লিভার ক্যান্সার শনাক্তের নতুন পরীক্ষা উদ্ভাবন

প্রকাশিত: ১০ জুন, ২০২৩ ০৫:৫১:২০

লিভার ক্যান্সার শনাক্তের নতুন পরীক্ষা উদ্ভাবন

প্রাথমিক পর্যায়ে হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা (এইচসিসি) নামক লিভার ক্যান্সার রোগ শনাক্ত করা যাবে এমন একটি উচ্চমানের পরীক্ষা উদ্ভাবনের ঘোষণা দিয়েছে একদল প্রখ্যাত চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী। এই পরীক্ষা সুনির্দিষ্ট ডিএনএ মিথাইলেশন সিগনেচার পদ্ধতিতে এইচসিসি নির্ণয় করতে সক্ষম বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা। 

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইসিডিডিআর,বি জানায়, এই পরীক্ষার মাধ্যমে ঝুঁকিতে আছে এমন ব্যক্তিদের (যেমন লিভারের রোগ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং অ্যালকোহল গ্রহণকারী) এইচসিসি শনাক্তকরণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। ফলশ্রুতিতে ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অসুস্থতা ও মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমে আসবে।

জানা গেছে, মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা নামের লিভার ক্যান্সারে। এটি আপনার লিভারের প্রাথমিক কোষকে আক্রান্ত করে। এই কোষগুলোর নাম হেপাটোসাইট। এইচসিসি সাধারণত একটি টিউমারের জন্ম দেয়, যা বড় হতে থাকে। কিন্তু আপনার যদি সিরোসিস ও এইচসিসি উভয়ই থাকে, তাহলে আপনার লিভারজুড়ে অনেক ছোট ছোট টিউমার তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। চিকিৎসকরা বলেন, এইচসিসি’র ব্যাপকতা বিশ্বের সব দেশেই দেখা যায় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগ দেরিতে শনাক্ত হয়। ফলে এই রোগের চিকিৎসা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় যা রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
উদ্ভাবিত এই পরীক্ষা আধুনিক সিকুয়েন্সিং ও মাল্টিপ্লেক্সিং প্রক্রিয়া ব্যবহার করে সাধারণ টিস্যু, রক্তের অন্যান্য নমুনা ও নন-এইচসিসি টিউমার থেকে এইচসিসি নমুনাকে আলাদা করে প্রচলিত রোগ নির্ণয় পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা দূর করতে পারে। আইসিডিডিআর,বি জানিয়েছে, ৫৫৪ জন ব্যক্তিকে গবেষণার আওতায় এনে এই পরীক্ষাটির মূল্যায়ন করেছেন গবেষকরা।

এর মধ্যে ছিল এইচসিসি রোগী, নন-এইচসিসি ক্যান্সার রোগী, ক্রনিক হেপাটাইটিস- বি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও সুস্থ ব্যক্তি। ফলাফল হিসেবে এইচসিসি শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে ৮৪ দশমিক ৫ শতাংশ সেন্সিটিভিটি ও ৯৫ শতাংশ স্পেসিফিসিটি দেখা গেছে পরীক্ষাটিতে। 

এইচকেজি এপিথেরাপিউটিক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও গবেষণার অন্যতম বিজ্ঞানী অধ্যাপক মোশে জিফ বলেন, গবেষণাটি এপিজেনেটিক্স এবং মাল্টিপ্লেক্সড নেক্সট জেনারেশন সিকুয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্তকরণে আমাদের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি এবং এটি এই ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। 

আমরা শিগগিরই এইচকে সায়েন্স পার্কের সিএলআইএ-সিএপি স্বীকৃত ল্যাবরেটরিতে আমাদের বৈশ্বিক এবং স্থানীয় গ্রাহকদের জন্য পরীক্ষাটি সহজলভ্য করতে চাই এবং এই পরীক্ষাটিকে এইচকেজি’র এপিজেনেটিক পরীক্ষার ক্রমবর্ধমান পোর্টফোলিওতে যোগ করতে ইচ্ছুক। 

প্রখ্যাত বাংলাদেশি হেপাটোলজিস্ট ও গবেষণাটির প্রধান গবেষক অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, যদিও আরও গবেষণা প্রয়োজন, এইচসিসিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এমন ব্যক্তিদের ওপর রোগের প্রভাবকে রীতিমতো হ্রাস করার কার্যকারিতার এই অগ্রগতি, প্রকৃত পদক্ষেপ হিসেবে এইচসিসি’র উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ের একটি মানসম্মত কৌশলের ভূমিকা পালন করে। 

আইসিডিডিআর,বি’র বিজ্ঞানী ড. ওয়াসিফ আলী খান বলেন, এই অগ্রগতি এইচসিসি শনাক্তকরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে এটির সম্ভাবনা অসাধারণ। এর মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয়সহ বাংলাদেশের মানুষের জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে আমাদের দলের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটেছে। এইচসিসি’র ব্যাপকতা কমাতে এবং দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতির লক্ষ্যে আমরা বাংলাদেশে এই পরীক্ষা শুরুর পরিকল্পনা করছি।


প্রজন্মনিউজ২৪/ইমরান

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ