প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০১:১৩:৫১
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ইকবাল রোডে সম্প্রতি পুরোনো পানির পাইপ সরিয়ে নতুন পাইপ বসায় ঢাকা ওয়াসা। এ জন্য সড়কটি এমনভাবে কাটা হয়, যেন সড়কের বুক চিরে একটি নালা চলে গেছে! এতে এলাকার বহু মানুষ দীর্ঘদিন তাদের গাড়ি অন্যত্র রাখতে বাধ্য হন। সড়কের পাশের দোকানগুলোর ব্যবসাও লাটে ওঠে। কিছুদিন আগে ভরাট হয়েছে এই সড়কের খানাখন্দ, তবে এখনও চলাচলের পুরোপুরি উপযোগী নয়। ফার্নিচার ব্যবসায়ী গুরুপদ সূত্রধর বললেন, ‘কয়েক মাস ধরে ব্যবসা নেই, পুঁজি ভেঙে খাচ্ছি।’ বাড়ি-মালিক আবু তাহের জানালেন, তাঁর কয়েকটি ফ্ল্যাট খালি। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ভাড়া হচ্ছে না।
তবে শুধু ইকবাল রোড নয়, রাজধানীর অনেক এলাকায় চলছে এমন কাটাকাটি। আর এ কাজে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না সেবা সংস্থাগুলো। যেমন কোন সংস্থার কাজ, ঠিকাদারের ফোন নম্বর, কাজ শুরু ও শেষের তারিখসহ বিভিন্ন তথ্য খনন এলাকায় সাইনবোর্ডে উল্লেখ থাকার কথা। কিন্তু ঠিকাদাররা এই নিয়ম মানছেন না; তদারককারী সংস্থাও উদাসীন।
‘ঢাকা মহানগরীর সড়ক খনন নীতিমালা-২০১৯’-এ উল্লেখ রয়েছে, বছরের ১ মে থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কোনো সড়ক মেরামত, কাটাকাটি বা খোঁড়াখুঁড়ি করা যাবে না। কিন্তু বাস্তবে এই নীতিমালা মানছে না কেউ। এটি কার্যকর করতে সিটি করপোরেশনের ওয়ান স্টপ সেলের ভূমিকাও চোখে পড়ে না। তাই বছরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ির ফলে ভোগান্তিতে থাকে নগরবাসী। নগর পরিকল্পনাবিদ ও ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘ওয়ান স্টপ সেলের দায়িত্ব হলো মহানগরীর সড়ক খনন নীতিমালা কঠোরভাবে অনুসরণ করা। প্রয়োজনে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে মনিটর করা। কিন্তু কাউন্সিলররা এদিকে নজর দেন না। এ কারণে ঠিকাদাররা নীতিমালার ব্যাপারে উদাসীন।’ দু-চারজনের শাস্তি হলেই নিয়ম লঙ্ঘন বন্ধ হবে বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ওয়ান স্টপ সেলের আহ্বায়ক ও ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, ‘ধরেন কিছু এলাকায় পানি নেই। লোকজন পানি পাচ্ছে না। তখন অনুমতি দিতেই হয়। বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও এমন হয়। তারপরও আমরা অসময়ে সড়ক কাটাকাটি নিরুৎসাহিত করি। জরুরি প্রয়োজনে অনুমতি দেওয়া লাগে, সে ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ রোড কাটিং ফি নেওয়া হয়। তাছাড়া, এই সময়ে সাধারণ খোঁড়াখুঁড়ির অনুমতি দেওয়া হয় না।’
ছয় মাসের বেশি সময় ধরে হাতিরঝিলের রামপুরা থেকে মগবাজার রেল ক্রসিং পর্যন্ত সড়কের একটি লেন খোঁড়াখুঁড়িতে তছনছ। রাস্তাটি কেটেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সম্প্রতি মাটি ফেলা হলেও রাস্তাটির কোথাও উঁচু কোথাও নিচু। কোথাও আবার বড় বড় গর্ত। বৃষ্টি হলে এই সড়কে চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ছে। তাজউদ্দীন আহমদ সরণির হাতিরঝিল পয়েন্ট থেকে মগবাজার ক্রসিং পর্যন্ত খোঁড়া, গভীরতাও অনেক। যানবাহন যাতে গর্তে না পড়ে সেজন্য রাস্তার পাশে দেওয়া হয়েছে বাঁশের বেড়া। শ্রমিকরা সেখানে পাইপ বসাচ্ছেন। এখানে সবসময় লেগে থাকছে যানজট।
দুটি স্থানেই খোঁড়াখুঁড়ি করছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। মাটির নিচে ‘হাই ভোল্টেজ’ বিদ্যুৎ লাইন বসাচ্ছে তারা। কিন্তু এ-সংক্রান্ত কোনো সাইনবোর্ড সেখানে নেই।
ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘একটি কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় আরেকটি কাজ না করলে হচ্ছে না। তখন কাজে দেরি হয়। তাছাড়া, সিটি করপোরেশন ফেস বাই ফেস রাস্তা কাটার অনুমতি দেয়। এ জন্যও দেরি হয়।’ তিনি জানান, হাতিরঝিলে ডিপিডিসির কাজ শেষ, রাস্তা কার্পেটিংয়ের দায়িত্ব রাজউকের। তবে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক বলেন, ‘পিজিসিবি ও ডিপিডিসি নির্ধারিত সময়ে কাজটি শেষ করতে পারেনি। তবে পরে তারা খনন অংশে মাটি ভরাট করেছে। ইতোমধ্যে কার্পেটিংয়ের জন্য টেন্ডার করেছি। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে কাজ শুরু হবে।’
সিটি করপোরেশন ছাড়াও রাজধানীতে সড়ক কাটাকাটি করে বিদ্যুৎ বিভাগ, ঢাকা ওয়াসা, তিতাস গ্যাস, বিটিসিএল ও বিভিন্ন কেবল অপারেটর। তবে বেশি অভিযোগ সিটি করপোরেশন, ওয়াসা ও বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসার মুখপাত্র মোস্তফা তারেক বলেন, ‘নগরবাসীকে সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য ‘ডিস্ট্রিক্ট মিটারড এরিয়া’ (ডিএমএ) সিস্টেম চালু হয়েছে। এ জন্য পুরোনো পাইপ বদলে সবখানে নতুন পাইপ বসানো হচ্ছে। এরই মধ্যে ৯২ শতাংশ কাজ শেষ। বাকি কাজটুকু শেষ হলে সিস্টেম লস ৫ শতাংশে নেমে আসবে।’ তিনি জানান, রাজধানীকে ১৪৬টি ডিএমএতে ভাগ করা হয়েছে। এই কাজ শেষ হলে মানুষ নিরাপদ পানি পাবে, রাস্তাও আর কাটাকাটি করবে না ওয়াসা। তবে ওয়াসা নিয়ম মেনেই কাজ করে বলে দাবি করেন তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কিছু এলাকায় ড্রেন আধুনিকায়নের কাজ চলছে। যানবাহনের চাপ থাকায় দিনে খোঁড়াখুঁড়ি সম্ভব হয় না, রাতে করা হয়। এতে মানুষের ভোগান্তি কম হয়। ডিএসসিসি সবসময় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী একেএম শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় রাস্তা ও ড্রেন খোঁড়াখুঁড়ি করতে হয়। বর্তমানে মিরপুরের কয়েকটি সড়ক ছাড়া ডিএনসিসি কোথাও সড়ক কাটাকাটি করছে না। জনগণের যাতে ভোগান্তি না হয় সে ব্যবস্থা করেই কাজ করা হচ্ছে।’
খোঁড়াখুঁড়ি রাজধানীজুড়ে
পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া এলাকার বিভিন্ন রাস্তা দুই মাস ধরে কাটা। টিকাটুলী থেকে গেণ্ডারিয়া যাওয়া সড়কের একপাশ দীর্ঘদিন ধরে খোঁড়া। যত্রতত্র রাখা পাইপ-বালু-ইট-সুরকি। সতীশ চন্দ্র সাহা লেনের পুরোটারই কাটাকাটি। এলাকার মানুষের ভোগান্তি এতে চরমে। ফুটপাত দিয়েও চলাচল করা কষ্টকর।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হেডকোয়ার্টার থেকে শুরু করে ইস্কাটনের নিউ এলিফ্যান্ট রোডের ফুটপাত কেটে গভীরে পাইপ বসানোর কাজ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। তাই ফুটপাতটি ব্যবহার অযোগ্য। বংশালের কাজী আলাউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতাল থেকে নাজিরাবাজার চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কে ড্রেন মেরামত চলছে চার মাস ধরে। স্থানীয়রা জানান, এক দিন কাজ হয় তো দশ দিন হয় না। এর আগে বংশালের রোকনুদ্দিন মসজিদ থেকে নাজিরাবাজার চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কটি খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বন্ধ ছিল প্রায় এক বছর। এটি এখনও পুরোপুরি চলাচলের উপযুক্ত নয়।
পুরান ঢাকার বাবুবাজার ব্রিজ থেকে ইসলামপুর পাইকারি মার্কেট ধরে পাটুয়াটুলীর সড়কের নিচে ড্রেন নির্মাণ চলছে। ব্যস্ত সড়কটিতে বড় যানবাহন চলাচলের সুযোগ আপাতত নেই। কোতোয়ালি থানার সামনের সড়কটি মাস দুয়েক আগে কার্পেটিং শুরু হলেও শেষ হয়নি। সূত্রাপুরের কাগজীটোলার সড়কেও চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। বংশালের বাসিন্দা ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘একেকটি সড়ক একেক সময় সংস্কার হয়। এক দিক চালু থাকলে আরেকদিক বন্ধ থাকে। বৃষ্টি হলে ভোগান্তির শেষ থাকে না।’
এ ছাড়া মিরপুর, সেগুনবাগিচা, লালবাগ, চকবাজার, কদমতলী, গোপীপাড়া, ধানমন্ডি, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, গ্রিন রোড, মেরাদিয়া, মতিঝিল, শান্তিনগর, ফার্মগেট, রাজাবাজার, আজিমপুর ও জুরাইনের বিভিন্ন সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। যাত্রাবাড়ী থেকে কাজলা পর্যন্ত রাস্তাটির করুণদশা। মগবাজার ওয়্যারলেস গেট থেকে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের দিক যাওয়ার রাস্তাটি কাটাকাটির পর আর ঠিক হয়নি। শান্তিনগর, চামেলীবাগ এলাকায়ও অনেক সড়ক কাটাকাটির কারণে চলাচলের অযোগ্য।
নীতিমালায় কী আছে
‘ঢাকা মহানগরীর সড়ক খনন নীতিমালা-২০১৯’-এ উল্লেখ রয়েছে, রাজধানীতে দিনে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা যাবে না। বর্ষা মৌসুমেও (১ মে থেকে ৩০ সেপ্টম্বর) সড়ক কাটাকাটি করা যাবে না। তবে জরুরি প্রয়োজনে খনন করতে হলে ক্ষতিপূরণসহ ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত ফি দিতে হবে। আর কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে খননকাজ শুরু করলে জরিমানা গুনতে হবে মূল খরচের পাঁচ গুণ। তাছাড়া, মাইকিং করে এলাকার মানুষকে খননকাজ সম্পর্কে জানাতে হবে। আগেই সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। পাশাপাশি সাইনবোর্ডে খননকাজ ও ঠিকাদার সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করতে হবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়, রাস্তা খোঁড়ার কাজ মাসের পর মাস ফেলে রাখা যাবে না। রাতে খননের পর রাতেই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। আগের মতো উপযুক্ত ও ঝকঝকে-তকতকে করে রাস্তাটি তৈরি করতে হবে, যেন বোঝার উপায় না থাকে রাস্তাটি কাটাকাটি হয়েছে। আর যুক্তিসংগত কারণে কাজ শেষ করতে না পারলে কমপক্ষে পাঁচ দিন আগে সিটি করপোরেশনের ওয়ান স্টপ সেলকে জানাতে হবে। কাজ শেষ করতে সাত দিনের বেশি সময় নিলে মূল খরচের এক শতাংশ হারে জরিমানা দিতে হবে।
প্রজন্মনিউজ২৪/এএইচ
মার্জুকের নেতৃত্বে অবরোধ সমর্থনে জাবি ছাত্রদলের মশাল মিছিল
জবির নতুন ট্রেজারার অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবীর চৌধুরী
যশোরে ১৮ ও ৩ প্রার্থীর শার্শায় মনোনয়ন বাতিল।
বেনাপোলে ২৭৫ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক ১
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ শিক্ষার্থী ও বাস শ্রমিকদের সংঘর্ষে ১৫ ছাত্র ও এক শ্রমিক আহত
গলায় ফাঁস দিয়ে ৯ম শ্রেণির ছাত্রীর আত্মহত্যা
বিয়ের আসর থেকে বর চলে যাওয়াতে কনের আত্মহত্যা
খুলনায় ৭৫ ব্যারেল তেল চুরি, আটক ১