স্কুল ছাত্রকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠালেন: প্রধান শিক্ষক

প্রকাশিত: ০২ জুন, ২০২৩ ০১:৫৯:৩০ || পরিবর্তিত: ০২ জুন, ২০২৩ ০১:৫৯:৩০

স্কুল ছাত্রকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠালেন: প্রধান শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিঝারী উপসী তারাপ্রসন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র জিহাদ চৌকিদারকে (১৬) ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শেখ নুরুল আমিন রতন দুই দফা পিটিয়ে আহত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে জিহাদ শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

 বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটিকে জানালে প্রধাণ শিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ছাত্রকে লাল টিসি দিয়েছেন। সুষ্ঠ বিচার চেয়ে নড়িয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভূক্তভোগী পরিবার ।  জিহাদ নড়িয়া উপজেলার ফতেজঙ্গপুর ইউনিয়নের হরকরা গ্রামের রুবেল চৌকিদারের ছেলে। রুবেল চৌকিদার নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর বাজারে ফুটপাতে কাঁচামালের ব্যবসা করেন।  

অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, স্কুলে শিক্ষক ও মেয়েদের ওয়াশরুম ঠিকঠাক থাকলেও ছেলেদের ওয়াশরুমটি ভাঙ্গাচোরা ও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে ছেলেরা সাধারণত স্কুলের পরিত্যক্ত ভবনের পিছনে পরিত্যক্ত জায়গায় প্রস্রাব করে থাকে।

গত সোমবার (২৯ মে) দুপুর আড়াইটার দিকে জিহাদ ওই  জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করে। বিষয়টি প্রধাণ শিক্ষক শেখ নুরুল আমিন রতনের নজরে পড়লে তিনি জিহাদকে ডেকে কাছে নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটাতে থাকে। পিটুনি খেয়ে জিহাদ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে কঞ্চি ভেঙ্গে গেলে সেখান থেকে থাপ্পড় মারতে মারতে অফিস রুমে নিয়ে সেখানেও তাকে মারপিট করে স্কুল থেকে বের করে দেয়। এতে জিহাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নীলাফুলা জখম হয় এবং প্রস্রাবের রাস্তায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়। পরে জিহাদ বাড়ি চলে গেলে তার পরিবারের লোকজন তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে।

 এ ঘটনায় জিহাদের বাবা রুবেল চৌকিদার ও মা রিমা বেগম স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহীদুল আলম রতন হাওলাদারের কাছে অভিযোগ করেন। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শেখ নুরুল আমিন রতন জিহাদের বাড়িতে লাল টিসি পাঠিয়ে দেন। যাতে জিহাদ অন্য কোন স্কুলেও ভর্তি হতে না পারে। এর ন্যায্য বিচার দাবি করে জিহাদের বাবা রুবেল চৌকিদার নড়িয়া থানায় মামলা অভিযোগ দায়ের করেছেন।

আজ (১ জুন) সকাল ১১টায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় জিহাদ হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। বাবা রুবেল চৌকিদার ও মা রিমা বেগম পাশেই বসে আছে। এ বিষয়ে কথা হয় তাদের সাথে। কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন জিহাদের বাবা-মা।  

জিহাদ বলেন, অনেক ছেলেরা সেখানে প্রস্রাব করলেও কাউকে কিছু না বলে শুধুমাত্র আমাকে ডেকে নিয়ে প্রধান শিক্ষক আমাকে পিটাতে পিটাতে তিনটি বাঁশের কঞ্চি ভেঙে ফেলে। আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্কুলের দপ্তরি প্রধান শিক্ষকের মারধর থেকে আমাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসে। তারপরও তিনি আমাকে চড় মারতে মারতে অফিসে নিয়ে মারধর করে। এ সময় প্রধান শিক্ষক আমাকে গালাগালি করে বলেন, 'তোর মতো পোলা আমি জায়গায় জন্ম দেই। তুই আমারে চেনোস, আমি তোর লাইফ শেষ করে দিবো।' পরে সে আমার বাড়িতে লাল টিসি পাঠিয়ে দেন। আমাকে মারছে তাতে আমার কোন দুঃখ নাই। কিন্তু সে আমাকে লাল টিসি দিলো কেন? এ স্কুলে আমি এ বছর রেজিষ্ট্রেশন করেছি, আগামীতে আমার এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা। আমি এখন কি করবো? আমি কি এখন অন্য স্কুলে ভর্তি হতে পারবো? আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

এসময় জিহাদের বাবা রুবেল চৌকিদার ও মা রিমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "আমার ছেলে কি এমন অপরাধ করেছে যার কারণে এভাবে মরলো এবং বাড়িতে টিসি পাঠিয়ে দিল? আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, কর্মকর্তা ও এলাকার সবার কাছে আমি এর ন্যায্য বিচার চাই।

এ বিষয়ে বিঝারী উপসী তারাপ্রসন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ নুরুল আমিন রতন বলেন, জিহাদ উশৃংখল টাইপের ছেলে। সে যেখানে সেখানে প্রস্রাব করে স্কুলের পরিবেশ নষ্ট করে। সে কারো কথা মানেনা। সে শিক্ষকদের সাথে বেয়াদবি করে। এজন্য তাকে শাসন করেছি এবং ভয় দেখানোর জন্য টিসি দিয়েছি। সে যদি ভালোভাবে পড়াশোনা করার প্রতিজ্ঞা করে তাহলে তাকে আবার সুযোগ দেয়া হবে।

 নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বিঝারী উপসী তারাপ্রসন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ নুরুল আমিন রতনের বিরুদ্ধে রুবেল চৌকিদার নামে এক অভিভাবক তার ছেলেকে মারধরের অভিযোগ দিয়েছেন। যেহেতু ছাত্র-শিক্ষকের সেনসিটিভ বিষয়, তাই তদন্ত সাপেক্ষে যেটা করলে ভালো হবে আমরা সেই ব্যবস্থাই গ্রহণ করবো।

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। তবে আমি বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।


প্রজন্মনিউজ২৪/এমএইচ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ