বাবুরহাট কাপড়ের বাজারে বেড়েছে কাপড়ের দাম, কমেছে বেচাকেনা

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ, ২০২৩ ১১:০৩:৫৫ || পরিবর্তিত: ২৭ মার্চ, ২০২৩ ১১:০৩:৫৫

বাবুরহাট কাপড়ের বাজারে বেড়েছে কাপড়ের দাম, কমেছে বেচাকেনা

বাকি বিল্লাহ, নরসিংদী প্রতিনিধি: ধাপে ধাপে দেশে বেড়েছে গ্যাস, বিদ্যুৎ, সুতাসহ কাপড় তৈরির সকল উপকরণের দাম। সকল কিছুর দাম বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দেশিয় সকল কাপড়ের উৎপাদন খরচ। যার প্রভাবে বেড়েছে সব ধরনের দেশিয় কাপড়ের দাম। কাপড়ের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারী কাপড়ের বাজার নরসিংদীর শেখেরচর-বাবুরহাটে কমেছে আগের তুলনায় বেচাকেনার হার।

কাপড়ের দাম বাড়ার কারণে খুচরা বাজারে বেচাকেনা কম হওয়ায় পাইকারী কাপড়ের বাজারে ক্রেতাদের কেনা বেচা কম বলে জানিয়েছেন বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে সাধারণ  মানুষ এখন পরিবারের খরচ চালাতে হিমসিম খাচ্ছে। অনেকটা এর প্রভাবো পড়েছে কাপড় বেচা-কেনার উপর বলে মনে করছেন স্থানীয় পাইকারী বিক্রেতা সহ ক্রেতারাও।

কাপড় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও পাইকারী ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর শবে বরাতের পর থেকে পাইকারী ক্রেতার ভীড়ে মুখর হয়ে উঠে শেখের চর -বাবুরহাট পাইকারী কাপড়ের বাজার। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার থেকে শুরু করে শনিবার পর্যন্ত একটানা বেচাকেনা চলে এই হাটে। শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিস, শার্ট পিস, প্যান্ট পিসসহ গজ কাপড় কিনতে আসেন দেশের নানা প্রান্তের খুচরা কাপড় বিক্রেতারা। রোজার ঈদে যাকাতের জন্য শাড়ি, লুঙ্গি বেশি বেচাকেনার আশায় থাকেন বিক্রেতারা।

জানা যায়, চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের দেশীয় কাপড় পাওয়া যাওয়ায় এই হাটকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারী ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। বরিশাল, রাজশাহী, বগুড়া, সিলেট, ফেনি, নোয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, চাঁদপুর, পটুয়াখালী, জামালপুর, ভোলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জসহ দেশের নানা প্রান্তের পাইকারী ক্রেতার ভিড়ে সরগরম হয়ে থাকে বাজারটি। প্রতি বছর ঈদকে ঘিরে আগে থেকেই ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সবধরণের কাপড় বেচা কেনায় ব্যস্ত থাকেন ব্যবসায়ীরা। এ বছর অনেকটা পাল্টে গেছে সেই চিত্র।

দেশিয় সব কাপড়ের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে সব ধরনের কাপড়ের দাম। এছাড়া নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষ ঈদকে ঘিরে কাপড় কিনছেন কম। সেজন্য খুচরা বাজারে কাপড়ের বেচাকেনা কম হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে পাইকারী বাজারে। দাম বাড়ায় পাইকারী ও খুচরা কাপড় ক্রেতা-বিক্রেতাদের পূঁজি বিনিয়োগ করতে হচ্ছে বেশি। সে তুলনায় কাপড় বেচাকেনা কমেছে অনেকাংশে।
  
বিক্রেতারা জানান, বাজারটিতে ছোট-বড় প্রায় ৫ হাজার কাপড়ের দোকান রয়েছে। এছাড়া দেশিয় কাপড় উৎপাদনকারী প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে এই হাটে। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে ঘিরে বেচাকেনার আশায় এসব দোকানে শাড়ী, লুঙ্গি, থ্রিপিস, থান কাপড়, বিছানা চাদর, শার্টপিস, প্যান্ট পিস, পাঞ্জাবির কাপড়সহ দেশীয় প্রায় সবধরণের কাপড়ের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদ উপলক্ষে প্রতিবারের মত এবারও কাপড়ের ডিজাইনে আনা হয়েছে বৈচিত্র। কিন্তু আশানুরুপ বেচাকেনা না হওয়ায় অনেকটাই হতাশা ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে।

সিলেট থেকে আসা পাইকারী ক্রেতা মিলন মিয়া বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় খুচরা বাজারে কাপড়ের বেচাকেনা এখনও পর্যন্ত কম। ঈদের আগ মুহুর্তে বেচাকেনা বাড়তে পারে। তাই কম কাপড় কেনা হচ্ছে। কুমিল্লার খুচরা কাপড় বিক্রেতা নূরুল ইসলাম বলেন, সব কাপড়ের দাম বৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের দাম বাড়তিসহ অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে বেচাকেনা কমে গেছে। ঈদের বেচাকেনার যে প্রত্যাশা থাকে এবার সেটা অনেকটা কম মনে হচ্ছে।

বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মোঃ মোখলেছুর রহমান বলেন, প্রতিগজ কাপড়ে ১০-২০ টাকা দাম বেড়েছে। লুঙ্গি, শাড়ী ও থ্রি-পিসে ১০০-১৫০ টাকা বেড়েছে। উৎপাদন খরচ বাড়ায় সব ধরনের কাপড়ের দাম বাড়ার কারণে কাপড় বিক্রি হচ্ছে কম। মোঃ হানিফ মিয়া নামে পাইকারী কাপড় বিক্রেতা বলেন, একদিকে কাপড়ের দাম বাড়তি, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের দাম বেশি, সবমিলিয়ে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। খুচরা বাজারে বেচাকেনা হলেই পাইকারী বেচাকেনা ভাল হয়।

শেখের চর-বাবুরহাট বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান বলেন, ঈদকে ঘিরে পুলিশের পাশাপাশি সমিতির উদ্যোগে বাজারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। দেশের প্রায় ৭০ ভাগ কাপড়ের চাহিদা পূরণ করে থাকে শেখেরচর-বাবুরহাট। রং, সুতা, তুলাসহ কাপড় উৎপাদনে প্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম বাড়লেও সে তুলনায় কাপড়ের দাম খুব বেশি বাড়েনি। তবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ কাপড় কম কেনায় কিছুটা প্রভাব পড়েছে। আগে যে পাইকারী ক্রেতা ১০ হাজার পিস কাপড় কিনতেন, তিনি এখন ৬ হাজার পিস কাপড় কিনছেন। এই হাটে সাধারণত প্রতি হাটে ২ থেকে ২ শত ৫০ কোটি টাকার কাপড় বেচাকেনা হয়। ঈদের বাজারে তা বেড়ে ৩ থেকে ৪ শত কোটি টাকায় দাড়ায়।


প্রজন্মনিউজ২৪/উমায়ের

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ