টাকা পাচার করেছেন বড় ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ২৩ মে, ২০২৩ ০৩:৫৬:১৩

টাকা পাচার করেছেন বড় ব্যবসায়ীরা

অনলাইন ডেস্ক: অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন বলেছেন, বাণিজ্যনির্ভর মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি আগে ভালোভাবে দেখা হতো না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ির পর এখন বোঝা যাচ্ছে, বড় ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যের আড়ালে অনেক টাকা পাচার করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে এখন এসব ভালোভাবে দেখছেন ব্যাংকাররা। এ নিয়ে গভর্নর বারবার বলছেন, বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার প্রায় বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। সোমবার ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এবিবি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মানুষের আস্থার বড় জায়গা ব্যাংক খাত। এখানে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। তবে মাঝে যে চাপ তৈরি হয়েছিল, সে তুলনায় এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ডলারের বাজার পুরোপুরি ঠিক না হলেও আগের চেয়ে স্বাভাবিক হয়েছে। আমানত তুলতে এসে না পাওয়ার ঘটনা নেই বরং উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়েও আমানত বেড়েছে। ঋণে প্রবৃদ্ধি আছে। এবিবির চেয়ারম্যান বলেন, এখন থেকে প্রতি তিন থেকে চার মাস পর এবিবি এ ধরনের সংবাদ সম্মেলন করবে। পরে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী এবং এবিবির ট্রেজারার ও মিডল্যান্ড ব্যাংকের এমডি মো. আহসান উজ জামান। সেলিম আরএফ হোসেন আরও বলেন, করোনা মহামারির ধাক্কা বাংলাদেশ ভালোভাবে সামলে নিয়েছিল। পরে আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সব জিনিসের দর বেড়ে যায়। যে কারণে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ব্যাপক চাপ তৈরি হয়। তবে চাপ ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। এর মানে, ব্যাংক খাত একেবারে ঠিক হয়ে গেছে তেমন নয়। আবার সব এলসি খুলতে পারছে, তাও নয়। তবে গত বছরের তুলনায় পরিস্থিতি অনেক ভালো হয়েছে।

তিনি বলেন, মাঝে কিছু ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন এবং ডলার বিক্রির ফলে তারল্যের ওপরও চাপ তৈরি হয়। যে কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা করেছিল। কোনো ব্যাংকে টাকা তুলতে এসে পাননি কিংবা ঋণ চেয়ে না পাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে হয়তো বড় বিনিয়োগ হচ্ছে না। যে কারণে ঋণ প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম আছে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণের সংকট কোনো ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংক একা সমাধান করতে পারবে না। এখানে আইনি সংস্কারের দরকার আছে। আদালত ও বিচারক সংখ্যা বাড়াতে হবে। আর্থিক বিষয়ে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এছাড়া ঋণখেলাপিদের বিষয়ে কঠোর নীতি প্রয়োগ করতে হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে মুদ্রা সরবরাহই উচ্চ মূল্যস্ফীতির একমাত্র কারণ বলে মনে হয় না। এখানে সরবরাহব্যবস্থায় সংস্কারের দরকার আছে। কেননা এখন তো বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য কমছে। অথচ বাংলাদেশে চিনি কিনতে হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। আর উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো সুদহার অনেক বাড়িয়েছে। আগামী জুলাই থেকে বাংলাদেশে সুদহারের নতুন ব্যবস্থা চালু হতে যাচ্ছে। তবে এখানে সুদহার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করলে সমস্যা আছে। আবার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে কোথায় গিয়ে ঠেকবে বোঝা দায়। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেভাবে ধীরে ধীরে বাজারভিত্তিক করছে সেটি ভালো পন্থা। রেমিট্যান্স নিয়ে তিনি বলেন, ডলারের শুধু দাম নির্ধারণ করলেই হবে না, রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কী ধরনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, তাও দেখতে হবে। প্রবাসীরা বিমানবন্দরে ভালো সুবিধা পান না। তাদের কোনো ধরনের কাজ সম্পর্কে শেখানো হয় না। অন্যান্য দেশে বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং দেওয়া হয়, দক্ষ করা হয়, যা বাংলাদেশে দেওয়া হয় না। এতে প্রবাসীরা অনেক পিছিয়ে পড়ছেন।

তিনি আরও বলেন, দেশের ব্যাংক খাত গত বছরের তুলনায় স্বস্তিতে ফিরেছে। এখন ২ কিংবা ১টা ব্যাংক ছাড়া কোনো ব্যাংকে ডেফারড (বকেয়া বিল) পেমেন্ট বাকি নেই। তবে ২০১৮ বা ২০১৯ সালের মতো অবস্থায় আসতে এখনো বেশ সময় লাগবে। ২০২২ সালে বহির্বিশ্বের কারণে দেশে অর্থনৈতিক মন্দা, সামষ্টিক অর্থনীতির চাপ এবং রিজার্ভের যে সংকট গেছে, তা গত ৩৫ বছর দেখেনি দেশের ব্যাংক খাত। গত বছরের জুন-জুলাইয়ে ভয়াবহ মন্দায় পড়ে দেশ।

একবছরেই টাকার মান কমেছে ২৫ শতাংশ। ডলার সংকট কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি শুরু করায় মূলত তারল্য সংকট দেখা দেয়।

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিন বলেন, এখনো এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। ছোট ছোট এলসি খুলতেও কষ্ট হচ্ছে। আমাদের কাছে ১০টি এলে হয়তো চারটি এলসি খুলতে পারছি। তবে ভালো দিক হলো-রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ছে। করোনার পর ইউক্রেন-রাশিয়া পরিস্থিতিতেও অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে শুরু করছে ব্যাংক খাত। এখন আমানত বাড়ছে; কিন্তু সে তুলনায় ঋণ বিতরণ কমেছে। বর্তমানে অতিরিক্ত ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা তারল্য রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে জরুরি পণ্যের এলসি খোলাই এখন গুরুত্ব পাচ্ছে। আগে খেলনা আমদানির প্রয়োজন নেই। কারণ সার দরকার, তেল দরকার। ব্যাংক খাতের ওপর গ্রাহকের আস্থা বেড়েছে। রেমিট্যান্সে ডলারের রেট ৮৭ থেকে ১০৮ টাকা হয়েছে। সাময়িক তারল্য সংকট দেখা দিয়েছিল। তবে এখন অতিরিক্ত তরল্য রয়েছে।


প্রজন্মনিউজ২৪/ইমরান

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ