রাবিতে আবাসিক ছাত্রকে হল ছাড়ার আল্টিমেটাম ছাত্রলীগের!

প্রকাশিত: ২১ মার্চ, ২০২৩ ০৫:৩৩:১২

রাবিতে আবাসিক ছাত্রকে হল ছাড়ার আল্টিমেটাম ছাত্রলীগের!

রাবি প্রতিনিধিঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের এক আবাসিক ছাত্রকে রুম ছাড়তে সাত দিনের আল্টিমেটাম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে ওই রুমে এক অনাবাসিক শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক তুলে দিয়েছেন তারা। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের ৪৩১ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। অভিযুক্তরা হলেন- মাদার বখশ হল শাখ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত রায় ও হল ছাত্রলীগের কর্মী আরিফ।

ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাদার বখ্স হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত রায়ের অনুসারি আরিফের নেতৃত্বে পাঁচ থেকে ছয় ছাত্রলীগ কর্মী ৪৩১ নম্বর কক্ষে আসেন। মেহেদী হাসান কবে হল ছাড়বেন জানতে চায়। এসময় তারা নাজমুল নামে এক অনাবাসিক শিক্ষার্থীর বিছানাপত্র ওই কক্ষে রাখেন। সে ওই কক্ষে থাকবে বলে জানান। একই সঙ্গে সাত দিনের মধ্যে হল ছাড়তে আল্টিমেটাম দেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। এসময় ঘটনাস্থলে এক সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা দ্রুত ওই কক্ষ থেকে সরে যায় নাজমুলকে নিয়ে। তাদের হাতে একটি তালিকা দেখা যায়। কোন কক্ষে সিট খালি আছে সেই তালিকা ধরে তারা রুমে রুমে খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে নাজমুল হাসান ওই কক্ষে আসেন। রাতে ওই কক্ষে অবস্থান করেন।

নাজমুল হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাকে রাজনীতি করার শর্তে হলে উঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমি হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত ভাইয়ের রাজনীতি করি। তিনি আমাকে  হলে তুলেছেন। আমার আবাসিকতা নেই।  

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, '২০ দিন আগে জয়ন্ত (মাদার বখশ হলের সাংগঠনিক সম্পাদক) রুমে বস্তা রেখে গেছে। আমি বলছি, আমার এখনো রেজাল্ট হয়নি, রেজাল্ট হলে তারপর চলে যাব। জয়ন্ত তখন কিছু বলেনি। এর কিছুদিন পর ৩ থেকে ৪ জন এসে ৭ দিনের মধ্যে হল ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পর্যায়ে এসে এভাবে জুনিয়দের কথা শুনতে হবে ভাবতে পারি নাই। আজকে আরিফের নেতৃত্বে ৫-৬ জন ছেলে এসে রুমে একজনকে উঠিয়ে দিয়ে গেছে।'

জানতে চাইলে আরিফ বলেন, 'রুনু ভাইয়ের মাধ্যমে তাকে হলে উঠানো হয়েছে। রুনু ভাই, জয়ন্ত ভাইয়ের কাছে পাঠাইছে। যেহেতু এই হলের দায়িত্বে জয়ন্ত ভাই আছে, দেখাশোনা সবকিছু; তাই জয়ন্ত ভাইয়ের মাধ্যমে তাকে হলে ওঠানো হয়েছে।'

মাদার বখশ হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত রায় বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই ছেলে ছাত্রলীগের রাজনীতি করছে। আমরা জানতে পেরেছি ওই কক্ষ কিছুদিনের মধ্যেই খালি হবে। তার থাকার সমস্যা দেখে রুনু ভাইয়ের সাথে কথা বলে ওই কক্ষে তাকে দেওয়া হয়েছে। তবে সাত দিনের সময় বেধে দিয়ে হল ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশটি মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে মুঠোফোনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ ফয়সাল আহমেদ রুনুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'আমাদের কাছে হলে ওঠার সুপারিশের জন্য অনেকেই আসে। আমাদের কাছে ছাত্রলীগের কেউ আসলে আমরা ওই হলের নেতৃবৃন্দের কাছে বলি। কে, কাকে, কোন হলের নেতৃবৃন্দ নিয়ে হলে উঠিয়েছে সেটা আমি জানি না। তবে খোঁজ নিয়ে আমি বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করবো।' আধা ঘন্টাপর তিনি ফের কল করে জানান নাজমুলকে ওই রুমে রাখা হবে না। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নাজমুল ৪৩১ নম্বর কক্ষেই রাতে অবস্থান করেন।

এবিষয়ে মাদার বখশ হলের প্রাধ্যক্ষ শামিম হোসেন বলেন, 'গতকাল আমার এক আত্মীয় মারা গেছেন। তাই রাতে হলে যেতে পারিনি। কালকে ওই শিক্ষার্থী (মেহেদী হাসান) আমার কাছে ফোন করেছিল। আমি বলেছি, যার আবাসিকতা আছে সেই ওই কক্ষে থাকবে। আমি আজকে হলে গিয়ে বিষয়টা দেখব।'


প্রজন্মনিউজ২৪/খতিব

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ