আবাসিকতা পেলেও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে থাকা লাগছে মেঝেতে

প্রকাশিত: ২২ মার্চ, ২০২৩ ১১:৫৪:১৭

আবাসিকতা পেলেও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে থাকা লাগছে মেঝেতে

রাবি প্রতিনিধিঃ আবাসিকতা পাওয়ার পরেও তিনবার কক্ষ পরিবর্তন করা লেগেছে। এরপরও হলের নির্দিষ্ট সিট পাননি এখনো। থাকা লাগছে ফ্লোরিং করে। ফলে, মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। এমনটাই অভিযোগ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাদিম আলী।

নাদিম আলী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর থানার নাদেরাবাদ গ্রামের মো. বাইরুল ইসলামের ছেলে। বাবা পেশায় একজন দিনমজুর। বর্তমানে তিনি জিয়াউর রহমান হলের ২৫৫ নম্বর কক্ষে ফ্লোরিং করে অবস্থান করছেন।

নাদিম জানান, ৪ বছর বয়সে এক দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে বাম পা বিকল হয়ে গেছে তার। ডান পায়ে ভর করেই হাঁটেন তিনি। দরিদ্র পরিবারে অনেক সংগ্রাম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি হওয়ার পরে অ্যাটাচমেন্ট এসেছে শহীদ জিয়াউর রহমান হল। হলের আবাসিকতাও পেয়েছেন, কিন্তু হলে উঠার পর বারবার হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বারবার হলের এক কক্ষ থেকে অন্য কক্ষে সিট বরাদ্দ দিয়েছেন হল প্রাধ্যক্ষ। এখনো নির্দিষ্ট সিটে থাকতে পারছেননা। একাধিকবার এভাবে হলের সিট পরিবর্তন করায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন তিনি।

নাদিম আলী বলেন, গত ২৭ নভেম্বর (২০২২) হলের তৃতীয় ব্লকের নিচতলার ১৫২ নম্বর কক্ষ বরাদ্দ দেয়। কিন্তু ছাত্রলীগের হল সভাপতি নাঈম নামের এক শিক্ষার্থীকে ওই সিটে তোলেন। এতে দুইমাস ওই কক্ষে থাকতে পারিনি আমি। এসময় একদিন প্রাধ্যক্ষকে আবাসিকতার বিষয়টি জানালে আমার সঙ্গে তিনি দুর্ব্যবহার করেন।

এ ঘটনায় ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ আলী বলেন, ‘আমাদের কমিটিরই এক ছোট ভাই ওই কক্ষে ছিলো। প্রাধ্যক্ষ স্যার নাদিম আলীকে সেখানে অ্যালট দেন। পরে আমি প্রাধ্যক্ষ স্যারের সঙ্গে কথা বলে অন্য কক্ষে অ্যালট দিয়ে পরিবর্তন করে দেই।’

নাদিম বলেন, পরে গত ২ ফেব্রুয়ারি তাকে ২৩৪ নম্বর কক্ষে বরাদ্দ দেয় কিন্তু ওই কক্ষে আগে থেকেই দুই আবাসিক শিক্ষার্থী অবস্থান করছিলেন। পরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ২৫৫ নম্বর কক্ষে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই সিটে বর্তমানে ফ্লোরিং করে থাকছি। কিন্তু ওই সিটে আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকনের অনুসারী মেহেদী হাসান।

এ বিষয়ে মেহেদী হাছান বলেন, আমি একবছর ধরে ওই সিটে অবস্থান করছি। প্রাধ্যক্ষ আমাকে সিট বরাদ্দ দেবেন বলে জানায় কিন্তু দেয়নি। আমার কোনো আবাসিকতা নেই।

গত ৬ মার্চ ২২৭ নম্বর কক্ষে নাদিম আলীকে আবারও সিট বরাদ্দ দেয় প্রাধ্যক্ষ। কিন্তু ওই সিটে উঠতে নিষেধ করে হুমকি দিয়েছেন ১০৫ নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থী নুর আলী। তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ আলীর অনুসারী বলে নিশ্চিত করেছেন হলের সুপার ভাইজার মামুনুর রহমান।

অভিযোগের বিষয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ আলী বলেন, ওই কক্ষে আমার এক ছোট ভাইয়ের ওঠার কথা ছিলো, কিন্তু হল প্রাধ্যক্ষ ইতোমধ্যে দুজনকে অ্যালট দিয়ে দিয়েছেন। নুর আলীর হুমকির বিষয়ে কিছু জানি না।

হলে ওঠার বিষয়ে নাদিম আলী বলেন, ২০২২ সালের রমজান মাসের প্রথম দিকে হলে ওঠার জন্য আমি আবেদন করি। প্রাধ্যক্ষ আমাকে বলে প্রথমবর্ষে এতো তাড়াতাড়ি হলে ওঠানো সম্ভব না। আমি প্রাধ্যক্ষকে বলি, আমিতো শারীরিক প্রতিবন্ধী ও দরিদ্র পরিবারের সন্তান। হলের সিটে তো আমার কোটা আছে। কিন্তু প্রাধ্যক্ষ ফোন নম্বর দিতে বলেন। বলেন সিট খালি হলে কল দেবো। কিন্তু আমাকে কোনোদিন সিটের জন্য কল করেননি তিনি। পরে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন পিডিএফের (ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন) সুপারিশের মাধ্যমে গত বছরের ২৬ নভেম্বর প্রাধ্যক্ষের কাছে আবেদন করি ও সিট পাই।

এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ সুজন সেন বলেন, ওই ছেলেকে আমি সিট দিয়েছি। এমন তো না সিট দেইনি। বিভিন্ন কারণে তার সিট পরিবর্তন করা হয়েছিল। আমি কালকে হলে গিয়ে তার বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করবো।


প্রজন্মনিউজ২৪/একে

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ