আলেমের প্রতি সম্মান ঈমানের দাবি

প্রকাশিত: ০৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭ ০৫:৩১:৪৩

আলেমের প্রতি সম্মান ঈমানের দাবি

 আল্লাহ তায়ালা শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন আলেমদের। বৃদ্ধি করেছেন তাদের মর্যাদা। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের জ্ঞান দেয়া হয়েছে, আল্লাহ বৃদ্ধি করেন তাদের  মর্যাদা।’ (সূরা মুজাদালাহ : ১১)।

অন্যত্র বলেন, ‘আপনি বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান?’ (সূরা জুমার : ৯)।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘আবেদের অপেক্ষা আলেমের মর্যাদা তেমন, যেমন তোমাদের সর্বাপেক্ষা ছোট ব্যক্তির তুলনায় আমার মর্যাদা। আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন মানুষের কল্যাণ শিক্ষাদাতার ওপর। তাদের জন্য দোয়া করে ফেরেশতারা, আসমান-জমিনবাসী, গর্তের পিপীলিকা, এমনকি (পানির) মাছও।’ (তিরমিজি : ২৬৮৫)।

হাসান (রহ.) বলেন, ‘আলেমরা না থাকলে মানুষ গবাদি পশুর তুল্য হয়ে যেত।’ আলেম তারাই যারা শরিয়ত বহন করেন। কথা বলেন কোরআন-সুন্নাহর আলোকে। রক্ষা করেন ইসলামের পবিত্রতা। দূরে রাখেন তার থেকে সব কর্দযতা। লক্ষ্য রাখেন জনগণের দ্বীনের প্রতি। শিক্ষা দেন জাহেলদের। স্মরণ করিয়ে দেন আল্লাহভোলা বান্দাদের তার কথা। ফেতনা চিহ্নিত করেন। দূরীভূত করেন অন্ধকার। ফাঁস করেন ভ্রান্তলোকদের গোমর। তারা যদি আল্লাহর বিধিবিধান রক্ষা না করতেন, ইসলাম মিটে যেত। শরিয়ত বিলুপ্ত হতো। এক বর্ণনায় এসেছে, ‘জমিনে আলেমদের অবস্থান আসমানের নক্ষত্রতুল্য। যখন মানুষ তা দেখে, পথ চলে। যখন তা অদৃশ্য হয়ে যায়, অস্থির হয়ে পড়ে। (বায়হাকি : ১/৩৫৪)।

 

সম্মানযোগ্য আলেম যারা

সম্মান করা আবশ্যক ওইসব আলেমদের যারা শরিয়তের ধারক-বাহক। যারা সদিচ্ছা ও সৎকর্মে সুবিদিত। বিশুদ্ধ আকিদা ও নেককার পূর্বসূরিদের পন্থী হিসেবে সুপরিচিত। জীবন ব্যয় করেন যারা এলম অন্বেষণে ও এর বিতরণে। সঙ্গে সঙ্গে অর্জিত হয়েছে তাকওয়া। উম্মতের ন্যায়পরায়ণ শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিরা যাদের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছে নেতৃত্বের যোগ্যতার, শরিয়তে তাদের প্রজ্ঞার। পথ চলে মানুষ যাদের কথায়। বাস্তবিক পক্ষে তারাই বড় বড় ইমাম। তাদের চেয়ে কম এলমের অধিকারী যারা, তারা সম্মান পাবে তাদের এলম অনুযায়ী।

সম্মান প্রদর্শন কেন কীভাবে

আলেমদের সম্মান প্রদর্শন হলো তাদের জন্য দোয়া করা। তাদের প্রশংসা করা ও কল্যাণকামী হওয়া। দোষ গোপন রাখা। মানসম্মান রক্ষা করা। সহযোগিতা করা সৎ ও তাকওয়ার কাজে। গমন করা তাদের সাক্ষাতে। শিক্ষ অর্জন করা তাদের কাছ থেকে। প্রসার করা তাদের এলম ও ফতোয়া। জানতে চাওয়া তাদের সম্পর্কে, অবগতি লাভ করা তাদের ব্যাপারে। সাধারণ ও বিশেষ সর্বশ্রেণীর কাছে তুলে ধরা তাদের মর্যাদা।

আলেমদের সম্মান প্রদর্শন নেককার পূর্বসূরিদের নিদর্শন। সাহাবায়ে কেরাম সম্মান করতেন তাদের বড়দের ও ফকিহদের। তাদের কাছ থেকে শিখেছেন তাবেঈ ও তাবে তাবেঈরা। পরে এই উত্তম চরিত্র বিস্তৃত হয়েছে অনুসৃত ইমামদের যুগে। মালিক, শাফেয়ি, আওযায়ি, আহমদ, আবু-সাউর, ইসহাক (রহ.) প্রমুখের সময়ে। মুজাহিদ (রহ.) ছিলেন মক্কার কালো লোকদের অন্তর্ভুক্ত। ইবনে আব্বাস (রা.) এর গোলাম। অথচ ইবনে ওমর (রা.) তার ঘোড়ার লাগাম ধরে রাখতেন। তিনি বাহনে আরোহণ করলে কাপড় ঠিক করে দিতেন।

একদা জায়েদ বিন ছাবেত (রা.) জানাজা পড়ে শেষ করেন। আরোহণের জন্য তার সামনে আনা হলো একটি খচ্চর। তখন ইবনে আব্বাস (রা.) এলেন। তার লাগাম ধরলেন। জায়েদ (রা.) তাকে বললেন, হে রাসুলের চাচাতো ভাই, সরে যাও। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, বড় ও আলেমদের সঙ্গে এমনই করা হয়। ইমাম আহমদ (রহ.) অসুস্থতার কারণে হেলান দেয়া ছিলেন। এ সময় তার সামনে আলোচনা হয় ইবরাহিম বিন তাহমানের কথা। তিনি সোজা হয়ে বলেন, আমাদের উচিত নয় বুজুর্গদের নিয়ে আলোচনা করা আর হেলান দিয়ে বসে থাকা। তাউস (রহ.) বলেন, আলেমদের সম্মান প্রদর্শন সুন্নত।

শরিয়ত আদেশ করেছে তাদের সম্মান করতে। তাদের মর্যাদা দিতে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহকে সম্মান করার অন্তর্ভুক্ত হলো পাকা চুলওয়ালা মুসলিম, ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ এবং কোরআনের ধারক-বাহকের সম্মান প্রদর্শন।’ (আবু দাউদ : ৪৮৪৩)। আলেমদের সম্মান দ্বারা দীন হয় সুরক্ষিত। প্রসার হয় তার বিধিবিধান। ভারি হয় আহলে সুন্নাহর দল। উম্মত হয় সংঘবদ্ধ। মুসলমানদের মাঝে সৃষ্টি হয় ঐক্য। পাপিদের রাজত্ব হয় নির্মূল। জনসাধারণ মান্য করে আলেমদের কথা। ফেতনা-ফ্যাসাদে তাদের দ্বীনের প্রতি হয় আশ্বস্ত।

আলেমদের সম্মানে মানুষ তিন শ্রেণীর

১. আলেমদের রূঢ় সমালোচক : এরা আলেমদের প্রতি আবশ্যকীয় সম্মান প্রদর্শন করে না। এরা খারেজিদের অন্তর্ভুক্ত।

২. আলেমদের সম্মানে বাড়াবাড়ি প্রদর্শনকারী : এরা আলেমদের সম্মান করে তবে এতে করে বাড়াবাড়ি। তাদের প্রদান করে প্রাপ্য মর্যাদা থেকে অনেক বেশি। নিয়ে যায় তাদের নিষ্পাপ নবীদের কাতারে। ইবাদত করে তাদের কথা অনুযায়ী। কখনও এবাদত করে আল্লাহ ব্যতীত তাদেরই। তারা বেদাতি সম্প্রদায়। যেমনÑ রাফেজি ও তাদের পথ অবলম্বনকারীরা।

৩. আলেমদের সম্মানে মধ্যমপন্থী : এরা আলেমদের প্রাপ্য সম্মান প্রদর্শন করে। কিন্তু বাড়াবাড়ি করে না। অনুস্মরণ করে সঠিক বিষয়ে। বেঁচে থাকে তাদের ভুল থেকে। তারাই আহলে সুন্নাহ তথা সুন্নাহর ধারক-বাহক। নেককার পূর্বসূরিদের অনুসারী।

আলেম যদি ভুল করেন

একজন আলেমের সুস্পষ্ট ভুল ও বিচ্ছিন্ন কথার অনুসরণ তার সম্মান প্রদর্শনের জন্য আবশ্যক নয়। বরং তার এ কথা পরিত্যাজ্য। তাকে দেয়া হবে সদুপদেশ। কিন্তু মানহানি করা যাবে না এ ভুলের কারণে। সব জ্ঞানীরই বিচ্যুতি রয়েছে। ত্রুটি-বিচ্যুতি গোপন রাখেন বুদ্ধিমান ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিরা। বজায় রাখেন তাদের মান-সম্মান। সদুপদেশ দেন গোপনে। জালেম ও জাহেলরা আলেমের বিচ্যুতিতে হয় আনন্দিত, খুশিতে আত্মহারা। প্রকাশ করে তার বিচ্যুতির কথা। চেষ্টা করে তাকে লাঞ্ছিত করতে। যে অনুসরণ করল আলেমের বিচ্যুতির ও পক্ষাবলম্বন করল তার, সে খারাপ ব্যবহার করল তার সঙ্গে। সে হলো নিকৃষ্ট মত গ্রহণকারী।

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ