ক্যাম্পাসে অন্যরকম এক ঈদ আনন্দ

প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০১:১৬:৩৯

ক্যাম্পাসে অন্যরকম এক ঈদ আনন্দ

হাদীউজ্জামান: ঈদ বাঙালি মুসলমানের প্রাণের উৎসব। বছর ঘুরে দু’টি ঈদ শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা নিয়ে আসে। দেশের যে প্রান্তেই থাকুক নাড়ির টানে সবাই ফিরে আসে নিজ পরিজনদের কাছে। প্রিয়জন, আত্মীয়-প্রতিবেশীদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে চায়। ক্যাম্পাস জীবনের ব্যস্ততা বা নানা কারণে হয়তো সে সুযোগও অনেকের হয়ে ওঠে না। তাই সতীর্থ-সহপাঠীদের সাথে প্রিয় ক্যাম্পাসেই ঈদ আনন্দে মেতে উঠেন অনেক শিক্ষার্থী। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও তার ব্যাতিক্রম নয়। ক্যাম্পাসের প্রতিটি আঙিনায় এদিন ছিল উৎসবের আমেজ। কেন্দ্রীয় মসজিদে ঈদের জামাত হয় সকাল ৮টায়। সকাল সকাল পরিপাটি হয়ে সবাই চলে আসে মসজিদ প্রাঙ্গণে। কালবৈশাখী ঝড়ের পূর্বাভাস ছিল আগে থেকেই। মেঘে ঢাকা আকাশ আর মৃদুমন্দ বাতাস যেন এক অন্যরকম আমেজ তৈরি করে। মসজিদের সীমানা পেরিয়ে নামাজের সারি সারি কাতার দাঁড়িয়ে যায় মসজিদের সামনের আঙিনায়। নামায শেষে ইমাম সাহেব দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় দু’হাত তুলে মোনাজাত করেন। এক শান্ত-স্নিগ্ধ আবহ ছড়িয়ে পড়ে পুরো সামিয়ানা জুড়ে। 

নামাজ শেষে সবাই মেতে ওঠে ইদ শুভেচ্ছা বিনিময়ে। আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে বন্ধু ও সহপাঠীদের। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার অংশগ্রহণে পুরো ক্যাম্পাস যেন এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। কর্মসূত্রে যারা আশেপাশে ছিলেন তারাও ছুটে আসেন। অগ্রজ-অনুজদের শুভেচ্ছা, সালামি বিনিময় সবাইকে যেন কিছুক্ষণের জন্য হলেও বাড়ির মায়া ভুলিয়ে দিয়েছিল। জাবির পরিবেশটাই এমন, সবাই মিলে একটা পরিবার; এখানে সবাই একান্ত পরিজন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স অধ‌্যয়নরত বাংলা বিভা‌গের শিক্ষার্থী  মুহিবুল ইসলাম মুহিব ব‌লেন, ক্যাম্পাসে ঈদ এটাই প্রথম নয়, এর আগেও ক্যাম্পাসে ঈদ করা হয়েছে। তবে আগের চেয়ে এবারের ঈদটা  বেশ ভালো কেটেছে। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে না গিয়ে ঢাকায় থাকা হলেও ঈদের নামাজ পড়েছি সেন্ট্রাল মসজিদে। নামাজের পর পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা, টিএসসি ও মুক্তমঞ্চে ছবি তুলা, বন্ধু-সিনিয়র-জুনিয়রদের সাথে দেখা হওয়া সবমিলিয়ে এক অনন্য ভালো লাগা কাজ করেছে।

মীর মশাররফ হ‌লের আবাসিক শিক্ষার্থী শাফাত উল্লাহ বলেন, প‌রিবা‌রের বাইরে এটাই প্রথম ঈদ উদযাপন । একাডেমিক ব্যস্ততা থাকায় বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হয়ে উঠেনি। ক্যাম্পাসে এবার অন্যরকম ঈদ পালন করলাম। য‌দিও প‌রিবার প‌রিজন  ছে‌ড়ে বাইরে ঈদ উদযাপন করা একটু খারাপ লাগ‌লেও নামায শে‌ষে সি‌নিয়র জু‌নিয়র‌দের সা‌থে মত‌বি‌নিময় এবং ছ‌বি ওঠা, ঈদের নামায শেষে হলের ডাইনিংয়ে সবাই মিলে একসাথে সেমাই-বিরিয়ানি খাওয়া এক অন‌্যরকম ভা‌লো লাগা কাজ ক‌রে‌ছে । তারপর সারা‌দিন ব‌্যাপী বন্ধুবান্ধব‌দের সা‌থে ঘোরাঘু‌রি ও গল্প-আড্ডায় চমৎকার দিন কেটেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভ‌গের ৩য় ব‌র্ষের শিক্ষার্থী  ফের‌দৌস আল হাসানকে তাঁর অনুভূ‌তির কথা জান‌তে চাইলে তি‌নি বলেন,  বিভিন্ন কারণে ঢাকায় ও ক্যাম্পাসে ঈদ এটি প্রথম না হলেও ঈদ-উল-ফিতর এটিই প্রথম। তাই কেমন হবে ক্যাম্পাসের প্রথম ঈদ-উল-ফিতর তা নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলাম। তবে পরে মনে হয়েছে এটিই জীবনের অন্যতম সেরা ঈদ গুলোর একটি। প্রায় জনমানব শূণ্য ক্যাম্পাসে চাঁদ রাতে ঘুরতে ঘুরতে কয়েকজন পরিচিত সিনিয়ারের সাথে দেখা হয়ে যায় এবং সবাই মিলে চলে যাই সাভারের পল্লী ফুড ভিলেজে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে নানা খাওয়া-দাওয়া ও আড্ডা। ক্যাম্পাসে ঈদ করবো আর ঈদের নামাজ সেন্ট্রাল মসজিদে পরবো না তা যেন ভাবতেই পারি না। তাই ঈদের দিন সকাল সকাল মিষ্টি মুখ করে চলে যাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল মসজিদে ঈদের নামাজ পরতে। তার পরে ঘুরে দেখি চিরচেনা ক্যাম্পাস ও তার সা‌থে চলে নিজের ক্যাম্পাসে ঈদের দিনে কাটান সুন্দর স্মৃতিগুলো ক্যামেরা বন্দি করা কাজ। এর পরে কয়েকজন সিনিয়ার ও বন্ধুদের সাথে আড্ডা খাওয়া-দাওয়া। এভাবেই সুন্দর একটি ঈদ কেটে যায়। আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয় প্রত্যেক ছাত্ররই উচিত জীবনে একটি ঈদ হলেও ক্যাম্পাসে কাটান ও নিজের স্মৃতিতে কিছু নতুন পাতা যুক্ত করা।

উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীই প্রতিবারের মতো এবারো বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদ উদযাপন করেছেন। ক্যাম্পাসে ঈদ উদযাপন করলেন হৃদয়ে জাগরুক ছিল পরিবার-পরিজনদের স্মৃতি। দিনে শেষে এক সকল শিক্ষার্থীদেরএকটাই চাওয়া; ছুটি শেষে আবারও শিক্ষার্থীদের পদভারে মুখরিত হোক প্রিয় শিক্ষাঙ্গন। 

প্রজন্মনিউজ/এএ
 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ