বাঁশ থেরাপি !


শিরোনাম শুনে হয়তো কেমন কেমন লাগছে তাই না? আসলে আমাদের জীবনের সাথে বাঁশ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঁশ। জন্মের পর মা-খালা, নানি-দাদিরা যে দোলনায় চাপিয়ে দোল দিতে দিতে আমাদের গান শুনিয়েছেন, সেই দোলনাতো বাঁশেরই তৈরি ছিল। আবার মৃত্যুর পর বাঁশের খাটিয়াতে চড়েই কবরে যেতে হয়। দাফনের পর মাটিচাপা দেওয়ার আগেও বাঁশ লাগে। অর্থাৎ জীবনের কোনো প্রান্তেই বাঁশ থেকে মুক্তি নেই। কিংবা বলা যেতে পারে, আমাদের জীবন কোনোভাবেই বাঁশমুক্ত নয়।

সাহিত্যের কথা যদি বলি তাহলে প্রথমে যতীন্দ্র মোহন বাগচীর কবিতাটি মনে পড়ে,

বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,

মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?

গণিতেও আমারা বাঁশের উপস্থিতি দেখি। ভগ্নাংশে বাঁশ দেখে তো কত কচিকাঁচারা কচি বয়সেই বাঁশ খেয়ে ছিটকে গেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই।

শিক্ষা জীবনে বাঁশের তো জুড়িই নেই। এখানে প্রতিনিয়ত বাঁশ খেতে খেতে কত আত্মার মৃত্যু হচ্ছে তা কি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে?

তবে আমাদের সমাজে দৃশ্যমান বাঁশের চেয়ে অদৃশ্য বাঁশের ব্যবহারই বেশি। কেউ কাউকে অতিমাত্রায় প্রশংসা করলে সে ব্যক্তিকে বন্ধুরা প্রশ্ন করে, তিনি কি তোমার প্রশংসা করলো, নাকি বাঁশ দিল?

আর আমাদের রাজনীতি মানেই তো একে অপরের মধ্যে বাঁশাবাঁশি। রাজনীতিতে এ ধরনের প্রকাশ্য বাঁশ-থেরাপি চলছে দীর্ঘদিন ধরে।

আমরা এমনই পাষণ্ড এক জাতি যে, বাঁশ দেওয়ার পরও খোঁচাতে ছাড়ি না। যাকে বাঁশ দেওয়া হলো তার কাছে তো খারাপ লাগবেই, উল্টো যিনি বাঁশ দিয়েছেন তাকেও প্রশ্ন করা হয়; আপনি যে বাঁশ দিয়েছেন তা কি গিরাযুক্ত, নাকি মসৃণ? ছোলা না আছোলা?

কারো বাঁশ যাচ্ছে, কেউ বাঁশ খাচ্ছে, কেউ বাঁশ দিচ্ছে। কত রকম বাঁশ: যেমন- ঝাঁই বাঁশ, মুলি বাঁশ, বরাক বাঁশ, বাংলা বাঁশ। কোনো ঘটনা কারো জন্য বাঁশ হয়ে যাচ্ছে। অমুক বাঁশ খেয়েছে, তমুক বাঁশ দিয়েছে, অমুক সেধে বাঁশ নিয়েছে- এমন অনেক কথা আমরা শুনে থাকি। এই বাঁশ খাওয়া-নেওয়া-দেওয়ার বিষয়টির সঙ্গে অনেকের বংশানুক্রমিক সম্পর্কও রয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে কেউ কেউ বাঁশ খেতে, দিতে ও নিতে অভ্যস্ত।

বাঁশ যতই উপকারী হোক,হোক ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ, বাঁশের এই ‘দেওয়া-নেওয়া-খাওয়া’ জাতীয় ব্যবহার আমাদের জন্য খুবই বিপদের কথা। কারো বাঁশ যাক, কেউ বাঁশ খাক- এটা আমরা চাই না।

আসুন বাঁশ দেয়া, বাঁশ খাওয়া এই অপসংস্কৃতি থেকে দূরে থাকি।