বউয়ের ভাগনীকে নিজের মেয়ে পরিচয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি

প্রকাশিত: ০৮ জুন, ২০২৩ ১০:২৭:২১

বউয়ের ভাগনীকে নিজের মেয়ে পরিচয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি

বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ( বশেমুরবিপ্রবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্ত্রীর বোনের মেয়েকে নিজের মেয়ে পরিচয়ে ভর্তির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টির বিগত ৫ বছরের পোষ্য কোটায় ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ সংক্রান্ত প্রমাণ পাওয়া যায়। অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম ড. আবদুল্লাহ আল আসাদ। তিনি ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ড. আবদুল্লাহ আল আসাদ ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে মোসাঃ চম্পা খাতুন নামে এক শিক্ষার্থীকে নোটারি ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে নিজের মেয়ে পরিচয়ে পোষ্য কোটায় ইংরেজি বিভাগে ভর্তি করান। তবে, মোসাঃ চম্পা খাতুনের এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সির সার্টিফিকেট পর্যালোচনা করে দেখা যায় তাঁর পিতার নাম— মোঃ নূর ইসলাম এবং মাতার নাম— মোসাঃ পাপিয়া খাতুন। তার পিতা বা মাতা কেউই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত নন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ঠিক আগে ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ড. আবদুল্লাহ আল আসাদ তাকে পোষ্য কন্যা হিসেবে গ্রহণ করেন।

আবদুল্লাহ আল আসাদ সাক্ষরিত ওই নোটারি ঘোষণাপত্রে তার বক্তব্য হিসেবে  উল্লেখ রয়েছে, ‘আমি ২য় পক্ষ ঘোষণা করছি যে, ১ম পক্ষের বড় কন্যা চম্পা খাতুনকে অদ্য হতে আমার পোষ্য কন্যা হিসাবে স্বীকৃতি দিলাম । আমি চম্পা খাতুনকে আমার পোষ্য কন্যা হিসাবে তার লেখাপড়া সহ যাবতীয় দায় দায়িত্ব বহন করব। তার যাবতীয় নিরাপত্তার দায়িত্ব অদ্য হতে আমার উপর ন্যস্ত হবে। তবে চম্পা খাতুন ভবিষ্যতে কখনোই আমার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে না। ইহাই আমার ঘোষণা।’

নোটারিকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামসুন্নাহার বলেন, সাধারণত একজন মানুষের জীবনের নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য নোটারির মাধ্যমে দত্তকের বিষয়টি করা হয়, যাতে সে আরেকটু ভালো থাকতে পারে। আর যেহেতু দত্তক গ্রহণের পর দত্তক ছেলে বা মেয়ে দত্তকগ্রহণকারীর পরিচয় বহন করে তাই কাগজপত্রেও তার পরিচয়ই থাকার কথা।

পোষ্য কোটায় ভর্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘২০১৭, ১৮ সালে একটি বড় সংখ্যক শিক্ষার্থীকে নোটারি ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে পোষ্য কোটায় ভর্তি করা হয়েছে, যারা আসলে পোষ্য কোটায় ভর্তির যোগ্য না। তবে ভাগনীকে নিজের মেয়ের পরিচয়ে ভর্তির ঘটনা আর নেই। শিক্ষকতো জাতির বিবেক, তারাই যখন এমনসব কাজ করে তখন আর কি করার! আমরা চোখের সামনে এসব দেখেছি আর আফসোস করেছি। যে শিক্ষক নিজেই স্বার্থের কারণে বেআইনি কাজ করে সে শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা কিভাবে দেবে, আবার যে শিক্ষার্থী ভর্তিই হয়েছে অসৎ উপায়ে সেই বা রাষ্ট্রকে কি দেবে! এসব নিয়মবহির্ভূত বিষয়গুলো বিচারের আওতায় আনা উচিত তাহলে ভবিষ্যতে আর কেউ এমন কোনো কিছুর চিন্তাও করবে না।’

এ বিষয়ে ড. আবদুল্লাহ আল আসাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিশ্চিত করেন চম্পা খাতুন তার বোনের মেয়ে। তবে নিজের মেয়ে পরিচয়ে পোষ্য কোটায় ভর্তির বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমিতো তখন শিক্ষাছুটিতে ছিলাম’। এসময় তাকে নোটারি ঘোষণাপত্রে প্রমাণ দেখানো হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলবো না।’

২০১৭-১৮ ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব এবং তৎকালীন মানবিকী অনুষদের ডীন ও ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান আশিকুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত তো সদস্য সচিব একা নেয় না, কমিটির সবাই মিলে নেয়। আর অনুষদের ডীন বা বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবেও আমি কোনো সুপারিশ করিনি। তাই ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্তের দায়ভারতো আমার একার নয়। এ বিষয়ে আপনারা অন্য সদস্যদের সাথেও কথা বলুন।

এসময় তিনি আরো বলেন, ব্যক্তিগভাবে আমি পোষ্য কোটায় ভাই-বোন বা ফাস্ট রিলেশনের বাইরে কাউকে ভর্তি করানোকে সমর্থন করি না। আইন অনুযায়ী পোষ্য কোটায় শুধুমাত্র ঔরসজাত সন্তান এবং স্বামী-স্ত্রী বিবেচিত হতে পারে এবং আমি মনে করি আমাদের আইন মেনেই পোষ্য কোটায় ভর্তি করা উচিত।

২০১৭-১৮ ভর্তি কমিটির সদস্য এবং তৎকালীন ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডীন ড. মো: শাহজাহান বলেন, ডীন হিসেবে আমি ভর্তি কমিটির একজন সদস্য ছিলাম কিন্তু ওই সময়ে পোষ্য কোটা সংক্রান্ত কোনো কিছুই ভর্তি কমিটিতে আলোচনা করে করা হত না।

এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুবের সাথে একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।


প্রজন্মনিউজ২৪/এমএ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ