পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে নির্যাতন

প্রকাশিত: ০৯ জুন, ২০২৩ ১১:৫৮:৩২

পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে নির্যাতন

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে একজনকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে ব্যাপক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ইউপি সদস্যের নাম আব্দুর রহিম। নির্যাতনের শিকার সুমন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ রাজীবের বড় ভাই।

ভুক্তভোগী সুমন জানান, তাকে নির্জন স্থানে নিয়ে গাছে বেঁধে বিবস্ত্র করে শরীরে পিঁপড়া ছেড়ে দেওয়া হয়। পানি চাইলে মুখে পানি না দিয়ে কাদা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এতে তিনি বমি করলে ফের মুখে লতাপাতা ঢুকিয়ে চালানো হয় নির্যাতন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সুমন তার ওপর নির্যাতনের বিষয়টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন ও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। ওসি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাত ৯টার দিকে সুমনের ভাই আবদুল মাজেদ রাজিব বাদী হয়ে থানায় অপহরণ মামলা করেছেন। মামলায় ইউপি মেম্বার আবদুর রহিমসহ সাতজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়।

ছাত্রলীগ নেতা রাজীবের দাবি, তার সঙ্গে রাজনৈতিক শত্রুতার কারণে বড় ভাইকে তুলে নিয়ে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেছেন ইউপি সদস্য রহিম।

তবে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম। তিনি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও একই ইউনিয়নের যুবলীগ সভাপতি। তবে ওই কমিটি স্থগিত রয়েছে।

ভুক্তভোগী সুমন ও ছাত্রলীগ নেতা রাজীব চরবাদাম ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল বাশারের ছেলে। তারা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বচরসীতা গ্রামের বাসিন্দা।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী সুমন জানান, গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পঞ্চায়েত বাড়ির জামে মসজিদের সামনের রাস্তায় দুটি সিএনজি অটোরিকশাযোগে কয়েকজন লোক আসে। একপর্যায়ে মামলা আছে। বলে তারা সুমনকে তুলে নেয়। প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ভুলুয়া নদীর পাশে ফিরোজ মিয়ার প্রজেক্ট এলাকায় নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে গিয়ে সুমন সবাইকে চিনতে পারেন। তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলা হয়। লোকজন তার মোবাইল ফোন থেকেই ইউপি সদস্য আব্দুর রহিমকে কল দেয়। এর পর আব্দুর রহিম আসার পরই তাকে বিবস্ত্র করা হয়। একপর্যায়ে তার শরীরে পিঁপড়া ছেড়ে দেয়া হয়। এ সময় আবদুর রহিমসহ তার লোকজন সুমনকে এলোপাতাড়ি লাথি- ঘুষি মারতে থাকে। পরে তার মুখে কাদা ঢুকিয়ে দেয়। এতে তিনি বমি করে ফেলেন। ফের তার মুখে লতাপাতা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। পরে মুখমণ্ডলে কালো কাপড় বেঁধে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় আব্দুর রহিম ও তার লোকজন।

এর মধ্যে পরিবারের লোকজন থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন পুলিশের কেউই তাকে আটক করেনি। পরে পরিবার ও স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে দেখতে পান। খবর পেয়ে রাত ১টার দিকে পুলিশ তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নেওয়া হয়।

সুমন বলেন, "আমি আব্দুর রহিম ও তার লোকজনের কাছে পানি চেয়েছি। কিন্তু তারা আমাকে পানি দেয়নি। তারা আমার মুখে কাদা ও লতাপাতা ঢুকিয়ে দিয়েছে। আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে।

ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল মাজেদ রাজীব বলেন, রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আব্দুর রহিমের সঙ্গে আমার বিরোধ রয়েছে। গত ডিসেম্বরে তিনি আমার হাত ভেঙে দেন। এ ঘটনার মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে আব্দুর রহিম আট দিন জেল খেটেছেন। পরে তিনি জামিনে বের হন। এর পর তিনি বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি দিয়ে আসছেন। আমার সঙ্গে শত্রুতার জেরেই তিনি সুমনকে তুলে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছেন। আমরা এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার চাই।

ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম বলেন, আমি কিছুই জানি না। পূর্বশত্রুতার জেরে আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অভিযোগ করা হচ্ছে। ছাত্রলীগ নেতা রাজীব তার ভাইকে দিয়ে নাটক সাজিয়ে আমাকে হয়রানি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। রামগতি থানার ওসি আলমগীর হোসেন জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন।


প্রজন্মনিউজ২৪/এমএ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ