‘কাম পাইলে পেট চলে, বাজেট লইয়া চিন্তার সময় কই’

প্রকাশিত: ০২ জুন, ২০২৩ ১২:২৭:৫১

‘কাম পাইলে পেট চলে, বাজেট লইয়া চিন্তার সময় কই’

নিজস্ব প্রতিবেদক:ময়মনসিংহ নগরীর জুবলিঘাট এলাকায় রাস্তার পাশে নিজের ভ্যানের উপর বসে গল্প করছিলেন মিরাজ মিয়া (৫০)। তার পাশে বসে সঙ্গ দিচ্ছিলেন দেলোয়ার হোসেন (৪০)। গল্পের বিষয়বস্তু কি বাজেট? এমন প্রশ্ন করতেই বাজেট শব্দটির সঙ্গেই যেন অপরিচিত মিরাজকে পাশেরজন বলছিলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়ে-কমে যে ওইটা।’ তাৎক্ষণিক মিরাজের জবাব, ‘বাজেট বুঝি না বাপু। বোঝার দরকারও নাই। এইডা তো আঙ্গর পেটে ভাত দিতো না। কাম পাইলে পেট চলে, বাজেট লইয়া চিন্তার সময় নাই।’

এভাবেই একটানা বলে গেলেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কাতলাসেন এলাকা থেকে শহরে ভ্যান চালাতে আসা মিরাজ।
বাজেট নিয়ে কোনোরকম মাথাব্যথা নেই ওই এলাকার টং দোকানি নাজমুল মিয়ারও (২৬)। বাজেট নিয়ে জানতে চাইলে গোমড়ামুখে তার উত্তর, ‘বাজেটের খবর জাইন্যা কি আর হইবো। আঙ্গর তো আর কোনো পরিবর্তন হইতো না। দোহানদারি কইরা যা কামাই তা দিয়া কোনোরকমে সংসার চলে। দিন দিন সংসার চালানিই কঠিন হইয়া যাইতাছে। সবকিছুরই দাম বাড়ছে। আমরা যারা ছোটখাটো ব্যবসা করি, আঙ্গর ব্যবসায় লগ্নি বাইড়া গেছে কিন্তু লাভ তো আর বাড়ছে না। বাজেট জাইন্যা কি করমু, কাম কইরাই জীবন চালানো লাগবো।’

নাজমুলের দোকান থেকে পান নিয়ে খেতে খেতে নুরু মিয়া নামে এক রিকশাচালক কথার রেশ টেনে বলেন, ‘বাজেট বুইজ্যা লাভ আছে? রিকশার চাকা ঘুরাতে পারলে পকেটে টেহা আহে। হেই টেহা দিয়া বাজার সদাই লইয়া গেলে পেটে ভাত জুটে। এই শইলডাত যতদিন শক্তি আছে এইতাই কইরা বাইচ্যা থাকা লাগবো। 

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন তরুণ। যাদের কয়েকজন বাজেটের খোঁজ নিচ্ছিলেন অনলাইন পোর্টালে। দেখছিলেন কোন কোন পণ্যের দাম বেড়েছে আর কমেছে, কোন খাতে কেমন বরাদ্দ ইত্যাদি। কেমন বাজেট হয়েছে জানতে চাইলে সুমন মাহমুদ নামে এক তরুণ  বলেন, বাজেটের আকার বেড়েছে ঠিকই কিন্তু বাজেট গণমুখী হয়নি। নির্বাচনের বছর যেহেতু তাই গণমুখী একটি বাজেট দেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু আমরা দেখছি যে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব কিছুর দামই বাড়ছে। 

আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য সেটি নিশ্চয়ই ভালো হবে না।তবে মারুফ হাসান নামে আরেকজন  বলেন, তরুণ-তরুণীদের গবেষণায় বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা রেখেছে সরকার। যার মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ও ইনোভেশন সেন্টারের মাধ্যমে ৮০ হাজার তরুণ-তরুণীকে অগ্রসর প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এটি একটি ভালো ও সময়োপযোগী পরিকল্পনা বলে মনে করি।

সংসারের ব্যয় মেটাতে দিনে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির পাশাপাশি রাতে মুদি দোকানের ব্যবসা করেন সাইফুল ইসলাম। নগরীর সেহড়া এলাকায় বাজেট নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। সাইফুল ইসলাম বলেন, বাজেট যাই হোক না কেন, আমাদের মতো যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাদের এই ব্যবসা নিয়েই টিকে থাকতে হয়। এই বাজেট যদি আমাদের মতো ক্ষুদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পারে তবেই বাজেটের সার্থকতা থাকবে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদের ১৫তম বাজেট এটি।


প্রজন্মনিউজ২৪/এএইচ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ