঙ্গে নাজমুল বাইপাইলের রাস্তায় নামেন। ওই সময় ছাত্রদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছিল। এক পর্যায়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুলিবিদ্ধ হন নাজমুল ও তাঁর বন্ধু নাঈম মিয়া। কিছুক্ষণ পরেই মারা যান নাঈম।

গুরুতর আহত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ নাজমুল ইসলামকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান তাঁর ভগ্নিপতি আব্দুল মজিদ মিয়া। তিনি বলেন, নাজমুলের পেটে গুলি আটকে ছিল। তবে হাসপাতালে নেওয়ার প্রায় ১২ ঘণ্টা পর তাঁকে অপারেশন রুমে ঢোকানো হয়। সেই সময় আহত মানুষের ভিড়ে চিকিৎসকরা স্বাভাবিক কাজ করতে পারছিলেন না। অপারেশনের পর গুলি বের হলেও নাজমুলের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। সেখানে পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ৯ আগস্ট রাতে মারা যান তিনি। ঢাকা থেকে নাজমুল ইসলামের লাশ পরিবহন করে আনার মতো টাকা ছিল না বলে জানিয়েছেন তাঁর প্রতিবেশী পারভিন বেগম। একজনের অনুরোধে বাড়িতে মরদেহ পৌঁছার পর ধার করে টাকা তুলে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া পরিশোধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, নাজমুলরা অত্যন্ত অভাবী। ঢাকায় চাকরি করে ছেলে যে টাকা পাঠাত তা দিয়েই চলত সংসার।

অপর প্রতিবেশী মফিজল হোসেন জানান, অত্যন্ত ভদ্র এবং কর্মঠ যুবক ছিলেন নাজমুল। এই বয়সেই সংসারের হাল ধরেছিলেন। মাকে পাকা দালান বানিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সেই স্বপ্ন তাঁর পূরণ হলো না। সাদুল্লাপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রাজু কামাল জানান, লোকমুখে নাজমুল ইসলামের মৃত্যুর বিষয়টি জেনেছেন। তবে দাপ্তরিকভাবে তাঁকে কোনো কিছু জানানো হয়নি। কয়েকজন ছাত্রের সহায়তায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই নাজমুল ইসলামের মরদেহ বাড়িতে আনা হয়েছে বলে জানান নিহত নাজমুলের ছোট বোন আয়েশা। তিনি জানান, ওই সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মানুষের ভিড় ছিল। সেখানে আহত আর নিহতদের স্বজনের চাপে তারা কী করবেন, সেটি বুঝতে পারেননি।

নিহত নাজমুল ইসলামের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মঈনুল হাসান সাদিক। এ সময় দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে সংক্ষিপ্ত পথসভায় তিনি বলেন,‘শেখ হাসিনার সরকারের নির্যাতন থেকে খেটে খাওয়া যুবকও রক্ষা পেল না। তার দুঃশাসনে মানুষ ছিল অতিষ্ঠ।’সুযোগ পেলে তিনি নাজমুলের পরিবারের সাধ্যমতো সহায়তা করবেন বলেও জানান।


প্রজন্মনিউজ২৪/এম বি

এ সম্পর্কিত খবর

বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কার্যক্রম শুরু হতে ২০২৬

হল উদ্ধার নিয়ে ভূয়া তথ্য ছড়াচ্ছে জবি শিক্ষার্থী বকর

মাদকের গডফাদারদের ধরে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু

২৬ তারিখ কী ঘটবে, তাহলে ২৬ তারিখে সবাই কোটিপতি হতে যাচ্ছে !

কুমিল্লায় ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৩

বিএসএফের গুলিতে নিহত স্বর্ণা দাসের পরিবারের পাশে জামায়াত

পেঁপেগাছ সরাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিনজনের মৃত্যু

ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে বঙ্গভবনে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল

ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ