পাকিস্তানের সরকার নির্বাচন নিয়ে ভীত: ইমরান

প্রকাশিত: ০৯ মার্চ, ২০২৩ ১২:২৮:২৩

পাকিস্তানের সরকার নির্বাচন নিয়ে ভীত: ইমরান

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ চেয়ারম্যান ইমরান খান বলেছেন বর্তমান সরকার নির্বাচনে পরাজয়ের ভয়ে আতঙ্কিত। একইসঙ্গে সরকার তাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

বুধবার (৮ মার্চ) লাহোরে দলের নির্বাচনী সমাবেশে পুলিশের বাধা এবং এর জেরে সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর ইমরান এই মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনসমাবেশের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বুধবার ইমরান খানের সমর্থকরা জড়ো হলে তাদের ওপর টিয়ার গ্যাস এবং জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয় এবং কিছু সমর্থক পুলিশের হাতে আটক হয়। পরে লাহোরে পিটিআইয়ের এই সমাবেশ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া পুলিশ হেফাজতে একজন নিহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এই ঘটনার পর আল জাজিরাকে ইমরান খান বলেন, ‘সরকার ও তার সমর্থকরা নির্বাচন নিয়ে ভীত। কারণ গত আট মাসে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৩৭টি উপনির্বাচনের মধ্যে আমার দল ৩০টিতে জয়লাভ করেছে।’

লাহোরে নিজের বাসভবন থেকে বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার বলেন, ‘তারা আমাকে গ্রেপ্তার করতে চায় বা (নির্বাচনে) অযোগ্য ঘোষণা করতে চায়। কারণ আমার দল পাকিস্তানের ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় একটি দল এবং এতেই তারা ভীত।’

আল জাজিরা বলছে, আগামী ৩০ এপ্রিল নির্ধারিত প্রাদেশিক নির্বাচনের প্রচার শুরু করার জন্য এদিন সমাবেশ করার কথা ছিল ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের। কিন্তু ‘কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে’ সমাবেশ শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে কর্তৃপক্ষ সেটি নিষিদ্ধ করে বলে স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে।

পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশ অনুমতি দিয়েছিল এবং সমাবেশের রুটও অনুমোদন করেছিল। কিন্তু সকালে হঠাৎ করে অনুমতি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। পুলিশের বিশাল বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশে যোগ দিতে আসা লোকজনকে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও জলকামান দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছে।’

ইমরান খান দাবি করেছেন, তার দলীয় সমর্থক আলী বিলালকে পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে। আল জাজিরা অবশ্য পিটিআই প্রধানের এই দাবির সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি এবং পুলিশ এখনও মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।

পাকিস্তানের সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ইমতিয়াজ গুল বিরোধী সমর্থকদের ওপর পুলিশের দমন-পীড়নকে ‘অপ্রয়োজনীয় এবং নৃশংস’ বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘পিটিআই কর্মীদের সমাবেশে যোগ দিতে বাধা দেওয়ার জন্য ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।’

রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে গুল আরও বলেন, ‘শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার পাঞ্জাব এবং খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।’

আল জাজিরা বলছে, পাঞ্জাবের পাশাপাশি প্রতিবেশী প্রদেশ খাইবার পাখতুনখাওয়াতেও আগামী ৩০ এপ্রিল প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। উভয় অঞ্চলের প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দেওয়ার পরে নির্বাচনের এই তারিখ ঘোষণা করা হয় এবং এই দু’টি প্রদেশের জনসংখ্যা একসাথে পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ।

গুরুত্বপূর্ণ এই প্রদেশ দু’টিতেই ইমরান খানের পিটিআই শাসন ক্ষমতায় ছিল। আগামী অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও পাকিস্তানে আগাম ভোটের দাবি জোরদার করার জন্য সম্প্রতি ইমরান ওই দু’টি প্রদেশের প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

যদিও আগাম নির্বাচনের দাবি প্রত্যাখ্যান করে ইমরানের উত্তরসূরি শেহবাজ শরিফের সরকার বলেছে, বছরের শেষের দিকে নির্ধারিত সময়েই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর তাই ইমরান খানের অভিযোগ, ‘এটা স্পষ্ট যে, সরকার নির্বাচন চায় না।’

এছাড়া পিটিআই সমর্থকদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে আশঙ্কা থাকায় সমাবেশ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলেও আল জাজিরাকে জানিয়েছেন ইমরান।

প্রজন্মনিউজ২৪/হাসিব

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ