৭ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ৫৪ হাজার কোটি টাকার বেশি

প্রকাশিত: ২২ মার্চ, ২০২৩ ১১:১৮:৪৯ || পরিবর্তিত: ২২ মার্চ, ২০২৩ ১১:১৮:৪৯

৭ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ৫৪ হাজার কোটি টাকার বেশি

আতাউর রহমান, নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৫৪ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮০ টাকা হিসাবে)। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। আমদানি ব্যয় দিন দিন বাড়লেও রফতানি আয় কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়ছে না, বরং কমে যাচ্ছে। এতেই বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জুলাই-জানুয়ারি সাত মাস পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ৬৯৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। শুধু জানুয়ারিতে পণ্য আমদানি হয়েছে ৪৩৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের। এ হিসাবে এক মাসেই আমদানি ব্যয় বেড়েছে ২৮ শতাংশ। বিপরীতে সাত মাসে রফতানি আয় হয়েছে দুই হাজার ১১ কোটি ডলার। এর মধ্যে জানুয়ারিতে আয় হয়েছে ৩৩১ কোটি ডলার। জানুয়ারিতে যেখানে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ, বিপরীতে আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৮ শতাংশ। অস্বাভাবিকহারে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া, রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে যাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি চলতি হিসাবের ভারসাম্যও ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নানা কারণে কাঙ্ক্ষিত হারে বিনিয়োগ বাড়ছে না। ফলে দুই বছর ধরে মুদ্রানীতিতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় তা অর্জিত হচ্ছে না। বিনিয়োগ বাড়াতে তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা কিছুটা শিথিল করা হয়। যদিও মুদ্রানীতিতে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হয়েছে, পাশাপাশি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য অনুৎপাদনশীল খাতেও বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ভোক্তা ঋণ যেমন গাড়ি কেনার জন্য ঋণ বিতরণ, বিলাসদ্রব্য আমদানিতেও ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করা হয়। এতে কাঙ্ক্ষিত হারে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি না বাড়লেও অন্যান্য পণ্য আমদানি বাড়ায় সামগ্রিক আমদানি বেড়ে গেছে। বিপরীতে কাঙ্ক্ষিত হারে রফতানি বাড়ছে না।

কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানান, শিল্পখাতে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বিশেষ করে ব্যাংক ঋণ এখনো ডাবল ডিজিটে রয়েছে। অর্থাৎ ১০০ টাকার বিপরীতে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে নানা সার্ভিস চার্জসহ ১৫ শতাংশের ওপরে নিচ্ছে। পাশাপাশি দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা গ্যাস সঙ্কট কাটছে না। বরং নতুন করে গ্যাসসংযোগ বন্ধ রয়েছে।

অন্য দিকে দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ড না থাকলেও বিনিয়োগকারীদের আস্থার সঙ্কট কাটছে না। এর বাইরে বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম দফায় দফায় বাড়ানোর ফলে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। বিপরীতে প্রতিযোগী দেশগুলো দফায় দফায় ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করলেও আমাদের দেশে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কৃত্রিমভাবে ধরে রাখা হয়েছে। সবমিলে প্রতিযোগী দেশগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না স্থানীয় রফতানিকারকেরা। এ কারণেই কাঙ্ক্ষিত হারে রফতানি আয় বাড়ছে না। এতে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের মতে, বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে একসময় স্থানীয় শিল্পগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। দেশ পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হয়ে পড়বে। যার সামগ্রিক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। এ জন্য রফতানিকারকদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা ধরে রাখতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

প্রজন্মনিউজ২৪/রেদোয়ান/আতাউর

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ