ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবি, ১৭ বাংলাদেশি উদ্ধার

প্রকাশিত: ১৪ মার্চ, ২০২৩ ০২:৩০:১১

ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবি, ১৭ বাংলাদেশি উদ্ধার

উন্নত জীবনের আশায় বিপজ্জনক ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অভিবাসীদের ইউরোপে পৌঁছানোর হার ব্যাপক বেড়েছে। ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় ১৭ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা হয়েছে। লিবিয়া থেকে অবৈধপথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে তারা ইতালি যাচ্ছিলেন। উদ্ধারের পর তাদেরকে উপকূলে নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমধ্যসাগরে সর্বশেষ মারাত্মক নৌকাডুবির পরে উদ্ধার হওয়া ১৭ অভিবাসীকে সোমবার ইতালীয় কর্তৃপক্ষ উপকূলে নিয়ে এসেছে।

ইতালীয় সংবাদমাধ্যম এএনএসএ জানিয়েছে, উদ্ধার করা অভিবাসীদের ইতালির সিসিলি দ্বীপের পোজালো শহরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তারা সবাই মূলত বাংলাদেশের নাগরিক।

ইতালির কোস্টগার্ড জানিয়েছে, খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে লিবিয়া থেকে বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় নামা অভিবাসীদের একটি নৌকা গত রোববার ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায়। নৌকাডুবির ওই ঘটনায় ভূমধ্যসাগরে ৩০ অভিবাসী ডুবে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এর আগে অবৈধপথে ইতালি যাওয়ার সময় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় ক্যালাব্রিয়ার কাছে জাহাজডুবির ঘটনায় অন্তত ৭৯ জন অভিবাসীর প্রাণহানি হয়। সেই ঘটনার দুই সপ্তাহের বেশি কিছু সময় পর আবারও অভিবাসীবাহী নৌ দুর্ঘটনার খবর সামনে এলো।

রয়টার্স বলছে, অ্যালার্ম ফোন নামের একটি দাতব্য সংস্থা অভিবাসীদের দুর্দশার জন্য ইতালিকে দায়ী করেছে। সংস্থাটি বলছে, অভিবাসীবাহী ওই নৌকাটি সমস্যায় পড়েছে বলে শনিবার বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও ইতালি সেখানে তার কোস্টগার্ডকে পাঠায়নি।

নৌকাটিতে ৪৭ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিল জানিয়ে রোববার গভীর রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে অ্যালার্ম ফোন অভিযোগ করে, ‘স্পষ্টতই ইতালীয় কর্তৃপক্ষ এই ঘটনা এড়াতে চেষ্টা করছিল। কারণ তারা উদ্ধারে গেলে বিপদাপন্ন এই অভিবাসীদের ইতালিতে আনতে হবে। আর এই কারণেই হস্তক্ষেপে বিলম্ব করে ইতালি চাইছিল যেন তথাকথিত লিবিয়ান কোস্টগার্ড সেখানে আসে এবং জোরপূর্বক লোকদের আবারও লিবিয়ায় ফিরিয়ে নিয়ে যায়।’

অবশ্য ইতালির উপকূলরক্ষীরা বলেছে, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী নৌকাটি ডুবে যাওয়ার এই ঘটনাটি ইতালীয় অনুসন্ধান ও উদ্ধার এলাকার (এসএআর) বাইরে ঘটেছে। এমনকি ইতলীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি বলেছেন, নৌকাডুবি এড়াতে রোম যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে।

রয়টার্স বলছে, অভিবাসীদের বহনকারী ওই নৌকাটি ইতালির দিকে যাওয়ার সময় লিবিয়ার বেনগাজি বন্দর থেকে প্রায় ১১০ মাইল উত্তর-পশ্চিমে ডুবে যায় বলে মেডিটেরানিয়া সেভিং হিউম্যানস নামের একটি দাতব্য সংস্থা জানিয়েছে।

অন্যদিকে জার্মান দাতব্য সংস্থা সি-ওয়াচ এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি মুঠোফোন কথোপকথন প্রকাশ করেছে। ওই কথোপকথনের ট্রান্সক্রিপ্ট অনুসারে, লিবিয়ান জয়েন্ট রেসকিউ কোঅর্ডিনেশন সেন্টারের একজন ডিউটি ​​অফিসার বলেছিলেন, অভিবাসীদের উদ্ধারে সেই সময়ে বেনগাজি থেকে পাঠানো যেতে পারে এমন কোনও টহল নৌকা তাদের কাছে ছিল না।

অবশ্য ইতালীয় উপকূলরক্ষীরা বলেছে, অভিবাসীদের বাঁচাতে রোম ওই এলাকায় থাকা বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে উদ্ধার অভিযানে যোগ দিতে অনুরোধ করে। তবে রোববার সকালে ফ্রোল্যান্ড নামক একটি বণিক জাহাজে যাত্রীদের স্থানান্তরের চেষ্টার সময় অভিবাসীবাহী জাহাজটি ডুবে যায়।

ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, ইতালিতে এ বছর সমুদ্রপথে অভিবাসীদের আগমন বেড়েছে। ইউরোপের এই দেশটিতে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তিনগুণ বেশি অভিবাসী এসেছেন বলে রেকর্ড করা হয়েছে। শুধুমাত্র ৯-১১ মার্চ পর্যন্ত ৪৫০০ জনেরও বেশি মানুষ ইতালিতে পৌঁছেছেন।

উল্লেখ্য, সমুদ্রপথে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টাকারী অভিবাসীদের জন্য ইতালি অন্যতম প্রধান এক প্রবেশপথ। কেন্দ্রীয় ভূমধ্যসাগরীয় এই রুটটি বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক হিসেবে পরিচিত।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মিসিং মাইগ্রেন্টস প্রোজেক্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে মধ্য-ভূমধ্যসাগরে অন্তত ২০ হাজার ৩৩৩ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা গেছেন অথবা নিখোঁজ হয়েছেন।


প্রজন্মনিউজ২৪/একে

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ